তাঁর ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে, তা ভয় ধরাত নায়কদের। তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারার ভয়ে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতেও অনেক সময় রাজি হতেন না নায়কেরা। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি যা চায়, তার সব থাকা সত্ত্বেও বেশি কিছু করতে উঠতে পারেননি। মাত্র কয়েকটি ছবির পর বাধ্য হয়ে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে হয় তাঁকে।
তিনি ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ রজত বেদী। ফিল্মি পরিবারে জন্ম রজতের। ছোট থেকে তাই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন। তাঁর বাবা নরেন্দ্র বেদী ছিলেন পরিচালক। ভাই মানেক বেদী অভিনেতা এবং বোন ইরা বেদী স্ক্রিপ্ট রাইটার।
সুদর্শন চেহারার এই যুবক পড়াশোনা শেষ করেই তাই মডেলিং-এ পা বাড়িয়েছিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নামডাকও হয়েছিল। সেখান থেকেই সরাসরি বলিউডে অভিষেক।
১৯৯৮ সালে তাঁর প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘২০০১: দো হাজার এক’। ছবিতে তব্বুর বিপরীতে পুলিশের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বক্স অফিসে ছবিটি একেবারেই সাফল্য পায়নি ঠিকই, কিন্তু প্রথম ছবি থেকেই দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন রজত।
সে বছরই গোবিন্দর সঙ্গে একটি ছবিতে সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ছবিটির নাম ছিল ‘জোড়ি নম্বর ওয়ান’। ছবিটি মুক্তি পেতে একটু সময় লেগে গিয়েছিল। কিন্তু রজতের সঙ্গে অভিনয় করে নাকি গোবিন্দ বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর ‘স্টারডম’-এ ভাটা ফেলতে পারে এই ছেলে।
লম্বা চেহারা, চওড়া কাঁধ, মেদহীন শরীর এবং সাবলীল অভিনয়— ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে গেলে যা যা চাই, সবই ছিল রজতের। তার উপর তাঁর পরিবারও ইন্ডাস্ট্রির খুব ঘনিষ্ঠ। রজতের কেরিয়ারের রেখাচিত্র তাই উপরে উঠতে শুরু করেছিল প্রথম দিকে। ‘ইন্টারন্যাশনাল খিলাড়ি’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘মা তুঝে সালাম’-এর মতো একটার পর একটা হিট ছবির প্রস্তাব আসতে শুরু করেছিল তাঁর কাছে।
প্রতি বছরই একাধিক ছবি মুক্তি পেতে শুরু করে তাঁর। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘কোই… মিল গয়্যা’ তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম হিট। এই ছবি তাঁকে আরও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। কিন্তু এর পরের বছরগুলিতে তেমন সাফল্য আসেনি। তিনি সুযোগ পাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে প্রচুর ছবি তাঁর হাত খেকে বেরিয়েও যাচ্ছিল।
২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ছবি করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের রেখাচিত্র যেন থমকে গিয়েছিল। আট বছরেরও বেশি সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পর এটা মানতে পারছিলেন না রজত। তাই বিরতি নিয়ে কানাডা চলে যান।
কানাডায় রিয়েল এস্টেট-এর ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসাতে প্রত্যাশিত সাফল্যও পান। কিন্তু বেশি দিন সেখানে মন বসাতে পারেননি। রজত ফের বলিউডে ফিরতে চাইছিলেন। এ বার ইন্ডাস্ট্রিতে ভাগ্য ফেরানোর প্রত্যাশায় নিজের নামও বদলে ফেলেন। নাম রাখেন রাজ সিংহ বেদী। রজতের বিশ্বাস ছিল, রাজ নামটি তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস-এ সাফল্য এনে দেবে।
২০১৬ সালে দক্ষিণী ছবি ‘জগ্গু দাদা’-তে কাজের সুযোগ পেয়ে যান তিনি। আত্মবিশ্বাস আরও গভীর হয় তাঁর। দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন রজত। ‘জগ্গু দাদা’-র পর ‘হোয়াইট’ নামে আরও একটি ছবি করেন তিনি। তারপর সলমন খানের ‘রাধে’ ছবিতে সুযোগ পেয়ে যান।
রজত যখন দ্বিতীয় ইনিংস নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তখনই একদিন তাঁকে সলমন ডেকে পাঠান। তাঁর অভিনয় নিয়ে ভূয়সী প্রশংসাও করেন। সবশেষে রজতকে জানিয়ে দেন, ‘রাধে’ ছবি তাঁর মতো অভিনেতার জন্য নয়। তাঁর জন্য আরও বড়মাপের কোনও চরিত্রের প্রয়োজন।
সলমনের মুখের উপর কথা বলার সাহস তাঁর ছিল না। তাই চুপচাপ ছবি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংস নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন রজত, তা বাস্তবায়িত হওয়ার মতো কোনও আশা তখনও তাঁর সামনে আসেনি। তাঁর হাতে আর কোনও ছবিও ছিল না।
ইন্ডাস্ট্রিতে কানাঘুষো, নিজের চেহারা নিয়ে সব সময়ই সচেতন সলমন। কিন্তু রজতের চেহারা দেখার পর নাকি হীনন্মন্যতায় ভুগতে শুরু করেছিলেন তিনি। ছবিতে তাঁর থেকে সুন্দর চেহারার রজতকে তাই নিতে চাননি তিনি। যদিও এ বিষয়ে রজত অবশ্য কখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।