আরজি কর-কাণ্ডের ছায়া ধারাবাহিক ‘আকাশকুসুম’-এ। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
বাস্তবে ধর্ষককে খুনের পক্ষপাতী নন তিনি। তাঁর যুক্তি, “এক জন ধর্ষককে খুন করলে দশ জন ধর্ষক জন্ম নেবে। কারণ, সমাজ অসুস্থ।” পাশাপাশি, তিনি ১৪ অগস্টের মধ্যরাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচি নিয়েও আশাবাদী নন। তিনি ‘আকাশকুসুম’ ধারাবাহিকে ‘ডালি’ ওরফে কথা চক্রবর্তী। ধারাবাহিকে তাঁর অভিনীত একটি দৃশ্যে আরজি কর-কাণ্ডের ছায়া দেখতে পেয়েছেন দর্শক। দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, ‘ডালি’একটি মেয়েকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে ধর্ষককে খুনের চেষ্টা করছে। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে দৃশ্যের চরিত্রাভিনেত্রী এবং তাঁর অভিনীত দৃশ্য শিরোনামে।
অভিনেত্রী সত্তার বাইরে ‘ব্যক্তি’ কথাও কি একই ভাবে ধর্ষক খুনে বিশ্বাসী? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে তিনি জানান, কাউকে খুনের পক্ষপাতী নন। তাঁর কথায়, “একই সঙ্গে মিছিল, জমায়েতেও আর আস্থা নেই। বলতে পারেন আমি হতাশ। একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটবে। প্রতিবাদের ঢেউ উঠবে। তার পর তা অস্তমিত। আবারও ধর্ষণের মতো নারকীয় ঘটনা ঘটবে।” নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে গত বছর অগস্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিলেন কথা। তাঁর মতে, সেই সময়েও প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। এক বছরের মধ্যে চাপা পড়ে গিয়েছে সেই ঘটনা।
যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও ধারাবাহিকের পরিচালকের তরফে জানানো হয়েছে, ‘আকাশকুসুম’-এ যে দৃশ্যের সঙ্গে আরজি কর-কাণ্ডের মিল পাচ্ছেন দর্শক, পুরোটাই কাকতালীয়। একই কথা জানিয়েছেন অভিনেত্রীও। তার পরেও দৃশ্য মিলে যাওয়ায় অভিনয়ের পর কি কোনও অস্বস্তি হচ্ছে কথার? প্রশ্নের জবাবে অস্বস্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “দৃশ্যে অভিনয় করতে করতেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তার পর অস্বস্তি হতে আরম্ভ করল, আরে! দৃশ্যে যা যা হয়েছে বা হচ্ছে সেটাই হয়তো মৃতার সঙ্গে ঘটেছিল। এখন রীতিমতো ভয় করছে।” অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এখন আর তাঁর কান্নার দৃশ্যে অভিনয়ের সময়ে গ্লিসারিনের প্রয়োজন পড়ছে না। তিনি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করছেন। পাশাপাশি, রাতে ফেরার সময় বাড়তি সতর্ক হয়েছেন। সঙ্গে পেপার স্প্রে, ছুরি ইত্যাদি রাখছেন আত্মরক্ষার জন্য।
তাঁর কথায়, “কাজের জন্য কলকাতায় একা থাকি। কারণ, বাড়ি কলকাতার বাইরে। এমনিতেই মা দুশ্চিন্তা করতেন। এখন সেই চিন্তার পরিমাণ আরও বেড়েছে। বাড়ি ফেরার সময় মা ফোন করেন। বলেন, ফোন যেন না রাখি। যত ক্ষণ না বাড়ি পৌঁছচ্ছি, তত ক্ষণ মা ফোনে কথা বলেন।” এর মধ্যেই সম্প্রতি এক মদ্যপ ক্যাব চালকের পাল্লায় পড়েছিলেন কথা। সেই চালক মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কথাকে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার জন্য জোর করেছিলেন। অভিনেত্রীর দাবি, “সাহায্য চেয়ে সে দিন রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেক চিৎকার করেছিলাম। আমার চিৎকারে কেউ সাড়া দেননি।”
পর্দায় নিশ্চয়ই দোষীর শাস্তি হবে? “অবশ্যই”, সপাট জবাব অভিনেত্রীর। একটু থেমে যোগ করলেন, “বাস্তবের দোষী শাস্তি পাবে তো? আমার আপাতত এই একটিই প্রশ্ন।”