প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
তিনি নায়িকা। সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে অসম পর্যটনের দূত হয়েও সাধারণের জন্য কিছুই করছেন না। তিনি প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে ওঠা এই সমালোচনার জবাব দিতে এ বার হাল ধরলেন তাঁর মা মধু চোপড়া।
অসম পর্যটনের দূত হওয়ার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে সমালোচনা তুঙ্গে। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল তিনি শুধু নিতেই এসেছেন, দিচ্ছেন না কিছুই। এই অভিযোগের জবাব দিতে মধুদেবী বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে এসে দাবি করেন, প্রিয়ঙ্কা কাজের জন্য আমেরিকায় থাকলেও অসমের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এতটুকু কমেনি। মনটা এখানেই পড়ে আছে।
সরকারি মতে, প্রিয়ঙ্কা অসম পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার বিনিময়ে অন্তত দেড় কোটি টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু এক বার অসমে আসা ও অসম পর্যটনের টিভি বিজ্ঞাপনে কয়েক সেকেন্ডের বিহু ও এক লাইনের বার্তা ছাড়া তাঁর ভূমিকা এখনও তেমন চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন, ‘মেঘলা’র বিয়ে, পাত্র কে জানেন?
তবে প্রিয়ঙ্কা, তাঁর মা ও প্রযোজক শাহনাব আলমের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে অসমীয়া ছবি ‘ভগা খিড়কি’। ইংরাজিতে যার নাম হবে ‘ব্রোকেন উইনডো’। গুয়াহাটির অসম পর্যটন ভবনে গতকাল মধু চোপড়ার সঙ্গে হাজির ছিলেন ছবির প্রধান দুই অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস ও নায়িকা জেরিফা ওয়াহিদ। জেরিফা ছবির প্রধান চরিত্র টগরের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। এক গ্রাম্য, সরল মেয়ের জেদ, আধুনিক মনষ্কতা ও জয়ের অদম্য ইচ্ছাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিতে। ২০১৫ সালের পটভূমিতে ছবির গল্প লিখেছেন পরিচালক জহ্নু বরুয়া নিজেই।
অসম পর্যটন বিকাশ নিগমের অধিকর্তা কউসর জামিল হিলালি বলেন, ‘‘এই প্রথম মুম্বইয়ের দুই প্রযোজনা সংস্থা হাত মিলিয়ে অসমীয়া ছবি তৈরি করছে। প্রিয়ঙ্কা ও তাঁর মাকে ধন্যবাদ। তাঁরা অসম ও অসমীয়া ছবিকে দেশের দরবারে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছেন।’’
প্রিয়ঙ্কার ভাই সিদ্ধার্থ চোপড়া শুটিং দলের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন কাজিরাঙায় কাটিয়েছেন। ছিলেন মধুদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘আমার দেওর সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনি উত্তর-পূর্বে কর্মরত থাকার সময় এখানে এসেছি। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গেও এসেছি। অবশ্য অসম নিয়ে এত নেতিবাচক খবর চারদিকে শোনা যায় যে অসমে কাজ করার ব্যাপারে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এত অনায়াসে, সুন্দরভাবে আমাদের ছবির কাজ শেষ হয়েছে যে আমরা ফের এ বছরই অসমে ছবি করতে আসতে চাই।’’
ছবির কলাকুশলীদের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার মা মধু চোপড়া।— নিজস্ব চিত্র।
আদতে অসমের কন্যা সীমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘জহ্নুবাবুর সঙ্গে কাজ করা অনেক দিনের ইচ্ছে। আগে একটিমাত্র স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাজ করেছিলাম। তিনি আমাদের সকলকে নিয়ে এমন পরিবারের মতো ছবিটি করিয়ে নিয়েছেন যে ছবি শেষ হওয়ার পরে সকলকে ছেড়ে যেত মন চাইছিল না। কাজিরাঙার আশপাশেই বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে। সকালে খেত থেকে শাকসব্জি নিজে হাতে তুলে রান্না করেছি। হৈহৈ করে সকলে মিলে ছবি করেছি।’’
পদ্মভূষণপ্রাপ্ত জহ্নু বরুয়া প্রায় চার বছর পরে ফের ছবি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বাস্তব ঘটনার উপরে ভিত্তি করেই কাহিনি লিখেছি। শুটিং শেষ হয়েছে মাত্র ৩২ দিনে। উজানি অসমের পটভূমির এই ছবিতে অসমের বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরার পরে এক আলোর বার্তাই দেওয়া হবে। আমি আগে যৌথ প্রযোজনায় কাজ করিনি। কিন্তু মধুদেবীর মতো প্রযোজক নিজেই এত প্রাণবন্ত যে কাজের পরিবেশ খুব ভাল ছিল।’’ ছবির টাইটেল সং গেয়েছেন অনিন্দিতা পাল।
আরও পড়ুন, পদ্মাবতের পথেই কি এগোচ্ছে লক্ষ্মীবাঈ?
নায়িকা জেরিফা বলেন, ‘‘এই ছবিটি করে নিজেকে এতই পূর্ণ মনে হয়েছে যে এর পর আর সিনেমা না করলেও আক্ষেপ থাকবে না। আগে সীমাদেবীর কাছে অভিনয় শিখেছি। এই ছবি করতে গিয়ে তাঁকে মায়ের রূপে পেলাম।’’
কিন্তু প্রিয়ঙ্কা নিজে ফের কবে আসবেন অসমে? ছবির প্রিমিয়ারে তাঁকে পাওয়া যাবে তো? মধুদেবী বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাকে পেতে গেলে ছবি মুক্তির জন্য বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমরা গোটা দেশে পুজোর সময় ছবিটির মুক্তি দিতে চাইছি কারণ এই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে অসমের গ্রামের মেয়েরাও কত শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী। ছবিটি বিদেশেও নিয়ে যাওয়া হবে।’’
প্রিয়ঙ্কাকে কি কখনও অসমীয়া ছবিতে দেখা যাবে? মধু দেবী বলেন, ‘‘আপকে মুহ মে ঘি-শক্কর।’’
বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
প্রিয়ঙ্কা নিজে হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘‘জহ্নুবাবুর মতো অভিজ্ঞ পরিচালকের নেতৃত্বে আমাদের ছবি তৈরি হয়েছে। শিল্পীরা প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন। অসম পর্যটন ও অসম সরকারকে অনেক ধন্যবাদ। আমি মন থেকে আপনাদের সঙ্গেই আছি। ‘পার্পল পেবল পিকচার্স’ অসমের সঙ্গে আরও কাজ করতে চায়। আকৌ লগ পাম (আবার দেখা হবে)।’’