তাঁদের একসঙ্গে কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি নেই। এমন একটা ছবি, যেটা দর্শক মনে রেখে দেবে। এমন একটা ছবি, যেটার আর্কাইভাল ভ্যালু থাকবে। অতএব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এ বার একসঙ্গে বড় পরদায়। বাবা-ছেলের চরিত্রে।
পরিচালক অতনু ঘোষ। ছবির নাম ‘ময়ূরাক্ষী’। সৌমিত্র আর প্রসেনজিৎকে একসঙ্গে শেষ দেখা গিয়েছিল ‘প্রাক্তন’-এ। যদিও দু’জনের একসঙ্গে দৃশ্য নামমাত্র। এর আগেও তাঁরা বেশ কয়েকটি ছবি করেছেন। কিন্তু দু’জনেই জানালেন, মনে রেখে দেওয়ার মতো কাজ তাঁরা একসঙ্গে করেননি। ‘ময়ূরাক্ষী’ দিয়ে এ বার সেটাই হতে চলেছে।
অতনুর পরিচালনায় প্রসেনজিৎ এই প্রথমবার। এ দিকে সৌমিত্রর সঙ্গে অতনুর বেশ কয়েকটি কাজ হয়ে গিয়েছে। ‘রূপকথা নয়’, ‘এক ফালি রোদ’। অতনুর সঙ্গে কাজ করতে সৌমিত্রও কমফর্টেবল। বললেন, ‘‘ও যেভাবে চিন্তাভাবনা করে বিষয় নিয়ে, সেটা আমার ভাল লাগে। অনেকেই তো ছবির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সকলের মধ্যে সেই মনন দেখতে পাই না।’’
প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গে বেশ নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লেন সৌমিত্র। বললেন, ‘‘যাকে ছোটবেলায় কোলে করে ঘুরে বেরিয়েছি। তার উত্থান চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা বেশ অন্য রকম। বুম্বা যেভাবে ইন্ডাস্ট্রিটা একার কাঁধে বয়ে নিয়ে গিয়েছে, সেটা সত্যিই তারিফের যোগ্য।’’ বলার সময় সৌমিত্রর গলায় প্রশস্তি ঝরে পড়ছিল।
প্রসেনজিৎ ছবিটা বাছলেন কেন? অতনু, সৌমিত্র, না কি গল্প? ‘‘তিনটেই কারণ। আমি সৌমিত্রকাকুর সঙ্গে ছবি করলেও দু’জনের উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ ছিল না। সৌমিত্রকাকুর বয়স হয়ে যাচ্ছে। খালি মনে হচ্ছিল, তাড়াতাড়ি কিছু একটা করা দরকার। খানিকটা স্বার্থপরের মতো কথাটা শোনাতে পারে। কিন্তু এই ছবিটা হওয়ার খুব দরকার ছিল। অতনুর গল্পটাও ভাল লেগে গেল, ’’ বললেন প্রসেনজিৎ।
তিনি যে-তাড়ার কথাটা বললেন হয়তো সেটা সত্যি। সাংবাদিক সম্মেলনে সৌমিত্র ধীর-স্থির থাকলেও, ভিতরে নিশ্চিতভাবে ঝড় বইছে। নাতি রণদীপ এখনও হাসপাতালে। অথচ সে সব সামলে তিনি এখনও সিনেমার প্রতি সমান দায়বদ্ধ।
অতনু তাঁর প্রথম কাজ ‘অংশুমানের ছবি’ নিয়ে প্রসেনজিতের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য ছবির কাজে ব্যস্ত থাকায় অভিনেতা সে ছবি করতে পারেননি। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘অতনুর গল্প বলার ধরন আমার ভাল লাগে। এই গল্পের অসাধারণ আবেগও মানুষকে ছুঁয়ে যাবে।’’
ছবিতে প্রসেনজিৎ-সৌমিত্র বাবা-ছেলের ভূমিকায়। তাঁদের মধ্যে সমীকরণটা ঠিক কেমন? বিষয়টা খোলসা করতে চাইলেন না পরিচালক। শুধু বললেন, ‘‘আধুনিক সমাজে একজন বাবা-ছেলের যেমন সম্পর্ক হয়, তার প্রতিফলন এই ছবিতেও থাকবে।’’
পুরুষপ্রধান গল্প। অথচ নাম ‘ময়ূরাক্ষী’! কেন? ধোঁয়াশা কাটাতে চাইলেন না প্রসেনজিৎ। তাঁর জবাব, ‘‘ময়ূরাক্ষী নদীর নাম। কেন এই নাম সেই জবাবটা খুঁজতে হবে। চমকটা এখনই ভাঙব না!’’