উল্কাবেগে কেরিয়ারের সূত্রপাত। দর্শকরা ভেবেছিলেন টিনসেল টাউন শাসন করা বাঙালি কুশীলবদের মধ্যে তিনিও এক জন হবেন। কিন্তু তাঁদের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। প্রথম কিছু বছরের পরে বলিউডে কার্যত হারিয়েই গেলেন প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়।
প্রিয়াংশু বরাবরই প্রবাসী। জন্ম ১৯৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, দিল্লিতে। কেমব্রিজ ফাউন্ডেশন স্কুলের পরে তাঁর পড়াশোনা রামলাল আনন্দ কলেজে। বাণিজ্যে স্নাতক প্রিয়াংশু মডেলিং দিয়ে বিনোদন দুনিয়ায় কেরিয়ার শুরু করেন।
বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় পরিচিতি পাওয়ার পরে উদিত নারায়ণের মিউজিক ভিডিয়োয় অভিনয় করেন প্রিয়াংশু। ২০০১ সালে প্রিয়াংশুর আত্মপ্রকাশ নায়ক হিসেবে। অনুভব সিংহর পরিচালনায় ‘তুম বিন’ ছবিতে।
বক্স অফিসে তুমুল সাফল্য পায় ‘তুম বিন’। দর্শকদের পছন্দ হয়েছিল নায়িকা সন্দলী সিংহের সঙ্গে প্রিয়াংশুর জুটিও। মহিলা অনুরাগীদের মধ্যেও প্রিয়াংশুর জনপ্রিয়তা পৌঁছেছিল আকাশছোঁয়া উচ্চতায়।
জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও প্রিয়াংশুকে তাঁর দ্বিতীয় ছবির জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও ২ বছর। প্রথম ছবির পরিচালক অনুভব সিংহই আবার সুযোগ দেন প্রিয়াংশুকে। ছবির নাম ‘আপকো পহলে ভি কহিঁ দেখা হ্যায়’।
ছবিতে প্রিয়াংশুর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সাক্ষী শিবানন্দ। কিন্তু ২০০৩ সালের এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সে বছরই ঐশ্বর্যা রাইয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রিয়াংশু অভিনয় করেন ‘দিল কা রিশতা’ ছবিতে।
কিন্তু প্রিয়াংশু-ঐশ্বর্যা জুটিও জনপ্রিয়তা পায়নি। এর পর প্রিয়াংশুর নামের পাশে ব্যর্থ ছবির তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হতে থাকে।
‘পিঞ্জর’, ‘ওহ’, ‘জুলি’, ‘মদহোশি’, ‘ফিল্মস্টার’, ‘কোই মেরে দিল মেঁ হ্যায়’, ‘হেট স্টোরি থ্রি’, ‘ভূতনাথ’-সহ বেশ কিছু ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। কিন্ত কোনও বারই ফিরে পাননি প্রথম ছবির সাফল্য।
কেরিয়ারের বেশ কিছু বছর বলিউডে কাটিয়ে বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে আসেন প্রিয়াংশু। ২০১০ সালের সুপারহিট ছবি ‘মনের মানুষ’-এ তিনি অভিনয় করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকায়। গৌতম ঘোষের পরিচালনায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-সহ বহু তারকাখচিত এই ছবিতে প্রিয়াংশুর কাজও প্রশংসিত হয়েছিল।
এর পর আরও বেশ কিছু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেন প্রিয়াংশু। ‘ভোরের আলো’, ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘শূন্য অঙ্ক’, ‘পাঁচ অধ্যায়’, ‘শঙ্খচিল’, ’৬১ গড়পার লেন’-সহ বেশ কিছু ছবিতে প্রিয়াংশুর কাজ ভাল লেগেছে দর্শকদের। সব ছবি বক্স অফিসে সফল না হলেও প্রিয়াংশু নিজের ছাপ রেখেছেন টলিউডে।
হিন্দি এবং পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করলেও প্রিয়াংশু বলিউডকে পুরোপুরি ছেড়ে দেননি। কিন্তু অভিনয় করে গেলেও তিনি নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেননি।
ব্যর্থ হলেও প্রিয়াংশুর কাছে ছবির সুযোগ আসা বন্ধ হয়নি। কিন্তু তাঁর কোনও ছবিই বক্স অফিসে সফল হয়নি। ভাল অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও সুদর্শন প্রিয়াংশু থেকে যান ব্যর্থ নায়কের তালিকাতেই।
কেরিয়ারের পাশাপাশি প্রিয়াংশুর ব্যক্তিগত জীবনেও টানাপড়েন অব্যাহত। ১৯৯৭ সালে প্রিয়াংশু বিয়ে করেন মডেল মালিনী শর্মাকে। কিন্তু সেই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
বেশ কিছু মিউজিক ভিডিয়োর পরিচিত মুখ মালিনী অভিনয় করেছিলেন ‘রাজ’ ছবিতে। এখনও অবধি এটাই তাঁর কেরিয়ারের একমাত্র ছবি। এর পর কোনও ছবি তো দূর অস্ত্, বিনোদন দুনিয়া থেকেই নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে সরিয়ে নেন মালিনী।
পরে ‘এনকাউন্টার’ ছবিতে দিনো মোরিয়ার বিপরীতে তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু শ্যুটিং শুরুর দিন দু’য়েক আগে তিনি এই ছবি থেকে সরে দাঁড়ান। ২০০১ সালে মালিনীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় প্রিয়াংশুর। বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে তাঁরা মুখ খোলেননি।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রিয়াংশুর শখ হল ঘোড়সওয়ারি। এ ছাড়াও তিনি বেড়াতে যেতে এবং ছবি তুলতে ভালবাসেন।
অনুরাগীদের মতে, সমসাময়িক নায়কদের তুলনায় প্রিয়াংশু অনেকটাই প্রচারবিমুখ। জনপ্রিয়তার দৌড়ে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবেও অনেকে দায়ী করেন তাঁর এই প্রচারবিমুখ স্বভাবকেই।
এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়াংশু নিজেই জানিয়েছেন বাধ্য হয়েই তিনি ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কারণ এখন তারকাদের জনপ্রিয়তা অনেকটাই নির্ধারিত হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ফ্যান ফলোয়িংয়ের মাপকাঠিতে।