মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ। তারই মাঝে এক চিলতে খাটুয়া গ্রাম। পথও তেমনই দীর্ঘ। ট্রেন, গাড়়ি, নৌকা— অনেক কাণ্ড করে তবেই এই প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছনো যায়। সে রকমই এক সবুজ ঘন গ্রামে সেট ফেলেছেন পরিচালক সায়নদীপ চৌধুরী।
এক পাশে ধানক্ষেত, অন্য পাশে ঝিল। মাঝে জঙ্গল। তাতেই এক মাস ধরে বানানো হয়েছে মাটির বাড়ির সেট। প্রথম বার ছবির শ্যুটিং হচ্ছে এই গ্রামে।
সায়নদীপের প্রথম ছবি, ‘আসমানী ভোর’। নায়ক-নায়িকার চরিত্রে রয়েছেন কিঞ্জল নন্দ এবং পূজারিণী ঘোষ। আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে দেবদ্যুৎ ঘোষ, রাহুল দেব ঘোষ, মধুমিতা সেনগুপ্ত, অমিত সাহা, প্রমুখকে।
জোঁকে ভর্তি চারপাশ। যেখানে সেখানে বসতে পারছেন না নায়ক নায়িকা। কিন্তু তাতে দমে যাচ্ছেন না তাঁরা। পুরোদমে অভিনয় করে চলেছেন। পুরো ইউনিটকে মাতিয়ে রাখার জন্য মাঝে মাঝে একে অন্যের সঙ্গে ঠাট্টা মশকরাও করছেন কিঞ্জল-পূজারিণী।
যে মাটির বাড়িটি বানানো হয়েছে, তাতে অভাব নেই কিছুর! রান্নাঘরে পেঁয়াজ, আদা, রসুন থেকে শুরু করে মুড়ি, চাল, ডাল— সবই সাজানো হয়েছে।
অন্য দিকে সাইকেল রাখার জন্য মাটির দেওয়ালে পোঁতা হয়েছে পেরেক। ছবির শিল্প নির্দেশকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রামের মানুষরাও।
শ্যুটিংয়ে বিরতি পেয়ে সেই সাইকেলে পূজারিণীকে চাপিয়ে বেড়াতে বেরোলেন কিঞ্জল।
নদীর পাড়ে বাঁধা নৌকায় চেপে প্রেম করতে বেরিয়ে পড়লেন ছবির নায়ক-নায়িকা। কিঞ্জলের হাতে তারের বাদ্যযন্ত্র। তাতে সুর মিলিয়ে দরাজ গলায় গান ধরলেন নায়ক, ‘এ বার যদি আমি ডুবে মরিও!’ পূজারিণী মুগ্ধ হয়ে কিঞ্জলের গান শুনলেন।
নায়ক-নায়িকা না হয় নদীর পাড়ে বসে গান বাজনা করলেন, ও দিকে ক্যামেরা-সহ কলাকুশলীরা মাঝ নদী থেকে ঘুরে এলেন! নদীর মাঝে বাশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। তাতে ক্যামেরা চাপিয়ে নদীর পাড়ের মাটির বাড়ির সামনে নায়ক নায়িকার মান অভিমানের দৃশ্য শ্যুট করেছেন চিত্রগ্রাহক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিনেতা রাহুল দেব ঘোষও বাউলবেশে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত। সন্ধ্যা হয়ে আসতেই জ্বালিয়ে দেওয়া হল লণ্ঠনের আলো। একে একে রাতের দৃশ্যগুলি ক্যামেরাবন্দি করার পালা।
আনন্দবাজার অনলাইনকে কিঞ্জল জানালেন, তিনি গত ৮ তারিখ থেকে আজিমগঞ্জে রয়েছেন। মাঝে কেবল এক দিনের জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন।
বহুরূপীর চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে তাঁকে তাই এক মাস ধরে দাঁড়ি রাখতে হয়েছে কিঞ্জলকে।
গ্রামের বাড়ি দেখে স্মৃতিমেদুর কিঞ্জল বললেন, ‘‘আমার বাড়ি তো এরকমই ছিল। এ রকমই মাটির বাড়ি। তাই খুব ভাল লাগছে।’’ মেদিনীপুরের এক গ্রামে তিনতলা মাটির বাড়িতে ছোটবেলা কেটেছে তাঁর। তাই এই কবির চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে সময় লাগেনি কিঞ্জলের।
গ্রামের একটি বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পুজারিণীর জন্য। সেখানেই তিনি পোশাক বদলাচ্ছেন। তাঁর রূপসজ্জার টুকিটাকি সবই সেই বাড়ির দু'টি ঘরে। পুজারিণী বললেন, ‘‘বহু দিন পর কোনও আউটডোর শ্যুটিংয়ে এত মজা হচ্ছে!’’
সে দিন পূজারিণীর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ায় আনন্দবাজার অনলাইনকে আজিমগঞ্জ ঘুরে দেখালেন তিনি। শ্যুটিং করতে গিয়ে ভূতের সঙ্গে সাক্ষাতের গল্পও শোনালেন।
দম ফেলার ফুরসত নেই। তাতেও কিঞ্জল আর পূজারিণীর খুনসুটিতে বিরাম নেই। পূজা যখন শট দিচ্ছেন, কিঞ্জল হুট করে ক্যামেরা সামনে চলে এলেন! ঢুকে পড়লেন কিঞ্জল। তাঁকে ধমক দিলেন পূজা, ‘‘ঠাস করে চড় মারব। খালি আমার পিছনে লাগা।’’ শহুরে শিল্পীরা খাটুয়া গ্রামকে হাসি ঠাট্টায় মাতিয়ে রেখেছেন যেন!
এ ভাবেই পূজা আর কিঞ্জলের সঙ্গে তাঁদের নতুন ছবি ‘আসমানী ভোর’-এর শ্যুটিং ঘুরে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা মুর্শিদাবাদ, জিয়াগঞ্জ আর আজিমগঞ্জের সৌন্দর্য