‘পূর্ব পশ্চিম’-এর নাট্যোৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সৌমিত্র মিত্র, অরুণ মুখোপাধ্যায় এবং দেবশঙ্কর হালদার। ফাইল চিত্র।
মার্চের শুরুতেই এক পশলা খুশির পরশ। একগুচ্ছ নাটক এবং গানের সম্ভার নিয়ে আসছে ‘পূর্ব পশ্চিম’। এই নাট্যদলের উদ্যোগে নাট্যোৎসব আয়োজিত হবে আগামী ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চ, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে। ৫ দিনে মোট ৮টি নাটক মঞ্চস্থ হবে এই উৎসবে। রয়েছে নতুন আকর্ষণও। যা নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, মেঘনাদ ভট্টাচার্যের মতো বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বরা। রঙ্গমঞ্চের দেড়শো বছর উপলক্ষে ওই দিন সন্ধ্যায় ‘নাট্য গানের পরম্পরা’য় বাংলা থিয়েটারের গান নিয়ে থাকবেন সোহিনী সেনগুপ্ত এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্য। এই উপলক্ষে থাকবে প্রদর্শনীও।
আগামী ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চ, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। ৫ দিনে মোট ৮টি নাটক মঞ্চস্থ হবে এই উৎসবে। নিজস্ব চিত্র।
২ তারিখ সন্ধ্যায় রয়েছে সেই বিশেষ আকর্ষণ। বর্ষীয়ান নাট্য পরিচালক তথা ‘চেতনা’র পুরোধা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় এই নাট্যোৎসবে প্রথম বার অভিনীত হবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার নাট্য রূপান্তর ‘হারানের নাতজামাই’। অশীতিপর পরিচালক নিজেও এমন একটি বড় কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে তৃপ্ত।
তাঁর কথায়, “হারানের নাতজামাই’ নাটকটি আমার খুবই প্রিয় একটি লেখা। অন্যান্য অনেকেই, বিশেষ করে গণনাট্য সংঘ এক সময় এর বহু অভিনয় করলেও আমার তেমন ভাবে গুছিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে এবং বর্তমান ভারতে ঘটে চলা কৃষক বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে এই নাট্যটি মঞ্চস্থ করতে পেরে আমি খুবই উত্তেজিত।” নাটকটির নিবেদনে যাদবপুর রম্যাণী মুকেশ চক্রবর্তী।
রঙ্গমঞ্চের দেড়শো বছর উপলক্ষে উৎসবের শেষ দিনে গিরিশচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চস্থ হবে ‘ এক মঞ্চ এক জীবন’। — নিজস্ব চিত্র।
৩ তারিখ রাজা ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হবে ‘চশমে বদ্দুর’। এটি নতুন নাটক। ৪ তারিখ থাকবে দু’টি নাটকের অভিনয়। দুপুরে সৌমিত্র মিত্রের নির্দেশনায় ‘লোরকা লোরকা’। এটিও নতুন প্রযোজনা। ওই দিন বিকেলে ‘পূর্ব পশ্চিম’-এর প্রযোজনায় বহুল জনপ্রিয় ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’। মঞ্চসফল এই নাটকের নির্দেশক ছিলেন রমাপ্রসাদ বণিক। প্রয়াত হয়েছেন তিনি। তবু প্রযোজনাটির সফল উপস্থাপনা বন্ধ হয়নি।
৪ তারিখ সন্ধেবেলা থাকছে ‘পাগল-পারা’ নাটকটি। এটিও আয়োজক নাট্যদলেরই প্রযোজনা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি গল্প অবলম্বনে নাট্য রূপান্তর ঘটিয়েছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।
৫ তারিখ, অর্থাৎ উৎসবের শেষ দিন দুপুরে থাকছে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। ‘নয়ে নাটুয়া’ প্রযোজিত এই নাটকের নির্দেশক গৌতম হালদার, একক অভিনয় তাঁর।
অরুণ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় প্রস্তুতি চলছে ‘হারানের নাতজামাই’-এর। — নিজস্ব চিত্র।
ওই দিন সন্ধেবেলা গিরিশচন্দ্রের জীবনকেন্দ্রিক নাটক ‘এক মঞ্চ এক জীবন’ মঞ্চস্থ হবে ‘পূর্ব পশ্চিম’-এর প্রযোজনায়। গিরিশচন্দ্রের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার এই প্রযোজনার বরাবরের আকর্ষণ। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “পূর্ব পশ্চিম নাট্যদলের সঙ্গে আমি অনেক দিন ধরেই যুক্ত। ফেস্টিভ্যাল শুরু হবে। আমি বেশ কয়েকটি নাটকে আছি। চাই, সবাই আসুন। অতিমারি পরবর্তী সময়ে এই প্রয়াস সফল করুন। খুব আনন্দ হোক কটা দিন।”
‘পূর্ব পশ্চিম’ নাট্যদলের কর্ণধার, পরিচালক-অভিনেতা সৌমিত্র মিত্র জানালেন, নাট্যদলের বয়স পায়ে পায়ে উনিশ ছুঁয়েছে। উৎসবের এটি তেরোতম বর্ষ। অ্যাকাডেমি সেজে উঠছে উৎসবের প্রস্তুতিতে। তাঁর কাছে বিশেষ এই আয়োজন। কেন?
বাংলা রঙ্গমঞ্চের দেড়শো বছর যে! সেই উপলক্ষে উৎসবের শেষ দিনে রঙ্গমঞ্চের প্রবাদপুরুষ গিরিশচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চস্থ হবে ‘এক মঞ্চ এক জীবন’। এটি হবে এই নাটকের নব্বইতম অভিনয়, জানালেন সৌমিত্র।
বললেন, “বাংলা থিয়েটারে নারী অভিনেতাদের অবদানকে স্মরণ করে থাকছে একটি প্রদর্শনী। এটি হবে সুকৃতি লহরীর উদ্যোগে। বিনোদিনী, তিনকড়ি দাসী থেকে নারীদের মঞ্চাভিনয়ের যে দীর্ঘ ঐতিহ্য শাঁওলি মিত্র পর্যন্ত বহমান— এই প্রদর্শনীতে ধরা থাকবে তার চিহ্ন।”
দর্শক বদলে যাচ্ছে নিয়তই, সে কথা স্বীকার করলেন সৌমিত্র। তবে একই প্রযোজনা বার বার দেখার চাহিদা যে ফুরোয় না! “তার কারণ, নাটক প্রতি দিন নতুন করে জন্মায়! যত বার মঞ্চস্থ হবে তত বারই নতুন!” বললেন সৌমিত্র। সে কারণেই তাঁর আশা, নতুন প্রযোজনাগুলির পাশাপাশি বহু বার মঞ্চস্থ হওয়া নাটকের অভিনয় দেখতেও দর্শক এই নাট্য উৎসবে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ করবেন।