দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। হিন্দি ছবিতেও একাধিক বার দেখা গিয়েছে তাঁকে। অমিতাভ বচ্চন এবং ঋষি কপূরের মতো তারকার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন। সৌন্দর্য নয়, বরং নায়িকা-সুলভ রূপ নেই বলেই নাকি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
‘আজ কা অর্জুন’, ‘নসিব আপনা আপনা’ ছবিতে কাজ করা ওই অভিনেত্রীর জীবন বার বার চর্চায় উঠে এসেছে। নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কারণে খবরের শিরোনাম হতে হয়েছে তাঁকে। কখনও তাঁর বাবা খুনের চেষ্টার অভিযোগে জেল খেটেছেন, তো কখনও প্রতারণার অভিযোগে তাঁর নিজেরই জেল হয়েছে।
তাঁর পুরো নাম রাধিকা শরৎকুমার। জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা এবং কমেডিয়ান এম আর রাধার মেয়ে রাধিকা। তাঁর বাবার চার বিয়ে। তার মধ্যে স্ত্রী গীতার মেয়ে রাধিকা।
অভিনয়ে আসার কোনও ইচ্ছা ছিল না রাধিকার। স্কুলের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এমন সময় ১৯৬৭ সালের একটি ঘটনা তাঁর জীবনে কালো মেঘ ঘনিয়ে তোলে। ওই বছর ১২ জানুয়ারি তাঁর বাবা প্রযোজক এমজিআর-এর বাড়িতে একটি বৈঠক করতে গিয়েছিলেন। কথাবার্তার মধ্যেই এমজিআর-কে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালাতে শুরু করেন তিনি। তার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে যাত্রায় দু’জনেই প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু খুনের চেষ্টার অভিযোগে বাবার চার বছর তিন মাসের জেল হয়। ওই ঘটনা মানসিক ভাবে ভেঙে দিয়েছিল রাধিকাকে। তাঁর মা গীতা তখন তাঁকে পরিচিত বলয়ের বাইরে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে চলে যান। কয়েক বছর সেখানে কাটানোর পর ১৪ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
একমাত্র স্কুলের ছুটির সময়ে বাড়িতে আসতেন রাধিকা। এমনই এক দিনে নামজাদা দক্ষিণী পরিচালকের চোখে পড়ে যান রাধিকা। রাধিকার মায়ের ইচ্ছাতেই পরিচালক ভারতী রাজার একটি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। প্রথম ছবিই ছিল সুপারহিট। এরপর তেলুগু, মালয়ালম, তামিল-সহ একাধিক দক্ষিণী ছবিতে কাজ পেতে শুরু করেন।
বলিউডেও সুযোগ করে নিয়েছিলেন নিজ গুণে। ১৯৮৬-তে ঋষি কপূরের সঙ্গে ‘নসিব আপনা আপনা’ ছবিই তাঁকে বলিউডে জনপ্রিয় করে তোলে। এ ছবিতে ঋষি কপূরের স্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ওই ছবিটি একটু আলাদা ছিল। ছবিতে নায়িকা-সুলভ মেকআপ তাঁকে দেওয়া হয়নি। এই চরিত্রে অভিনয় করেই বিস্তর জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। তার পর অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী, জিতেন্দ্র-র মতো তারকাদের সঙ্গে ছবি করেছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন।
পেশাগত জীবনে যতটা দ্রুত উন্নতি করছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে সেই গতিতেই যেন একের পর এক বাজ পড়ছিল তাঁর উপর। বাবার ওই কৃতকর্মের জন্য বহু বছর পরিচিত গণ্ডির বাইরে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। তার উপর বিবাহিত জীবনও ছিল কণ্টকময়। প্রথমে খবর পাওয়া যায়, ১৯৮৫ সালে অভিনেতা প্রতাপ প্রধানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
১৯৯০ সালে ফের শিরোনামে উঠে আসেন রাধিকা। রিচার্ড হার্ডি নামে এক ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হয় রাধিকার। মাত্র দু’বছরের মধ্যে সেই বিয়েও ভেঙে যায়। আর কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন না বলেই মনস্থির করে ফেলেছিলেন রাধিকা।
কিন্তু ২০০১ সালে ফের বিবাহ বন্ধনে জড়িয়ে ফেলেন নিজেকে। অভিনেতা আর শরৎকুমারের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তত দিনে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও হাত পাকাতে শুরু করেছিলেন রাধিকা। বড় এবং ছোট, দুই পর্দাতেই কাজ করছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন তাঁর স্বামী শরৎকুমারও।
রাধিকা ও শরৎকুমার ফের শিরোনামে উঠে এসেছেন। ২০১৭ সালের একটি প্রতারণা মামলায় তাঁদের এক বছরের জেল হয়েছে সম্প্রতি। সেই বছর তাঁর স্বামী শরৎকুমার এক ব্যক্তির থেকে বড় অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরে চেক মারফত সেই টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চেক বাউন্স করেছিল। তার পরই তাঁদের দু’জনের নামে মামলা হয়।