মুক্তি দিনই রানির ছবিকে ঘিরে আপত্তি তুললেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত। ছবি: সংগৃহীত।
এক দশক আগের কথা। নরওয়েতে থাকা বাঙালি দম্পতি সাগরিকা চট্টোপাধ্যায় এবং অনুরূপ ভট্টাচার্যের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবলম্বনেই তৈরি হয়েছে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। অসীমা ছিব্বর পরিচালিত এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানি মুখোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। স্বামী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে নরওয়েতে থাকেন দেবিকা চট্টোপাধ্যায়। আপাত ভাবে সুখী এই পরিবারের উপর এক দিন হঠাৎই ঘনিয়ে আসে আইনি জটিলতা। সন্তানের দেখাশোনায় গাফিলতির অভিযোগে নরওয়ে সরকার এক দিন হঠাৎ দেবিকার দুই সন্তানকে সরকারি হেফাজতে নিয়ে নেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় এক বাঙালি মায়ের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। ১৭ মার্চ ছবির মুক্তির দিনই আপত্তি জানিয়েছেন ভারতে থাকা নরওয়ের দূত হ্যান্স জেকব ফ্রাইডেনলুন্ড।
তাঁর কথায়, ‘‘এই ছবিটি একেবার ভুল তথ্যে ভরা। এক জন নারওয়েজিয়ান হয়ে আমার পরিষ্কার করে দেওয়া কর্তব্য যে, ছবিটিতে তথ্যগত ভুল রয়েছে। এই ছবিতে দুই দেশের সাংস্কৃতিক পার্থক্য দেখানো হয়েছে, সে়টাও সম্পূর্ণ সত্য নয়।’’
সাগরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি তাঁর সন্তানদের ঠিক মতো দেখাশোনা করতে পারছেন না। ছবিতেও দেখানো হয়, নিজের সন্তানদের হাতে করে খাওয়ানো, একসঙ্গে শোয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছে নরওয়ের সরকার। তাই শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেই দেশের সরকার মায়ের কোলছাড়া করে দুই সন্তানকে। যদিও এই তথ্যের বিরোধিতা করে নরওয়েজিয়ান দূত বলেন, ‘‘আমি এই তথ্য মানতে পারছি না। মা তাঁর সন্তানকে হাত দিয়ে খাওয়াবে কিংবা এক বিছানায় বাচ্চার সঙ্গে শোবে বলে সন্তানকে মায়ের কোলছাড়া করবে রাষ্ট্র, এটা কোনও দেশেই হয় না। এই ছবিটি দেখতেই অস্বস্তি হচ্ছিল। আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে আমার ভারতীয় বন্ধুরা ভাববে, নরওয়ের বাসিন্দরা কঠোর, যাঁদের হৃদয় নেই। যদিও সত্য মোটেও তেমন নয়।’’
নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের এমন অভিযোগ ও আপত্তির পাল্টা জবাব দেন বাস্তবের সাগরিকা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের আপত্তি জানাচ্ছি। আমার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এত বছর পরও নরওয়ে সরকার আমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। তারা আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমার সম্মান নষ্ট করেছে। আমার সন্তানরা এখনও ওই ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ওই সময় ভারত সরকারই আমাকে অনেক সাহায্য করে।’’
‘মর্দানি ২’-এর পর বেশ কিছুটা সময় বিরতি পর ফের বড় পর্দায় রানি মুখোপাধ্যায়। দেবিকার চরিত্রে রানিকে দেখে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁর সতীর্থরা। শুক্রবার মুক্তির দিনই এই ছবি নিয়ে বিতর্ক কি কোনও ভাবে প্রভাব ফেলবে ভারত-নরওয়ে সম্পর্কে? চিন্তায় কূটনীতিকরা।