Ranbir Kapoor Interview

‘আমার দায়িত্ব রাহার ঢেকুর তোলানোর’, কলকাতায় এসে বললেন রণবীর কপূর

বহু দিন পর আবার রোম্যান্টিক কমেডি ছবিতে রণবীর কপূর। ‘তু ঝুঠি ম্যায় মক্কার’ এবং আরও নানান বিষয়ে কলকাতায় এসে প্রাণখোলা আড্ডা দিলেন অভিনেতা।

Advertisement

শতরূপা বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২১
Share:

‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কার’-এর প্রচারে কলকাতায় রণবীর কপূর। নিজস্ব চিত্র।

এই মুহূর্তে তাঁর সামনে সব থেকে বড় প্রশ্ন— তিনি ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিক করছেন কি না। কিন্তু রবিবারে কলকাতায় তাঁর আগামী ছবি ‘তু ঝুঠি, ম্যায় মক্কার’-এর সাংবাদিক বৈঠকে এসে সাফ জানিয়ে দিলেন রণবীর কপূর— এ রকম কোনও ছবির প্রস্তাব তাঁর কাছে নেই। রণবীরের কথায়, ‘‘দাদা এক জন জীবন্ত কিংবদন্তি। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে। তাই ওঁর বায়োপিক খুবই বড়সড় একটা কাজ। তবে এই মুহূর্তে আমার কাছে এই ছবির কোনও অফার নেই। তাই আমি কোনও মন্তব্য করতে পারব না এ বিষয়ে। উল্টে আমি এটা বলতে পারি, যে গত ১১ বছর ধরে আমি অনুরাগ বসুর কিশোর কুমারের বায়োপিকের উপর কাজ করছি। আশা করছি, ওটাই আমার পরের বায়োপিক হবে।’’

Advertisement

বেশ অনেক দিন পরে তিনি আবার রোম্যান্টিক কমেডি করছেন। ছবির গান ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। যেমন ফেলেছে ছবিতে তাঁর অননুকরণীয় অভিনয়ের স্টাইল। তিনি বললেন, ‘‘আমার ভয় ছিল যে, এই রম-কম জঁরটা শেষ হয়ে গেল না কী! শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই এই রকম ছবি সাম্প্রতিক কালে চলেনি। আসলে রম-কম করাটা খুব কঠিন। সেখানে কোনও সে রকম চরিত্র নেই যার পিছনে তুমি লুকোতে পারবে। একটা কমেডিতে তোমার নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন, সব থেকে বেশি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর দুনিয়াটা যে গতিতে এগিয়ে চলেছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রেমের সংজ্ঞাও বদলেছে। আগে আমাদের দেশের রম-কমে খুব পাশ্চাত্যের প্রভাব ছিল। একমাত্র ‘জব উই মেট’ বা ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’-এর মতো ছবিই হল আমাদের দেশি রম-কম। যেখানে সব কিছু, চরিত্র বা প্রেমের সমস্যা, সবই আমাদের দেশের শিকড়ে গাঁথা বলে মনে হয়।’’

অনেক দিন পরে আবার রোম্যান্টিক কমেডিতে ফিরছেন রণবীর। — নিজস্ব চিত্র।

এই ছবিতে তিনি রাজি হলেন কেন? পরিচালক লভ রঞ্জন খুবই ভাল লেখক, মত রণবীরের। তিনি বললেন, ‘‘ভাল পরিচালকের থেকেও লভ অনেক বেশি ভাল লেখক। খুব ভাল সংলাপ লেখে। সেই জন্যই আমি এত দিন ধরে কোনও রম-কমে সই করিনি। লভ আমার কাছে এই চিত্রনাট্যটার পাশাপাশি অন্য কয়েকটা চিত্রনাট্য নিয়েও এসেছিল। কিন্তু এই ছবির চরিত্রটা আমার খুব ভাল লেগেছিল। এমন একটা চরিত্র যে সত্যিকারের প্রেমে বিশ্বাস করে। ছবির ট্রেলার দেখে যেমনটা ফ্লার্ট মনে হচ্ছে, তেমনটা একেবারেই নয়। সে সম্পর্কের খুঁটিনাটিও খুব ভাল বোঝে। কিন্তু মুশকিল হল, সে প্রেমে পড়ে একটা জটিল মনের মেয়ের। যে মিথ্যেবাদী, যার জন্য ওর ভিতরকার জটিল মানুষটা বেরিয়ে আসে।’’

Advertisement

ছবির নাম একটু অদ্ভুত। ‘যব হ্যারি মেট সেজল’-এর নামকরণ করেছিলেন রণবীর। এই ছবির নামকরণও কি তাঁর? রণবীরের উত্তর, ‘‘যখন লভ আমাকে প্রথম ছবির নামটা বলে, আমি ওকে বলেছিলাম, ‘এটা আবার কি টাইটেল’? কিন্তু আপনি যদি লভের ছবি দেখেন, দেখবেন ওর সব ছবির নামই এ রকম। ‘প্যায়ার কা পাঞ্চনামা’, ‘সোনু কে টিটু কি সুইটি’... লোকে তো উচ্চারণই করতে পারত না! কিন্তু আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে ছবির নামটা ছবির একটা স্বাদ দেয়। দু’জন পাগলা চরিত্রকে নিয়ে একটা দমফাটা হাসির গল্প। আমার একটা ছবি ছিল ‘আজব প্রেম কি গজব কহানি’। নাম শুনেই লোকে উৎসুক হয়ে গিয়েছিলেন ছবিটা নিয়ে। এমনকি, যখন ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ মুক্তি পেয়েছিল, অর্ধেক লোক উচ্চারণই করতে পারেনি ছবির নাম। তাই আমার মনে হয়, এই অদ্ভুত নামগুলো ছবির ক্ষেত্রে লেগে যায়।’’

‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রণবীরের সুপারহিট ছবি। তা হলে কি আলিয়া তাঁর লাকি চার্ম? কী বললেন অভিনেতা? ছবি: সংগৃহীত।

রণবীরের দাদু রাজ কপূর বড় পর্দায় প্রেমের একটা সংজ্ঞা তৈরি করেছিলেন। এই ছবি করার সময় তাঁর মাথায় প্রেমের কোন সংজ্ঞা ঘুরছিল? রণবীর বললেন, ‘‘যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের বাহ্যিক ভাষার অনেক বদল হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় প্রেমের একেবারে নিজস্ব যে ভাষা সেটা বদলায়নি। বদলাবেও না। চিরন্তন প্রেমের সেই বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়া— এই থামগুলোর উপরই দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রেমের একটা উপদেশ দিতে পারি। যদি আপনার মন ভেঙে যায়, তা হলে হতাশ হবেন না। কারণ প্রেম আবার আসবে আপনার জীবনে। আসলে কোনও সম্পর্কই সোজা নয়। সে আপনার বাবা-মা হোক বা বন্ধু হোক। সেটার জন্য রীতিমতো শ্রম দিতে হয়। যেটা আপনারা সিনেমায় দেখেন, প্রেম সে রকমটা নয়।’’

এই মুহূর্তে তিন মাসের রাহার বাবা তিনি। কেমন সেই অনুভূতি? ‘‘বাবা হওয়াটা সব থেকে সুন্দর অনুভূতি। আমি চাই সবাই এক বার অন্তত এই অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাক। আমার মেয়ের তিন মাস বয়েস। দু’সপ্তাহ হল সে হাসতে শিখেছে। ওর হাসি আমার মন গলিয়ে দেয়। এখানে আসার আগে মাত্র কুড়ি মিনিট কাটাতে পেরেছি ওর সঙ্গে। তাতেই চাঙ্গা হয়ে গিয়েছি। আমি ওর ঢেকুর তোলানোর দায়িত্বে আছি। এর আগে আমি জানতাম না বাচ্চাদের ঢেকুর তোলাটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। যত ক্ষণ বাড়িতে থাকি, ওর সঙ্গেই থাকি,’’ বলছেন নব্য পিতা।

তিনি চিরকালই বলে এসেছেন, তিনি ছবির সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে অত মাথা ঘামান না। ‘‘আমার ১৫ বছরের কেরিয়ারে আমার কিছু ছবি সাফল্য পেয়েছে। কিছু পায়নি। খুব কম বয়স থেকেই এই হিট-ফ্লপ থেকে আমি নিজেকে দূরে রেখেছি। ছবি সাফল্য পেলে মনে হয়, ‘যাক বেঁচে গিয়েছি’! তবে ফ্লপ এবং ব্যর্থতা আমাকে চিরকালই অনেক কিছু শিখিয়েছে নিজের সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে। জীবনে ব্যর্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। নিজের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো যাদের কথা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম আছে, তাদের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলাটা খুব জরুরি। কেউ হয়তো আমার ব্যর্থতা থেকে কিছু শিখতে পারবে। তাই আমি আমার সাফল্যর থেকে ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে বেশি ভালবাসি,’’ বলছেন রণবীর।

আলিয়া ভট্টর সঙ্গে তাঁর বিয়ের পর ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সুপারহিট করেছিল। তা হলে কি আলিয়া তাঁর লাকি চার্ম? রণবীর বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, বিয়ের পর আমার ভাগ্য বদলেছে। কিন্তু ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ যেমন হিট করেছে, তেমন ‘শমশেরা’ও তো ফ্লপ করেছে। তাই সবই সম্ভব। কিন্তু ছবির নিজস্ব একটা অদৃষ্ট আছে। সেই প্রেক্ষিতে কাউকে সে ভাবে ভাগ্যবান বা ভাগ্যবান নয়, সেটা বলা যায় না। তবে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিট করাতে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমরা অনেক বছর এই ছবিটা নিয়ে কাজ করেছিলাম। কিন্তু তাই বলে আমি আমার ছবির সাফল্যের বা ব্যর্থতার জন্য অন্য কাউকে কৃতিত্ব দিতে বা দোষ দিতে পারব না।’’

ইডেনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রণবীর কপূর। — নিজস্ব চিত্র।

বাঙালিদের মধ্যে অয়ন মুখোপাধ্যায় এবং অনুরাগ বসুর সঙ্গে কাজ করেছেন রণবীর। কাজ করতে চান সুজয় ঘোষ, সুজিত সরকার, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তবে এ কথাও স্পষ্ট বলেন যে, আলাদা করে বাঙালি বা গুজরাটি নয়, যে তাঁকে একটি ভাল চিত্রনাট্য দেবেন, তাঁর সঙ্গেই কাজ করবেন তিনি। ‘‘কারণ, সিনেমা ও সব বাঙালি-গুজরাটি দেখে না।’’

বলিউডের বয়কট-নীতি নিয়ে তিনি কি চিন্তিত? রণবীর জানালেন এ বিষয়ে তাঁর বিশেষ কোনও বক্তব্য নেই। তিনি বললেন, ‘‘অতিমারির পর কত নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের দিকে, এগুলোর কোনও মানে নেই। আমরা মানুষকে বিনোদন জোগানোর চেষ্টা করছি মাত্র, তার চেয়ে বেশি কিছু মাহাত্ম্য নেই আমাদের কাজের। আমরা চাই মানুষ ছবি দেখতে এসে তাঁদের দুঃখ-বেদনার কথা কিছু ক্ষণের জন্য ভুলে থাকুন। তাই আমি এই ‘বয়কট বলিউড’ ব্যাপারটাই বুঝিনি। আমরা সবাই তো বিনোদন দেওয়ার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।’’

সর্বভারতীয় সিনেমা এখন বিশ্বমঞ্চে বেশি স্বীকৃতি পাচ্ছে। সেটা কি বলিউডের কাছে বাড়তি কোনও চাপ? প্রশ্ন শুনেই রণবীরের উত্তর, ‘‘একেবারেই না, চাপ কেন হবে? এটা তো গর্বের বিষয়! আমি বিশেষ করে দক্ষিণী ছবির কথা বলব, ‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী’, ‘পুস্পা’ — এই ছবিগুলি বলিউডকে গর্বিত করেছে। উস্কে দিয়েছে আরও ভাল করতে। আমাদের কাজ হল ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়া। সেখানে এখন ‘আরআরআর’ অস্কারে যাচ্ছে। আমার তো মনে হয় দেশ হিসেবে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। তাই সে রকম কোনও প্রতিযোগিতা নেই। যদি থাকেও, সেটা একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা। ‘কেজিএফ’ এক রকম ফল করেছে। ‘পাঠান’ এক রকম ফল করেছে। কাল কোনও বাংলা ছবিও এমন ফল করবে, যা নিয়ে দেশে কথা হবে। তাই সব ইন্ডাস্ট্রিরই একে অন্যকে তুলে ধরা উচিত।’’

কিন্তু কথায় কথায় কটাক্ষ বা ট্রোল করার চল এখন বেড়েছে। কোনও কোনও সময় সেটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সকলেরই কথা বলার অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন লোকে। সম্প্রতি আলিয়া ভট্টের বাড়ির বারান্দার কিছু একান্ত ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল আলোকচিত্রীরা। সেই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশের সাহায্যও চেয়েছিলেন আলিয়া। রণবীরের এই নিয়ে কী মত? উত্তর অবশ্য বেশ হালকা চালেই দিলেন রণবীর। ছবি প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলে এলেন ট্রোলিংয়ের বিষয়ে, ‘‘আমি কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি নিজে খুব বড় ট্রোলার! আলিয়াকে আমি এত ট্রোল করি, কী বলব আপনাদের! এটা তো মজার ব্যপার। কেউ কিছু সত্যিকারের আপত্তিকর কিছু বললেও সেটাকে অত পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। আমরা তো বিনোদন দিই। তাই যাঁরা পয়সা খরচ করে এই বিনোদন দেখেন, তাঁদের হক আছে যা খুশি তাই বলার। এটাকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই,’’ বলছেন তিনি।

কলকাতা রণবীরের প্রিয় শহরগুলির মধ্য অন্যতম। তিনি একগাল হাসি নিয়ে বললেন, ‘‘যবে থেকে আমি ‘বরফি’র শুটিং করেছি কলকাতায়, তবে থেকেই শহরটা আমার খুব পছন্দের। এই শহরের সংস্কৃতি দেশের অন্য শহরের থেকে একদম আলাদা, এবং শক্তপোক্ত। এই মাত্র আমি আলু-পোস্ত, সর্ষে মাছ আর চার বালতি মিষ্টি দই খেয়ে এসেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement