সৃজিত, অরিন্দম ও বিশাল
গত মাসেই ওটিটি কনটেন্টের উপরে প্রাথমিক স্তরে কী ভাবে সেন্সরের নিয়ম বলবৎ হবে, তার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আপাতত ‘নিষেধের’ ফতোয়া জারি না করে, ওটিটি সংস্থাগুলিকে বয়স অনুযায়ী কনটেন্ট ভাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই কিছুটা হলেও এ ক্ষেত্রে স্বস্তি মিলেছে।
তবে ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে সেন্সরের নিয়ম আগের মতোই বহাল। সেখানে ছবিমুক্তির পথে নতুন জটিলতা তৈরি করা হল বলে মত ছবিকরিয়েদের। কারণ, ১৯৮৩ সালে তৈরি হওয়া বিধিবদ্ধ সংস্থা ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপ্যালেট ট্রাইবুনাল আর সক্রিয় থাকছে না। কেন্দ্রীয় আইন ও ন্যায়প্রতিষ্ঠা মন্ত্রক এই সংস্থাটির অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে। সেন্সর বোর্ডে যে সব ছবির মুক্তি নিয়ে আপত্তি তোলা হত বা শংসাপত্র দেওয়া হত না, সেই ছবিগুলি দ্বারস্থ হত এই ট্রাইবুনালের। এখন থেকে সেন্সরের শংসাপত্র না পেলে, সংশ্লিষ্ট ছবির পরিচালক-প্রযোজককে সরাসরি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে।
টলিউড ও বলিউডের পরিচালকেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তিত। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এটি একটি স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। স্বাধীন ভাবে কাজ করার পরিসর ক্রমশ কমছে।’’ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করি না। কারণ আদালতে যাওয়া মানেই প্রযোজকের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এই সংস্থাটির প্রয়োজনীয়তা ছিল।’’ সেন্সর প্রথমে ছাড়পত্র দেয়নি অরিন্দম শীলের ‘ধনঞ্জয়’ ছবিটিকে। ট্রাইবুনালের হস্তক্ষেপেই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। অরিন্দমের কথায়, ‘‘সেন্সরশিপের দরকার রয়েছে। কিন্তু ছবি মুক্তি পাবে কি না, সেটা সেন্সর বলতে পারে না।’’
গত কয়েক বছরে হিন্দিতেও একাধিক ছবি হয়েছে, যার মুক্তি সম্ভব হয়েছিল ট্রাইবুনালের মধ্যস্থতায়। যেমন, ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’ ইত্যাদি। পরিচালক হনসল মেহতা, বিশাল ভরদ্বাজ, অভিনেত্রী রিচা চড্ডা এই সিদ্ধান্তের একযোগে সমালোচনা করেছেন। হনসলের কথায়, ‘‘হাইকোর্টের কি এত সময় আছে যে ছবিমুক্তির অসুবিধে নিয়ে মামলা শুনবে? ক’জন প্রযোজকের ক্ষমতা রয়েছে আদালতে যাওয়ার? এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে প্রতিক্রিয়াশীল।’’ বিশাল ভরদ্বাজের টুইট, ‘‘সিনেমার জন্য চরম দুঃখের দিন।’’
আগামী দিনে কেন্দ্র নতুন কোনও সংস্থা তৈরি করবে না কি আদালতের পাকেচক্রে ছবি আটকে যাবে, তা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে।