‘‘শেষ পর্যন্ত যে তকমাগুলো মুছেছে, তাতেই আমি খুশি’’, বললেন পায়েল।
একটা সময় ছিল, পায়েল দে মানেই এক ঘরোয়া মেয়ে! এক নামী বস্ত্র বিপণির প্রচার-মুখ হয়ে উঠে আসা শহরের 'সেরা পাত্রী'। দোকানে, পায়েলের কাছে ফোনের পর ফোন। বাড়িতে বিবাহযোগ্য ছেলে রয়েছে। পায়েলকে কি পাওয়া যাবে? সেই ছাপ মুছতে না মুছতেই নতুন পরিচয়, পায়েল সেরা মা দুর্গা! অভিনেত্রীর সারা অঙ্গে যেন শুধুই দেবী দেবী ভাব। দিনের পর দিন এই আরোপিত পরিচয়গুলোর সঙ্গে লড়তে লড়তে সেই পায়েলই বর্তমানে একাধারে ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের সাংবাদিক ‘উজ্জয়িনী’, রহস্য-রোমাঞ্চ ‘মুখোশ’ ছবির ‘রাই’। খুব শীঘ্রই তাঁকে দেখা যাবে সায়ন্তন ঘোষালের নতুন হইচই ওয়েব সিরিজ 'ইন্দু'-তে। মিসিং স্ক্রু-র ছাতার নীচে তৈরি এই সিরিজে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ‘কৌশানী’ বা ‘কুশি’।
আফসোস মিটল? ফোনের ও পারে পায়েল উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘তকমাগুলো মুছতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে মুছেছে, তাতেই আমি খুশি। নানা ধরনের কাজ পাচ্ছি। যা যে কোনও অভিনেতার স্বপ্ন। সত্যিই ভাল লাগছে।’’ অভিনেত্রীর আরও দাবি, কেবল দেবী সাজতে সাজতে এক সময় খুব মনখারাপ হত তাঁর। তিনি যে অভিনেতা, সেটাই যেন ভুলে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি। ‘পায়েল’, ‘রাই’, ‘কুশি’ সবার চোখ খুলে দিচ্ছে। এবং এই সব কিছুর জন্যই তিনি কৃতজ্ঞ লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। ‘‘তিনি সহযোগিতা না করলে এত কাজ একসঙ্গে করতে পারতাম না’’, বললেন পায়েল। এও জানালেন, তিনটি তিন ধরনের মাধ্যম। যেখানে তিন ভাবে অভিনয় করতে হয়। কাজগুলো করতে গিয়ে তাঁর ভিতরে জমে থাকা অভিনয়ের ‘খিদে’ একটু একটু করে যেন কমছে।
‘‘অভিনেতার কাছে সব চরিত্রই সন্তানসম। মনে হয়, তিনটি চরিত্র তিন ভাবে বলবে, পায়েল অভিনয়ও পারে।’’
এটি পায়েলের জীবন কাহিনি। চরিত্র ‘কৌশানী’র সঙ্গে যার কোনও মিল নেই। ‘কুশি’ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ‘উজ্জয়িনী’র বক্তব্য, "কৌশানী বাড়ির বড় মেয়ে। বিয়ের তিন বছর যেতে না যেতেই একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাকে। কুশি মানসিক ভাবে অসুস্থ, জীবন সম্পর্কে তার ধারণাও স্পষ্ট নয়। নিজের মেজ ভাই (বুকাই) তাকে কিছুটা আগলে রাখে। তার বৌ-এর সঙ্গেই একমাত্র কুশি খোলা মনে মিশতে পারে। কিন্তু কেন মানুষের প্রতি ওর এই আতঙ্ক? সেই গল্পই বলবে 'ইন্দু'।" ‘কুশি’ হয়ে উঠতে গিয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে পায়েলকে। এই ধরনের বিশেষ মানুষদের কাছ থেকে দেখতে হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। এঁদের নিয়ে লেখা বই পড়তে হয়েছে। ‘‘বাকিটা বুঝিয়ে দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার সাহানা দত্ত। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গেলে অভিনেতাকে আলাদা করে কিছু করতে হয় না। সাহানাদিই করিয়ে নেন’’, মত ‘কুশি’র।
আপাতত পায়েলের হাতে তিন তুরুপের তাস, ‘উজ্জয়িনী’, ‘রাই’, ‘কৌশানী’। কোন তাস তাঁর গা থেকে ‘যোগ্য পাত্রী’, ‘দেবী দুর্গা’র তকমা সরিয়ে শুধুই ‘অভিনেত্রী’র সম্মান এনে দেবে? পায়েলের জবাব, ‘‘কী করে বলি! অভিনেতার কাছে সব চরিত্রই সন্তানসম। মনে হয়, তিনটি চরিত্র তিন ভাবে বলবে, পায়েল অভিনয়ও পারে।’’