‘‘জন্মদিনের দু’দিন আগে আমার প্রথম ছবি মুক্তি পাবে, জীবনের সেরা উপহার পেতে চলেছি।’’
ধারাবাহিক ‘পটল কুমার গানওয়ালা’-য় চুল কেটে মেয়ে থেকে ছেলে সাজতে হয়েছিল। অংশুমান প্রত্যুষের ‘নির্ভয়া’ ছবিতে তিনিই ধর্ষিত, অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী! কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং হিয়া দে-র কাছে? উত্তরে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী--
প্রশ্ন: সাত বছরে পটল কুমার কি বড় হয়ে গিয়েছে?
হিয়া: (ফোনের ও প্রান্তে হাসি) খুব বড় নয়, তবে আগের তুলনায় বড় হয়েছি। প্রথম অভিনয়ের সময় সাত বছরের ছিলাম। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। আগামী ২১ নভেম্বর আমি চতুর্দশী!
প্রশ্ন: ১৯ নভেম্বর ‘নির্ভয়া’ মুক্তি পাচ্ছে। জন্মদিনের ফেরত উপহারটাও বেশ বড়সড়?
হিয়া: একেবারে ঠিক কথা। আমি প্রচণ্ড খুশি। জন্মদিনের দু’দিন আগে আমার প্রথম ছবি মুক্তি পাবে। সারা জীবনের সেরা উপহার পেতে চলেছি।
প্রশ্ন: আপনার চরিত্র সম্বন্ধে বলবেন?
হিয়া: আমার চরিত্রের নাম পিয়ালি। কিশোরী মেয়ে। ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়বে। এর বেশি আপাতত আর কিছু বলতে পারব না।
প্রশ্ন: চরিত্র সম্বন্ধে শোনার পরেই কী মনে হয়েছিল?
হিয়া: বড় চ্যালেঞ্জ। একটু দ্বিধাতেও ভুগেছি এক দম শুরুতে। তার পরে মনে হয়েছে, আমায় করতে হবে। কারণ, এই ধরনের চরিত্র চট করে পাওয়া যায় না। চিত্রনাট্য শোনার পরে মনের জোর আরও একটু বাড়ল। মা অবশ্য জানতে চেয়েছিলেন, পারবি তো? বলেছিলাম, ঠিক পারব।
প্রশ্ন: প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পিয়ালি হয়ে উঠতে গিয়ে নিজে কী কী করলেন?
হিয়া: পরিচালক যা বলেছেন, যে ভাবে দেখিয়েছেন অক্ষরে অক্ষের মানার চেষ্টা করেছি। যখনই কোনও অভিনয়ে আটকে গিয়েছি, সব্যসাচী চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার, শ্রীলেখা মিত্রের মধ্যে কেউ না কেউ দেখিয়ে দিয়েছেন। আর আমি ঠিক করেই নিয়েছিলাম, ক্যামেরার সামনে যেমন অনুভূতি আসবে সেটাই তুলে ধরব।
প্রশ্ন: এমন চরিত্র করতে কী প্রস্তুতি নিলেন?
হিয়া: আমি প্রচুর ছবি দেখি। ধারাবাহিকে কাজ করলেও সিনেমা দেখতে ভালবাসি। তাই পিয়ালি চরিত্রে অভিনয়ের আগে এই ধরনের চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের অভিনয় দেখেছি। যদিও এই বয়সের কোনও চরিত্র দেখিনি। তবে ছবি দেখতে দেখতেই মোটামুটি আন্দাজ করে নিয়েছি, আমায় কী করতে হবে।
‘‘ঠিক করেই নিয়েছিলাম, ক্যামেরার সামনে যেমন অনুভূতি আসবে সেটাই তুলে ধরব।’’
প্রশ্ন: প্রথম ছবিতেই বাঘা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
হিয়া: ওঁরা বুঝতে দেননি ওঁরা বিখ্যাত। ভীষণ ভালবেসে সবাই আপন করে নিয়েছিলেন। প্রিয়াঙ্কাদি খুবই মজার। বাকিরাও তাইই। কাজ করতে ভালই লেগেছে। আরও ভাল লাগত, যখন ওঁরা ধরিয়ে দিতেন। দরকারে নিজেরা অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন।
প্রশ্ন: ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার মতো দৃশ্যে অভিনয়, অস্বস্তি হয়েছে?
হিয়া: শ্যুটিংয়ের সময় একটা কথাই মাথায় থাকত, অভিনয় যেন নিখুঁত হয়। তাই চারপাশে কে দেখল, কী বলল? কিচ্ছু মাথায় রাখতাম না। এ ভাবেই আমার অংশের দৃশ্য অভিনয় করেছি।
প্রশ্ন: এই ধরনের চরিত্র সাধারণত মনের উপরে খুবই চাপ তৈরি করে।আপনার তেমন কিছু হয়েছে?
হিয়া: অভিনয়ের সময়টুকু ‘পিয়ালি’-র কথা ভাবতামই না। তাই মনে কোনও চাপ পড়েনি। অংশুমান প্রত্যুষ বলে দিয়েছিলেন, সব সময় ইতিবাচক থাকতে। পিয়ালিকে ভুলে থাকতে। নইলে সত্যিই হয়তো সারাক্ষণ মনখারাপে ভুগতাম।
‘‘মাধ্যমিকের পর পরিচালনা, প্রযোজনা নিয়ে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই।’’
প্রশ্ন: আপনিও বড় হচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য বাড়তি কোনও সতর্কতা নেন?
হিয়া: সব সময় চোখ-কান খোলা রাখি। একমাত্র পরিবারের লোকজন ছাড়া বাকিদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করি। লোক বুঝে মিশি। মা-বাবাও অনেক কিছু বলে বা বুঝিয়ে দেন। তার পরেও বলব, মেয়েদের ছোট থেকেই ‘ভাল স্পর্শ’, ‘খারাপ স্পর্শ’ সম্বন্ধে সজাগ করে দেওয়া তাদের পরিবারের কর্তব্য। এটা হলে মেয়েরা দ্রুত পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্বন্ধে সজাগ থাকতে শেখে।
প্রশ্ন: হিয়ার পড়াশোনা বেড়েছে। পাশাপাশি অভিনয়। দুটো দিক এক সঙ্গে সামলাতে পারছেন?
হিয়া: সত্যি বলব? একেক সময় খুব চাপ লাগে। ‘ফেলনা’ ধারাবাহিকে নিয়মিত অভিনয়। তার সঙ্গে বড় পর্দায় কাজ। সারা দিনের পরে ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়তে চাইত। এমনও হয়েছে, একেক দিন কম পড়েছি। কিন্তু পরপর দু-তিন দিন এ রকম মনে হলে নিজেকেই নিজে শাসন করেছি। জোর করে পড়ায় মনোযোগ দিয়েছি। তাতে কাজ হয়েছি। জানেন, আমি মাধ্যমিকের পর পরিচালনা, প্রযোজনা নিয়ে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। বড় হয়ে পরিচালক হব বলে।
প্রশ্ন: অভিনয় করবেন না?
হিয়া: এখন করব। বড় হয়ে করব না। ‘পটল কুমার গানওয়ালা’-র পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার যখন পরিচালনা করতেন, দেখে ভীষণ ভাল লাগত। মনে হত, বড় হয়ে আমিও ওই রকমই হব। সেই ইচ্ছে রয়েই গিয়েছে। স্বর্ণকাকুর মতো পরিচালনা করার।
প্রশ্ন: ছোট পর্দা না বড় পর্দা কোনটা বেশি টানছে?
হিয়া: দুটোই। আমি উঠেছি ছোট পর্দা থেকে। জনপ্রিয়তা ধারাবাহিকের হাত ধরে। সদ্য বড় পর্দায় কাজ করলাম। তাই কাউকেই ছাড়তে রাজি নই। কোনওটাকেই অবহেলা করতে পারব না। তাই দুই পর্দাই ভাল আমার কাছে।
প্রশ্ন: ‘পটল কুমার গানওয়ালা’-য় চুল কেটে ছেলে হতে হয়েছিল। এখন ১৪ বছরেই অন্তঃসত্ত্বার ভূমিকায় অভিনয়। কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং?
হিয়া: ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময় চুল কেটে খুবই কষ্ট হয়েছিল। পরে যখন বুঝেছিলাম পটল কুমার হতে গেলে ওটা দরকার, আর মনখারাপ করেনি। ‘পিয়ালি’ ভীষণ শক্ত চরিত্র। তাকে বুঝতে, নিজের মধ্যে বসিয়ে নিতে পরিশ্রম করতে হয়েছে অনেক। প্রথম প্রথম তাই খুব ভয় করত। ‘পিয়ালি’কে আমি মনে হয় কোনও দিনই ভুলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় অভিনেতা বা অভিনেত্রী কে? পরিচালনায় এলে কোন ধারার ছবি বানাবেন?
হিয়া: রানি মুখোপাধ্যায়কে ভীষণ ভাল লাগে। ভাল লাগে ওঁর ছবি ‘মর্দানি’। ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই তো ‘পিয়ালি’ করতে রাজি হয়েছি। বড় হয়ে বলিউডে ছবি পরিচালনার খুব ইচ্ছে।