parambrata chatterjee

Abhijaan: ঝলক দেখেই লোকে ছেঁকে ধরেছিল, কেন কিউ ‘সত্যজিৎ রায়’! ‘অভিযান’ নিয়ে অকপট পরমব্রত

পরমব্রতর কথায়, ‘‘সৌমিত্র জেঠু আমাদের রীতিমতো দৌড় করাতেন! চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি কাজ করতেন না। ওঁর শরীর দিত না। আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো নিজের জীবনী চিত্র বলে কিছুটা ছাড় দেবেন। সেটা তিনি করেননি। কালেভদ্রে হয়তো পাঁচ ঘণ্টা শ্যুট করেছেন। ফলে, সারাক্ষণ ত্রস্ত থাকতে হত, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। দুটো ক্যামেরা তো ছিলই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ১৯:১১
Share:

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

বাংলা নববর্ষ আসতে দেরি নেই। বাঙালি সিনেপ্রেমী দর্শকদের উন্মাদনারও শেষ নেই।

ষোলো আনা বাঙালিয়ানার প্রতিমূর্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নতুন ভাবে ফিরছেন ১৫ এপ্রিল। ‘অভিযান’ ছবির হাত ধরে। বাংলা বিনোদন দুনিয়াকে এমনই আশ্বাস দিয়েছেন পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি-মুক্তির আগে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, ছবি নিয়ে অজস্র কৌতূহল, প্রশ্নের মুখোমুখি। বুধবার, ছবি নিয়ে এক ফেসবুক লাইভে ফের তেমনই অভিজ্ঞতা পরিচালকের। এক দর্শকের প্রশ্ন, সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকায় অভিনেতা বাছার সময় তাঁকে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

Advertisement

কী বললেন প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা? পরমব্রত অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘‘বাঙালির কাছে সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তমকুমারেরা এখনও আবেগ। এক চুল এ দিক-ওদিক সহ্য করেন না কেউ। ঝলক দেখেই লোকে ছেঁকে ধরেছিল, কেন কিউকে সত্যজিৎ রায় করা হয়েছে?’’ পরিচালকের দাবি, তিনি এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কারণ, তিনি জানেন, কোনও দু’জন মানুষকেই হুবহু এক রকম দেখতে হয় না। যেমন, যিশু সেনগুপ্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অল্পবয়সি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অথচ তাঁর সঙ্গে কিংবদন্তির চেহারায় কোনও মিল নেই। একই ভাবে ত্রিধা চৌধুরীকেও শর্মিলা ঠাকুরের মতো দেখতে নয়। কিন্তু পরমব্রতর ছবিতে তিনিই বাংলা-বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর চরিত্রে। একই ভাবে কিউকে বাছার কারণ, একমাত্র তাঁর সঙ্গেই সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে বেশি মিল। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা কিউকে দেখে থমকে গিয়েছেন পরমব্রতই।

পরমব্রতের নেপথ্যে পর্দা জুড়ে ‘অভিযান’ ছবির লোগো। তাতে সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’ ছবির লোগোর ছায়া স্পষ্ট। যে নাম ইতিমধ্যেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনীপঞ্জিতে গুরুত্বপূর্ণ ছবির নাম হিসেবে যুক্ত, তাকেই কেন বাছলেন তিনি? এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল পরিচালকের কাছে। পরমব্রতের মতে, নামটা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। পাঁচের দশক থেকে অভিনয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ব্যাপ্তি একুশ শতক পর্যন্ত। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিশাল ব্যাপ্তি যে কোনও ব্যক্তিত্বের জীবনেই অভিযান-সম। পাশাপাশি, বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় সৌমিত্রবাবু বিশেষ মাত্রা যোগ করে গিয়েছেন। সেটিও টলিউডের ইতিহাসে এক বিরাট অভিযান। সব দিক বিচার করে তাই এই নামটিই তিনি বেছেছেন— ব্যাখ্যা পরিচালকের।

Advertisement

গল্পের ছলে পরমব্রত আরও জানিয়েছেন, মূল চিত্রনাট্য লেখার আগে তিনি আড়াই মাস ধরে টানা আড্ডা দিয়েছেন তাঁর ‘সৌমিত্র জেঠু’র সঙ্গে। বর্ষীয়ান অভিনেতার বলা প্রতিটি কথা, অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন আদতে মানুষটি কেমন। জেনেছেন, তাঁর সঙ্গে উত্তমকুমারের সম্পর্ক আসলে কেমন ছিল? দেখেছেন, ব্যক্তিগত জীবনে অত বড় অভিনেতার কপালেও রাগে, দুঃখে, বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়ে। সেই সব কিছুকে ভিত্তি করে নিজে চিত্রনাট্যের খসড়া তৈরি করেছেন। কাজ করতে করতে কখনও সৌমিত্রবাবু পরমব্রতকে খেই ধরিয়ে দিয়েছেন? পরামর্শ দিয়েছেন? এ বারেও পরিচালক অনর্গল, ‘‘অবশ্যই, অনেক ক্ষেত্রে তিনি আমায় ধরিয়ে দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন। আমি সেগুলো নিয়েওছি।’’ পরমব্রতর আশা, আগামী প্রজন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে খুঁটিয়ে চিনতে চেয়ে হয়তো তাঁর ‘অভিযান’কেই আঁকড়ে ধরবে।

পাশাপাশি তিনি আরও একটা জিনিসও কোনও দিন ভুলবেন না। পরমব্রতর কথায়, ‘‘সৌমিত্র জেঠু আমাদের রীতিমতো দৌড় করাতেন! চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি কাজ করতেন না। ওঁর শরীর দিত না। আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো নিজের জীবনী চিত্র বলে কিছুটা ছাড় দেবেন। সেটা তিনি করেননি। কালেভদ্রে হয়তো পাঁচ ঘণ্টা শ্যুট করেছেন। ফলে, সারাক্ষণ ত্রস্ত থাকতে হত, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। দুটো ক্যামেরা তো ছিলই। আমার আই ফোনকেও ক্যামেরা মোডে ব্যবহার করতাম। যদি কোনও দৃশ্য মিস করে যাই!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement