চোখের মণি উপরের পাতার মধ্যে লুকিয়ে শিবনেত্র হয়ে যেতেন। এই ভয়ঙ্কর চেহারাই তুরুপের তাস হয়ে যেত চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে। শেষে, বার বার একই ধরনের চরিত্রে সুযোগ পেয়ে একঘেয়েমির শিকার হয়ে পড়েছিলেন ‘লগান’-এর গুরান, অভিনেতা রাজেশ বিবেক উপাধ্যায়।
রাজেশের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩১ জানুয়ারি, উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে। প্রাচীন ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্বে স্নাতকোত্তরের পরে তিনি ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়। এনএসডি-তে তাঁর জুনিয়র ছিলেন রাজ বব্বর।
সাতের দশকের গোড়ায়, রাজেশ যে সময় এনএসডি-তে প্রশিক্ষিত হন, তখন ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম কুশীলবই এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। পাশ করার পরে রাজেশকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ দেন শ্যাম বেনেগাল। ১৯৭৮ সালে, তাঁর ‘জুনুন’ ছবিতে। প্রযোজক ছিলেন শশী কপূর।
নাসিরুদ্দিন শাহ, জেনিফার কপূর, শাবানা আজমি অভিনীত ‘জুনুন’-এ একটি ছোট ভূমিকায় রাজেশের অভিনয় প্রশংসিত হয় দর্শক মহলে। এর পর ‘গাঁধী’ ছবিতেও একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ছোট ছোট ভূমিকাতে অভিনয় করেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে গিয়েছেন এই অভিনেতা।
‘রাম তেরি গঙ্গা মইলী’ ছবিতেও ছোট ভূমিকাতেই অভিনয় করেছিলেন তিনি। এর পর ‘বীরানা’ ছবিতে অভিনয় করেন রাজেশ। চরিত্রের নাম ছিল ‘বাবা’। সেই ছবিতেই তিনি চোখের মণি লুকিয়ে ফেলে চরিত্রে ভয়ঙ্কর মাত্রা যোগ করতেন।
অভিনয় ভাল করলেও রাজেশের চলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত তাঁর চেহারা। নায়কোচিত ছিলেন না কোনও দিনই। মূল খলনায়কের সহকারী, পুলিশ ইনস্পেক্টর— এই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতেন তিনি।
ইন্ডাস্ট্রিতে উপেক্ষিতই হয়ে গিয়েছিলেন বিবেক। ‘বীরানা’-র মতো সাফল্য বা পরিচিত পাচ্ছিলেন না কোনও ছবিতেই। সেই সাফল্য পাওয়ার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হল ২০০১ অবধি। সে বছরই মুক্তি পেল আমির খানের ‘লগান’। ছবিতে ‘গুরান’-এর চরিত্রটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
২০০৪ সালে আশুতোষ গোয়ারিকর তাঁকে সুযোগ দেন ‘স্বদেশ’ ছবিতে। শাহরুখ খানের এই ছবিতে ‘পোস্টম্যান’-এর চরিত্রে রাজেশের অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটে গিয়েছিল। এ ভাবে বড় বড় ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেই খুশি থাকতে হয়েছিল তাঁকে।
২০০০ সালের পর থেকে হিন্দি ছবিতে ভীষণ-দর্শন খলনায়কের চাহিদা ক্রমে কমতে থাকে। ফলে রাজেশের কাছেও ছবির সুযোগ কমে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি আঞ্চলিক ভাষার ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। কাজ করেছিলেন টেলিভিশনেও।
টেলিভিশনেও রাজেশের অভিনয় ভাল লেগেছিল দর্শকদের। ‘ভারত এক খোঁজ’-এ আকবর, ‘মহাভারত’-এ বেদব্যাসের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু কোথাও যেন আটকে থাকতে হয়েছিল সীমিত পরিসরেই।
২০১৬ সালে ৬৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন রাজেশ। হায়দরাবদে তাঁর ছবির শ্যুটিং চলছিল। সে সময় ছবির সেটেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এর আগে সে ভাবে তিনি কোনও দিন অসুস্থ হননি। তাঁর অকালমৃত্যুর সংবাদে হতবাক হয়ে পড়েছিল ইন্ডাস্ট্রি।
রাজেশের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়েছিল মুম্বইয়ে। কিন্তু তাঁর শেষকৃত্যে আশুতোষ গোয়ারিকর ছাড়া বলিউডের কোনও পরিচিত মুখকে দেখা যায়নি। প্রতিভাবান অভিনেতা হয়েও যোগ্য স্বীকৃতি অধরাই থেকে যায় রাজেশ বিবেক উপাধ্যায়ের।