কী কারণে তাঁরা সন্তান দত্তক নিয়েছিলেন? শিল্পী দম্পতি সম্প্রতি মুখ খুলেছেন স্টার জলসার রিয়্যালিটি শো-তে। জানিয়েছেন, এই শো-এর আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেই মেয়ে মহুল বলেছিল, ‘‘আমার জন্য আর কত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দেবে? গোটা জীবনটাই তো দিলে! এ বার নিজের মতো করে বাঁচো।’’
কটাক্ষ, ব্যঙ্গ উড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে গর্বিত রূপঙ্কর-চৈতালি।
সংবাদমাধ্যম জানে না, এমন নয়। কারণ, দত্তক নেওয়ার পরে রূপঙ্কর বাগচী-চৈতালি লাহিড়ি আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা ঘোষণা করেছিলেন। সাধারণ মানুষ ততটাও জানতেন না। কী কারণে তাঁরা সন্তান দত্তক নিয়েছিলেন? সে কথাও প্রকাশ্যে আসেনি কোনও দিন। শিল্পী দম্পতি সম্প্রতি মুখ খুলেছেন স্টার জলসার রিয়্যালিটি শো ‘ইস্মার্ট জোড়ি’-র মঞ্চে। জিতের সামনে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রূপঙ্কর-জায়া। দু’বার সন্তান ধারণের পরেও তাদের পৃথিবীতে আনতে না পারার কষ্ট জেনেছেন সব বয়সের দর্শক। দত্তক নেওয়ার বাকি কাহিনি চৈতালি ভাগ করলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
কী বললেন তিনি? শিল্পীর বক্তব্য, ‘‘আমার তখন পাগল পাগল দশা! মা হতে চাইছি। কিন্তু পারছি না। যে নারী এমন সমস্যায় ভুক্তভোগী, তিনিই জানেন এই যন্ত্রণা। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজেদের সন্তান আর চাই না। দত্তক সন্তানই আমাদের হোক।’’ সেই ইচ্ছে চৈতালি জানিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুরমশাই এবং শাশুড়ি মাকে। তাঁরা সানন্দে রাজি। মন খুলে আশীর্বাদও করেছেন ছেলে-বউমার এই সিদ্ধান্তকে। তার পর নির্দিষ্ট দিনে রূপঙ্কর-চৈতালির কোলে মহুল। ১৭ বছর ধরে তাঁরা সুখে-শান্তিতে এক ছাদের নীচে।
পরিবারকে পাশে পেয়েছেন। কিন্তু বাকিরা? আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী? এত সহজে ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা! কোনও বাঁকা কথা বলেননি? চৈতালির দাবি, হয়তো বলেছেন। তিনি কানে তোলেননি। পাত্তা দেননি। এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই তাঁরা আর এগোতে সাহস পাননি। চৈতালির কানে এসেছে অনেকে বলেছেন, রূপঙ্করের নিজের সন্তান হলে সেই সন্তান আরও গুণী হত। শুনে হো হো করে হেসে পুরোটা উড়িয়ে দিয়েছেন তারকা দম্পতি। ফলে, কোনও প্রভাব পড়েনি তাঁদের মা-বাবা-মেয়ের সংসারে।
এ ভাবে মহুলের জন্য নিজের অনেক ইচ্ছে, অভিনয়ের শখ, কাজ ইত্যাদি এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তাঁর মা। একটু একটু করে মহুল বড় হয়েছে। আস্তে আস্তে জেনেছে, সে তার মা-বাবার ‘নিজের মেয়ে’ নয়! শুনে খুব ধাক্কা খেয়েছিল? চৈতালির কথায়, ‘‘ধাক্কা মানে! ভেঙে পড়েছিল। প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল আমার উপরে। কথায় কথায় রেগে যেত। ধরে ধরে মারত। তার পর আমায় জড়িয়ে ধরেই হাউ হাউ করে কাঁদত। লম্বা কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে মহুল আজ এত হাসতে শিখেছে।’’
বাগচী পরিবারের সেই হাসি-কান্না মেশানো গল্প আজ সবার সামনে। রিয়্যালিটি শো-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে সব বলতে গিয়ে অস্বস্তি হয়েছিল? দর্শকেরা যদি ভাবেন, পুরোটাই শো-এর টিআরপি বাড়ানোর কারসাজি? শিল্পী-জায়ার দাবি, শো-এর উপস্থাপনা এত সুন্দর যে, বলতে গিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। বরং বলতে পেরে তিনি যেন হাল্কা হয়েছেন। যুক্তি, ‘‘আমার অনুমতি নিয়েই তো প্রশ্ন করা হয়েছে। না জানিয়ে তো কিছু করা হয়নি! ফলে, এই নিয়ে কোনও অস্বস্তি নেই আমার। আমরা সোজাসাপ্টা কথা ভালবাসি। নিজেদের লুকোতে জানি না। শো-তেও সেটাই করেছি।’’
কেমন লাগছে রিয়্যালিটি শো-এ যোগ দিয়ে? এই ধরনের মঞ্চে সস্ত্রীক রূপঙ্কর আসবেন, এটা বোধ হয় দর্শকদেরও কল্পনার বাইরে ছিল। জবাব দিয়ে গিয়ে ফের এক পশলা বৃষ্টি। ভেজা গলায় চৈতালি শো-এর খেলাধুলো, সঞ্চালক জিৎ, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের এই আয়োজনের প্রশংসা করেছেন। তার পরেই ফাঁস, তিনি এসেছেন মেয়ের চাপে। এই শো-এ যোগদানের আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেই মহুল তাঁকে বলেছিল, ‘‘আমার জন্য আর কত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দেবে? গোটা জীবনটাই তো দিয়ে দিলে! এ বার নিজের মতো করে বাঁচো।’’