Pujo Bengali Films vs Tiger 3

ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে টাইগার! পুজোয় বাংলা ছবির ভাগ্যের কাঠি কি বলিউডের হাতে?

পুজোয় এ বার বাংলা ছবির প্রতিপক্ষ সলমন খান! ‘টাইগার ৩’কে ঠেকাতে একজোট হতে কি পারবেন বাংলার নির্মাতারা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২৯
Share:

পুজোর বাংলা ছবিগুলির ব্যবসায় কি থাবা বসাবে সলমনের ‘টাইগার ৩’। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পুজোর আগে টলিপাড়ার আকাশে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা। বাংলা ছবির ব্যবসা নিয়ে চিন্তায় ডুবে রয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক, পরিচালক থেকে শুরু করে তামাম হলমালিকেরা। পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে চার চারটে ‘বড়’ বাংলা ছবি। এ দিকে দীপাবলিতে মুক্তি পাচ্ছে সলমন খান অভিনীত ‘টাইগার ৩’। সূত্রের খবর, সলমনের ছবির প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মস নাকি এই ছবির ক্ষেত্রে ‘নো শো পলিসি’ (যে কোনও সিঙ্গল স্ত্রিনে সব শো এই ছবিকেই দিতে হবে) নিয়েছে। তার মানে, বাংলা ছবিকে জায়গা দেওয়া যাবে না। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।

Advertisement

বছরের শুরুতেই ‘পাঠান’ ছবির ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিতে এই একই অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যের একাধিক সিঙ্গল স্ক্রিনে শাহরুখ খান অভিনীত ছবিটি দেখানো হয়, সেখানে বাংলা ছবিকে জায়গা দেওয়া হয়নি। আগামী ১৯ অক্টোবর মুক্তির পাচ্ছে পুজোর ছবিগুলি। তার পর ১০ নভেম্বর মুক্তি পাবে ‘টাইগার ৩’। এখন সলমনের ছবির জন্য বাংলা ছবিকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ এক মাসেরও কম সময় পাবে বাংলা ছবিগুলো। বছরের অন্য সময়ে এই ধরনের অলিখিত ‘নির্দেশ’ মেনে নিলেও পুজোর ছবিকে ঘিরে কিন্তু কোনও রকম অসহযোগিতা বরদাস্ত করতে নারাজ চারটি বাংলা ছবির নির্মাতারা। পুজোর ছবির ‘লড়াই’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও, আপাতত বহিরাগতকে ঠেকাতে বাংলা ছবির স্বার্থে একতার পথেই হাঁটতে চাইছে টলিপাড়া।

পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘দশম অবতার’। দেব নিয়ে আসছেন ‘বাঘা যতীন’। অন্য দিকে, এই প্রথম পুজোর ময়দানে লড়বেন নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের বাজি ‘রক্তবীজ’। অরিন্দম শীল নিয়ে আসছেন মিতিন মাসির নতুন ছবি ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’। বাংলা ছবিকে কোণঠাসা করার এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করলেন এসভিএফের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘আমি দেড় হাজারেরও বেশি ছবি রিলিজ় করেছি। কিন্তু এ রকম ঘটনা আগে কখনও শুনিনি। অলিখিত ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে!’’ কথা প্রসঙ্গেই উদাহরণ দিলেন শ্রীকান্ত। বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগে পুজোর সময়েই মুক্তি পেয়েছিল ‘ওয়ার’। তখন কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা মিটেছিল। কিন্তু এ বার যা শুনছি, সেটা ঠিক হচ্ছে না।’’ তবে তাঁদের প্রযোজিত ‘দশম অবতার’ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী শ্রীকান্ত। বাকি তিনটে বাংলা ছবির নির্মাতাদের সঙ্গেই এই নিয়ে একপ্রস্থ কথা হয়েছে তাঁর। সমস্যা না মিটলে কী করবেন তিনি? শ্রীকান্তের স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমি ঠিক করেছি যারা কোনও শর্ত রাখবেন, সেই হলে আমার ছবি দেব না। কারণ আমি আমার ছবি নিয়ে খুবই কনফিডেন্ট।’’

Advertisement

পুজোয় বাংলা ছবির ব্যবসার দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকেন রাজ্যের হলমালিকেরা। সেখানে তৃতীয় সপ্তাহে বাংলা ছবির প্রদর্শন বন্ধ করতে নারাজ অনেকেই। আবার ‘টাইগার ৩’-এর মতো ছবিও যে ব্যবসা দেবে সে কথাও অস্বীকার করতে পারছেন না তাঁরা। নবীনা সিনেমাহলের কর্ণধার নবীন চৌখানি বললেন, ‘‘বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওরা কোনও ভাবেই সহযোগিতা করবে না বলেই দিয়েছে। ছবির ব্যবসা ভাল না হলে তখন একটা ছবিকে সরিয়ে দেওয়া মানা যায়। কিন্তু পুজোর ছবি থেকে সবারই আলাদা প্রত্যাশা থাকে। ছবি চললে তার পরেও সেটা বন্ধ করে দেওয়া অনুচিত।’’

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কানেও এই খবর পৌঁছেছে। পুজোর বাংলা ছবি নিয়ে তাঁর বক্তব্যে আশাবাদ ফুটে উঠল। বললেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, ছবি ভাল চললে কোনও হল থেকেই বাংলা ছবিকে তুলে দেওয়া হবে না। আর যদি সেটা ঘটে তা হলে আমার মনে হয় সে ক্ষেত্রে প্রযোজক এবং পরিচালকেরা প্রতিবাদে একজোট হবেন।’’ কথা প্রসঙ্গেই বৃহত্তর স্বার্থের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইলেন পরিচালক। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও ছবি যদি না চলে তা হলে সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু অন্যথায় সবাই নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবেন। কারণ, এই হলমালিকেরাই তো দেখেছেন গত বছর হিন্দি ছবি যখন চলেনি তখন বাংলা ছবিই তাঁদের ব্যবসা দিয়েছিল।’’

হিন্দি ছবির প্রদর্শনে এই নতুন ‘ট্রেন্ড’কে নিয়ে চিন্তিত অরিন্দম শীল। বললেন, ‘‘আমিও বিষয়টা শুনেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তো শিল্প তৈরি করে লাভ নেই। এর থেকে তো আলু-পটল বিক্রি করাই ভাল!’’ একই সঙ্গে হিন্দি ছবির কোনও রকম অনৈতিক দাবিকে বন্ধ করার জন্য অরিন্দম সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানালেন। বললেন, ‘‘যে ছবি ব্যবসা দিচ্ছে সেই ছবিকে যদি জোর করে হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। সত্যিই বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর আবেদন না করা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছি না।’’

এই রাজ্যে ‘টাইগার ৩’-এর পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে জালান ডিসট্রিবিউটরস। তাঁরা কি ‘টাইগার ৩’-এর ক্ষেত্রে সত্যিই ‘নো শো’ পলিসি নিয়েছে। সংস্থার তরফে প্রীতম জালান অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘‘আমি তো এ রকম কিছু শুনিনি। এখনও ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে আসেনি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়াটা ঠিক নয়।’’ তবে বাংলা ছবি দীপাবলির আগে হিন্দি ছবির পাশাপাশি যথেষ্ট জায়গা পাবে কি না, তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ প্রীতম। বললেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি কিছু বলা সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, গুজব ছড়িয়ে একটা সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement