দেব
প্র: ‘গোলন্দাজ’ ছবিতে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্র কি এখনও অবধি কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র?
উ: অনেক কঠিন চরিত্রের মধ্যে একটা তো বটেই।
প্র: চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি কেমন ছিল?
উ: ওঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ভালমতো পড়াশোনা করতে হয়েছে। যতক্ষণ না ওঁর জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়, ততক্ষণ অবধি ওই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা যায় না। ১৮৬০-’৭০ এর সময়কাল দেখানো হয়েছে ছবিতে। ওই সময়ে ফুটবল খেলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ। যে সময়ে ময়দানে কোনও ভারতীয়ের প্রবেশের অনুমতি ছিল না, তখন প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি ক্লাব খুলেছিলেন। সব সময়ে মাথায় ছিল, আমার হাঁটাচলা, তাকানো, সংলাপ বলার মধ্য দিয়ে চরিত্রটা যেন ফুটে ওঠে। আমি যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে না পারি, ছবিটা দাঁড়াবে না। ট্রেলার-গান দেখে দর্শকের মনে হচ্ছে, দেব নয়, নগেন্দ্রকেই দেখছেন।
প্র: দিনকয়েক আগেও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যেমন ছবি চাইতেন, তেমন প্রস্তাব দেওয়া হত না। তবে কি এসভিএফ ও দেবের দূরত্ব ঘুচল?
উ: দেব বা এসভিএফ কখনও বলেনি, একে অন্যের সঙ্গে কাজ করবে না। ওদের কিছু ছবির প্রস্তাব ভাল লাগেনি, সেগুলো করিনি। যেটা ভাল লেগেছে, করেছি। শেষ পর্যন্ত যে ছবি করা হয়, সেটা নিয়ে খবর হয়। তার মানে অফার আসেনি, তা নয়। আর ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পরে এখনও অবধি ভেঙ্কটেশের বড় বাজেটের ছবি ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের জন্য প্রথম ফোন আমার কাছেই আসে। এটা গর্ব করে বলতে পারি। উল্টো দিক থেকে বলতে পারেন, ওরাও জানে দেবকে ছাড়া এই ছবি হবে না।
প্র: অনেক বছর পরে এ বার পুজোয় দেব বনাম জিৎ। বাংলা ছবির মার্কেট ছোট হলেও, দুই তারকার মধ্যে সমঝোতা তৈরি হয় না কেন?
উ: দেবের সঙ্গে জিৎ আসছে কি না, এটা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। দর্শক সিনেমা হলে আসছেন কি না, সেটা বেশি জরুরি। গত বছর পর্যন্তও মানুষ রাস্তায় বেরোতে সাহস পাচ্ছিলেন না। ভয় কাটিয়ে মানুষ হলে আসুন, সেটাই আসল। না হলে ইন্ডাস্ট্রি মরে যাবে।
প্র: বাংলার দুই সুপারস্টারের ছবি একই দিনে মুক্তি পেলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ হয় কি?
উ: এ বারের লড়াই কে ক’টা শো পেল, সেই অঙ্কের নয়। সব বয়সের মানুষকে হলে টেনে আনাই চ্যালেঞ্জ। আমার বা জিতের বা অঙ্কুশের ছবি দিয়ে সে ভয় কাটানো গেলে ক্ষতি নেই। সত্যি কথা বলতে, আমার ছবির ধারা পাল্টে ফেলেছি, আমার দর্শকও বদলেছেন খানিকটা। তাই জিতের ছবির সঙ্গে রেষারেষি নেই।
প্র: গত বিধানসভা নির্বাচনে টলিউডের তারকারা কি রাজনীতিক দেবের সাফল্য দেখেই এসেছিলেন?
উ: এটা বলতে পারব না। নিজের কথা বলতে পারি। কে কেন এসেছেন, সেটা আমার জানার কথাও নয় (হাসি)। যদি তাঁরা কিছু শিখতে পারেন, তবে ভালই।
প্র: কিন্তু তাঁদের আসার উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে...
উ: সেই উত্তর তাঁরাই দিন।
প্র: দলবেঁধে শিল্পীদের রাজনীতিতে আসা নিয়ে কী বলবেন?
উ: রাজনীতিতে এলাম, জিতলাম বা হারলাম— এটাই শেষ নয়। মানুষের মধ্যে থাকতে হবে, কাজ করতে হবে। সেই মানসিকতার অভাব রয়েছে এখন। সকলে রেজ়াল্ট দেখে। তার পিছনে পরিশ্রমটা দেখে না। দেব যদি সাফল্য পেয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে তার নিজস্ব কাজের একটা ধারা রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সে আগেই বলে, মাস্ক পরতে। সৌজন্যের রাজনীতির ক্ষেত্রে আমি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পেরেছি বলে আমার মত।
প্র: বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে যোগদান কী ভাবে দেখছেন?
উ: বাবুলদা যখন বিজেপিতে ছিলেন, তখনও ভাল বন্ধু ছিলেন। এখনও বন্ধু। আগামী দিনে উনি যা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার পরেও আমার ভাল বন্ধু থাকবেন। উনি কেন তৃণমূলে, সেটা দল আর বাবুলদা বলতে পারবেন।
প্র: মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ছোট পর্দায় কাজ করলেন। শুটিংয়ের ফাঁকে রাজনীতি নিয়ে কথা হত না?
উ: যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা জানেন, আড্ডার মধ্যে রাজনীতি রাখি না। মিঠুনদা আমার প্রযোজনার আগামী ছবিতে কাজ করছেন। আমি রাজনীতি গায়ে মাখি না, কাউকে জ্ঞান দিতেও যাই না। নিজস্ব বিবেকবুদ্ধি দিয়ে প্রত্যেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা ভুল প্রমাণ করা আমার কাজ নয়।
প্র: কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে যে বলেছেন, ‘রাজনীতি জটিল হয়ে গিয়েছে...’
উ: হ্যাঁ, রাজনীতিতে এখন আর ‘নীতি’ নেই। হিন্দু-মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হচ্ছে। সকলেই ক্ষমতা চাইছেন। হেরে গেলে দলবদল করছেন। আর শুধু অভিনেতাদের এ ক্ষেত্রে দোষ দিয়ে লাভ নেই। পোড়খাওয়া রাজনীতিকরা কী করছেন, দেখুন! পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দিয়ে পরের দিন বিজেপি হেড কোয়ার্টার্সে চলে যাচ্ছেন!
প্র: অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরোধের মূল কারণ কী?
উ: ফেসবুকে উনি লিখেছিলেন, ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’তে রাজা-রানির চরিত্রগুলি আসলে বিজেপির রূপক। সেটা নিয়ে আমার আপত্তি ছিল। আমি কখনও কোনও দলের নাম নিইনি। প্রযোজক হিসেবে জানি, ছবির মার্কেটিং কেমন হবে। রাজনৈতিক ভাবে ছবিকে ব্যবহার করতে দেব না আমি। আপত্তি দু’জনেরই রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমঝোতাও হয়ে গিয়েছে।
প্র: ছেলে হওয়ার পরে নুসরত জাহানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন?
উ: হ্যাঁ, জানাব না কেন?