আশির দশকের শেষ দিকে দূরদর্শনের দর্শকদের অন্যতম প্রিয় সিরিয়াল ছিল ‘মুঙ্গেরিলাল কে হাসিন সপনে’। মুঙ্গেরিলালের ভূমিকায় রঘুবীর যাদবের অভিনয় ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অন্যতম সোপান। কিন্তু পর্দার বাইরে রঘুবীরের ব্যক্তিগত জীবন অনেক সময়েই থেকেছে মধুর স্বপ্নের বিপরীত মেরুতে।
১৯৮৮ সালে রঘুবীরের বিয়ে হয় পূর্ণিমা খড়্গের সঙ্গে। পূর্ণিমা ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কত্থক নৃত্যশিল্পী। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম অচল।
দাম্পত্যের সাত বছরের মাথায় ভাঙন ধরে রঘুবীর-পূর্ণিমা সম্পর্কে। ১৯৯৫ সাল থেকে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ছেলেকে নিয়ে চলে যান পূর্ণিমা।
পূর্ণিমার অভিযোগ, তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরার মূল কারণ ছিলেন নন্দিতা দাস। অভিনেত্রী নন্দিতার সঙ্গে নাকি দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ছিলেন বিবাহিত রঘুবীর। এমনকি, পূর্ণিমার দাবি, জব্বলপুরে নিজের বাবা মায়ের কাছেও নন্দিতাকে রঘুবীর নিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু পরে নন্দিতা-ই সরে যান সম্পর্ক থেকে। ২০০২ সালে নন্দিতা বিয়ে করেন সৌম্য সেনকে। পাঁচ বছর পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর নন্দিতা বিয়ে করেন মুম্বইয়ের শিল্পপতি সুবোধ মাস্কারাকে। কিন্তু সেই দাম্পত্যও ভেঙে যায় ২০১৭ সালে। ছেলে বিহানকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন নন্দিতা।
নন্দিতা সরে গেলেও রঘুবীর-পূর্ণিমা সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। আড়াই দশক আলাদা থাকার পরে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সম্প্রতি আবেদন করেছেন পূর্ণিমা।
নন্দিতার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে লগনের ‘ভুরা’ রঘুবীর যাদবের জীবনে আসেন অভিনেত্রী রোশনি আচার্য।
মুম্বইয়ে রঘুবীর আর রোশনি একই আবাসনে থাকতেন। হিন্দি টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ রোশনির স্বামী সঞ্জয় মিশ্রও পরিচিত অভিনেতা। পর্দায় তাঁকে মূলত কমেডিয়ানের ভূমিকাতেই দেখা যায়।
পূর্ণিমার দাবি, প্রথমে সৌজন্যমূলক আলাপ থেকে অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েন রঘুবীর-রোশনি। লিভ ইন শুরুর আগেই নাকি রোশনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তারপর স্বামী সঞ্জয়কে ছেড়ে রঘুবীরের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন রোশনি। সঞ্জয়ের কাছ থেকে বিবাহবিচ্ছেদও চান তিনি। গত কয়েক বছর ধরে রঘুবীর আর রোশনি একসঙ্গে আছেন। তাঁদের ছেলের বয়স চোদ্দ বছর। দু’জনেই জানিয়েছেন, বিয়ে করার পরিকল্পনা তাঁদের নেই।
অন্য দিকে, পূর্ণিমার বক্তব্য, তাঁদের বিচ্ছেদ হলেও ছেলে অচলকে তিনি রঘুবীরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেননি। বাবার কাছে অচল যেত। এমনকি, পূর্ণিমা আলাদা থাকতে শুরু করার পরেও রঘুবীরের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে এসেছে অচল।
কিন্তু ক্রমশ ছেলের থেকে নিজেকে রঘুবীর দূরে সরিয়ে নিয়েছেন বলে পূর্ণিমার অভিযোগ। এখন নাকি ছেলের নম্বরও নিজের ফোনে ব্লক করে রেখেছেন ‘সালাম বম্বে’, ‘রুদালি’, ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’, ‘পিপলি লাইভ’-সহ আরও বহু ছবির বলিষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা রঘুবীর।
পূর্ণিমার দাবি, রঘুবীরের জীবনে কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন তিনি-ই। স্বামীর কেরিয়ার ও সংসারের কথা ভেবে সরে এসেছিলেন নৃত্যশিল্পীর ভূমিকা থেকেও। কিন্তু শেষ অবধি তাঁকেই ব্রাত্য করে দিলেন রঘুবীর। আক্ষেপ পূর্ণিমার। অন্যদিকে রঘুবীরের অভিযোগ, পূর্ণিমারও একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। কিন্তু তাঁর সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন পূর্ণিমা।
রঘুবীরের তরফে এখন ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পাঠানোও অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ পূর্ণিমার। ফলে তিনি যে অর্থকষ্টে আছেন, সে কথাও জানাতে ভোলেননি পূর্ণিমা।
বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনে রঘুবীরের কাছ থেকে এককালীন এক কোটি টাকা এবং প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে খোরপোশ দাবি করেছেন পূর্ণিমা। (ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)