পাক্কা খবর, এ বার সঞ্জয় দত্তর জীবন নিয়ে সিনেমা হচ্ছে। বানাচ্ছেন আর কেউ নন, খোদ রাজকুমার হিরানি। হঠাৎ সব ছেড়ে সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে ছবি বানানো কেন? তবে কি ফিল্মি মশলা রয়েছে সঞ্জু বাবার জীবনে? না কি এ সব সঞ্জয় দত্তর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করার একটা অভিনব পন্থা?
কথা তো উঠবেই! জীবদ্দশাতেই বায়োপিক হয়েছে, এ রকম নজির খুব একটা নেই ছায়াছবির জগতে। সেই তালিকায় মেরেকেটে উঠে আসে হাতে গোনা কয়েকটা নাম। চার্লি চ্যাপলিন বেঁচে থাকতেই তৈরি হয়েছিল ‘দ্য লাইফ স্টোরি অব চার্লস্ চ্যাপলিন’, তখন এই অভিনেতাকে বেশ বৃদ্ধই বলা যায়! এই তালিকায় নাম যোগ করা যায় ডাকসাইটে গণিতজ্ঞ জন ন্যাসের। তিনি বেঁচে থাকতেই তৈরি হয়েছিল ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’। এ রকম দু’-একটা উদাহরণ ছেড়ে দিলে এই বিরল ভাগ্যের দাবিদার মাইকেল জ্যাকসনের মতো জনপ্রিয় তারাও নন! তাঁর জীবদ্দশায় বানানো হয়েছিল মাত্র একটা টেলেফিল্ম— ‘ম্যান ইন দ্য মিরর’! সঙ্গত কারণেই তাই প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করে কেন সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে পড়লেন রাজকুমার হিরানি? তাঁর জীবনের মধ্যে এমন কী উপাদান আছে যা ছায়াছবির জন্য জুতসই উপাদান?
ভেবে দেখলে, ছায়াছবি তৈরি হওয়ার মালমশলা অবশ্য যথেষ্টই আছে সঞ্জয় দত্তর জীবনে। তারকা মা-বাবার সন্তান, নিজেও ভারতীয় ছবির ডাকসাইটে নায়ক। ভারতীয় ছায়াছবির বেশ কয়েকজন নায়িকার সঙ্গে প্রেম এবং সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া— সেটাও বেশ ফিল্মি ব্যাপার! আর, সবার শেষে মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় অস্ত্র রাখার অপরাধে কারাবাস। সেই কারাবাসও অবশ্য বেশ নাটকীয়। বার বার জেলে যাওয়া-আসা করেই চলেছেন সঞ্জয় দত্ত। তাহলে আর বিতর্ক কেন? তা ছাড়া, রাজকুমার হিরানি এর মধ্যেই একদিন দেখা করে এসেছেন সঞ্জয় দত্তর সঙ্গে। তাঁকে পড়ে শুনিয়েছেন চিত্রনাট্য। সঞ্জয় দত্তও এক কথায় অনুমতি দিয়েছেন ছবিটা করার। জানিয়েছেন, চিত্রনাট্যের মধ্যে আপত্তিকর কোনও কিছু চোখে পড়েনি তাঁর!
নিন্দুকরা অবশ্য বলছেন, আপত্তি থাকার কথাও নয়! কেন না, রাজকুমার হিরানির এই চিত্রনাট্যে অভিনেতার জীবনের নঞর্থক দিকের কোনও কিছুই তুলে ধরা হয়নি। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। তবে কি সঞ্জয় দত্তর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তোলার জন্যই এই ছবির অবতারণা?
নিন্দুকরা তাঁদের বক্তব্যের স্বপক্ষে বেশ চাঁচাছোলা যুক্তিই পেশ করছেন। তাঁরা বলছেন, এই ছবি তৈরি হলে ভারতীয় দর্শকদের মনে সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে একটা সহানুভূতির জায়গা তৈরি হবে। সেই সহানুভূতি কি আইনি তরফে অনেকটা সাহায্য করবে অভিনেতাকে?
পাশাপাশি, তাঁরা বলছেন, যদি জীবনের বিপর্যয়ের দিকটাই দেখানো না হয়, তবে আর সঞ্জয় দত্তর বায়োপিকের মূল্য কী! সে ক্ষেত্রে একটা সাধারণ মাপের ছবি ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্তি হবে না দর্শকের। এ রকম ছবি বানিয়ে নাম কিনতে পারেন কোনও নবাগত পরিচালক। সে ক্ষেত্রে সঞ্জয় দত্ত নামটাই তাঁকে পরিচিতি দেবে! কিন্তু, রাজকুমার হিরানির মতো প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত পরিচালকের ক্ষেত্রে তো আর এই যুক্তি খাটে না। তবে কেন সঞ্জয় দত্তর বায়োপিকে হাত দিচ্ছেন তিনি?
পরিচালক অবশ্য এ সব উড়ো মন্তব্যে কান পাততে নারাজ। নিন্দুকদের বিপক্ষে বেশ অকাট্য এক যুক্তি খাড়া করেছেন তিনি। বলছেন, “কে বলেছে, বায়োপিক বানাতে গেলে এক জন মানুষের জীবনের পুরোটাই তুলে ধরতে হয়? একটা ছবিতে মানুষের গোটা জীবনটা ধরা সম্ভব না কি? জীবনের একটা কি দুটো দিকই সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়, অন্য গুলো নয়!”
ভেবে দেখলে, খুব একটা ভুল বলেননি পরিচালক। তাঁর যুক্তির সূত্র ধরে টেনে আনা যায় হলিউডের বিখ্যাত বায়োপিকগুলোর কথাও। যেমন ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’-এই মোটেও জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গণিতজ্ঞের জীবন তুলে ধরা হয়নি। তেমনই ডাকসাইটে ছায়াছবি-পরিচালক হিচককের বায়োপিকেও প্রাধান্য পেয়েছে তাঁর জীবনের একটা অংশ। তা হলে, সঞ্জয় দত্তর ক্ষেত্রে আর অসুবিধে কোথায়? তা ছাড়া আরও জানিয়েছেন রাজকুমার হিরানি, সঞ্জয় দত্ত নিজেই না কি পইপই করে সাবধান করে দিয়েছেন পরিচালককে, ছবিতে তাঁর চরিত্রটা খুব একটা মহান হিসেবে যেন দেখানো না হয়!
এর পরে বাকি থাকে কেবল একটাই কৌতূহল— কে ছবিতে অভিনয় করবেন সঞ্জয় দত্তর ছবিতে? প্রশ্নটার উত্তরে প্রাথমিক ভাবে বলছেন, “দেখুন, কাউকে মাথায় রেখে চিত্রনাট্য লেখা যায় না।” অবশ্য, তার পরেই যোগ করেছেন তিনি, “আমার মনে হয়, রণবীর কপূরকে সঞ্জয় দত্তর ভূমিকায় মানাবে। তবে, এখনও পর্যন্ত কিছু ঠিক করিনি। দেখা যাক!”