"গড়িয়াহাটে চৈত্রসেল শুরু হলেই আমি সেখানে। তবু যেন কলকাতা আর হালিশহরের পয়লা বৈশাখে বিস্তর ফারাক। ভিটেমাটির টান সবসময়েই বেশি। খুব ছোট্ট ছোট্ট খুশি। তাতেই কত আনন্দ!"— পয়লা বৈশাখের গল্প বলতে গিয়ে পিছু ফিরলেন রাজ চক্রবর্তী। কলম ধরলেন আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য।
রাজের মন জুড়ে ছেলেবেলার হালিশহর।
উৎসব আসে উৎসব যায়। বাঙালির এমনিতেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। এখন সেটা বহরে বেড়ে যেন তেরোশো! তার পরেও বাংলা নববর্ষ এলেই আমার হালিশহরের পয়লা বৈশাখের কথা খুব মনে পড়ে। তখনও তো বড় হইনি আমি। পয়লা বৈশাখের আগে বাড়িতে ঝাড়পোঁছ। আর সেলের জামাকাপড় কেনার ধুম। মা-বাবার হাত ধরে আমি, দিদি, বোন। নতুন বছরে বাড়ির সবার নতুন পোশাক হবেই।
সেলের পোশাক অবশ্য অনেক বড় হয়েও পরেছি। গড়িয়াহাটে চৈত্রসেল শুরু হলেই আমি সেখানে। তবু যেন কলকাতা আর হালিশহরের পয়লা বৈশাখে বিস্তর ফারাক। ভিটেমাটির টান সবসময়েই বেশি। খুব ছোট্ট ছোট্ট খুশি। তাতেই কত আনন্দ! আমাদের বাড়ির পাশে গয়নার দোকান ছিল। সেখান থেকে নিমন্ত্রণের কার্ড আসত। যে দোকান সব থেকে ভাল খাওয়াত, প্যাকেট, ক্যালেন্ডার দিত, সেই দোকানে সবার আগে পৌঁছে যেতাম। তখন ঠান্ডা পানীয় মানেই মাজা। আর প্রচুর মিষ্টির বাক্স। রাতে বাড়ি ফিরে সবক’টা খুলে খুলে দেখতাম। কোনওটায় কালো গজা, কোনওটায় নিমকি, শিঙাড়া? কোনটা আমি খাব? কোনটা দিদি, বোন?
হুল্লোড়ে মজে সপরিবার রাজ।
একটা সময়ের পরে পয়লা বৈশাখ মানে নতুন বাংলা ছবি। কার, ক’টি ছবি মুক্তি পাচ্ছে— এই হিসেব। এ বছর আমার কোনও ছবি-মুক্তি নেই। পরিকল্পনা আছে প্রচুর। কিন্তু নতুন বছরে কোনও ঘোষণাও নেই। কারণ, ৩ জুন মুক্তি পাবে ‘হাবজি-গাবজি’। আমার আপাতত ‘পাখির চোখ’ এই ছবি। তবে এই দিনে বাড়িতে বোন, দিদি, তাঁদের বাচ্চারা আসবে।
গত বছর শুভশ্রী সবাইকে নিয়ে জলসা বসিয়েছিল। সারা দিন সবাই মিলে হুল্লোড়। দুপুরে ঢালাও বাঙালি খানা। আমাদের বাড়িতে বাঙালি রান্না বরাবর সেরা। দুপুরে পাত পেড়ে খাওয়া মানেই ডাল, তরকারি, ভাজা, সুক্তো, মাছের পদ, পাঁঠার মাংস, চাটনি, মিষ্টি। এ সব আগেও ছিল আজও আছে।
এ বছরেও পয়লা বৈশাখে আমার গায়ে নতুন পাঞ্জাবি। শুভশ্রী সুন্দর করে সাজবে শাড়িতে, গয়নায়, চুলে ফুলের মালায়। ধুতি পরতে ভীষণ ভালবাসি। মেজাজ যদি রাজার মতোই থাকে, রাজ সাজবে ধুতি-পাঞ্জাবিতে। এ বছরেও শুভ আবার আসর জমাবে। আমাদের ‘ছোটে নবাব’ ইউভান তো আছেই। আসর জমাতে একাই যথেষ্ট!