পর্দায় তাঁর উপস্থিতিই দর্শকের মনে ত্রাস ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। নিজেকে বলতেন ‘রাজত্বহীন রাজা’। তিনি, নব্বইয়ের দশকের অন্যতম বলিউড কাঁপানো খলনায়ক রামি রেড্ডি।
তাঁর পুরো নাম গঙ্গাসানি রামি রেড্ডি। জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায়। ১৯৫৯-এর ১ জানুয়ারি। স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনার পর তিনি সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতক হন ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
অভিনেতা হওয়ার আগে তিনি কিছু দিন একটি সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। সে সময়েই তেলুগু ছবি ‘অঙ্কুশম’-এ অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রথম ছবিতেই প্রখ্যাত অভিনেতা রাজাশেখরের সঙ্গে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন তিনি।
বক্স অফিসে সফল হয়েছিল ‘অঙ্কুশম’। এখান থেকেই তাঁর অভিনেতা হিসেবে সফর শুরু। তাঁর অভিনীত চরিত্র ‘স্পট নাগা’ খুবই জনপ্রিয় হয়। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় পুরস্কৃতও হয়।
১৯৯০-এ ‘অঙ্কুশম’-এর হিন্দি রিমেক ‘প্রতিবন্ধ’ মুক্তি পায়। এই ছবিতেও খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন রামি। দক্ষিণী ছবির মতো হিন্দি ছবির দুনিয়াতেও কুর্নিশ আদায় করে নিলেন এই অভিনেতা।
এর পর রামিকে দেখা গিয়েছিল ‘ওয়াক্ত হমারা হ্যায়’ ছবিতে। এই সিনেমায় তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল ‘কর্নেল চিকারা’। চিকারার মুখে সংলাপগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।
পর্দার অন্য খলনায়কদের সঙ্গে রামি রেড্ডির অভিনয়রীতিতে পার্থক্য ছিল। যেখানে তাঁর সমসাময়িক অভিনেতারা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে শরীরী ভাষার দিকে নজর দিতেন বেশি, রামি-র কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সংলাপ।
সংলাপ বলার ধরনেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে বাকি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘দিলওয়ালে’, ‘খুদ্দার’, ‘আন্দোলন’, ‘হকিকৎ’, ‘লোহা’, ‘গুন্ডা’ এবং ‘কভি বাবা কভি অন্না কভি কালা’-র মতো ছবিতে নিজের অভিনয়ে দর্শকমনে দাগ কাটেন রামি।
হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে রামি দ্রুত জনপ্রিয় হন। সে সময়ে বলিউডের ছবিতে খলনায়কদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। কার্যত উপযুক্ত খলনায়ক না থাকলে ম্লান হয়ে যেত নায়কের ভূমিকাও।
ছবির ক্লাইম্যাক্সে নায়কের হাতে খলনায়কের পরাজয় দেখতেই হলে যেতেন দর্শকরা। কিন্তু পর্দার সেই ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’ রামি নিজে বাস্তব জীবনে বিপাকে পড়লেন ব্যাধির কাছে।
লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গ বিকল হয়ে পড়েছিল। অসুস্থ অবস্থায় তাঁর চেহারা অস্থিচর্মসার হয়ে পড়েছিল। বলিউডের ছবিতে কাজ করা ছেড়েই দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের পরের দশকে তাঁকে দেখা যেত শুধু দক্ষিণের ছবিতে।
পর্দার দশাসই খলনায়ক শেষে অসুখে ভুগে এতটাই জীর্ণ ও শীর্ণ হয়ে পড়েছিলেন, যে তাঁকে দেখে চেনাই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। একবার এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাঁকে সামনে থেকে দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই।
দীর্ঘ রোগভোগের পরে ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল সেকেনদরাবাদের এক হাসপাতালে প্রয়াত হন রামি। দর্শকদের জন্য তিনি রেখে গিয়েছেন ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় আড়াইশোর বেশি ছবি।
তাঁর কাছে অভিনয়ের সুযোগ এসেছিল আচমকাই। সেই সুযোগকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন পূর্ণমাত্রায়। চটজলদি সাফল্যেও মাথা ঘুরে যায়নি। খলনায়কের ভূমিকাকে কার্যত নিয়ে গিয়েছিলেন চরিত্রাভিনেতার পর্যায়ে।
রামি রেড্ডি অভিনীত প্রত্যেক চরিত্র একটি অন্যটির থেকে আলাদা। আজও তাঁর সংলাপকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারেন দর্শকরা। এই বৈশিষ্টই তাঁর মতো দক্ষ অভিনেতার স্বীকৃতি।