পরমা।
কয়েক দিন আগে ফেসবুক পেজে গায়িকা পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্তব্যের জন্য ট্রোলড হন। পরমা লিখেছিলেন,“গান গাওয়ার জন্য যেমন সুরেলা কণ্ঠের প্রয়োজন, নাচ করার জন্যও তেমনি স্লিম ফিট চেহারা থাকা বাঞ্ছনীয়। থপ থপ করে চর্বিওয়ালা থলথলে বডি হাত নাড়লে সেটা আর যাই হোক খুব কুৎসিত লাগে দেখতে।” সঙ্গীতশিল্পী পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য নিয়ে ঝড় বয়ে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটাগরিক থেকে সেলিব্রিটি, সকলের রোষের মখে পড়েছেন তিনি। বাধ্য হয়েছেন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লক করতে।পরমা যে দিন রাতে এই পোস্ট করেন তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আসতে থাকে বিরূপ মন্তব্য। কেউ লেখেন, “নিজেকে উনি লতামঙ্গেশকর ভাবেন? আসলে তো মাচার শিল্পী। লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুইজ করে স্পটলাইটে এসেছেন!” কেউ পোস্টে লেখেন, “এই যে ধরতি কা বোঝ হয়ে বেঁচে আছিস তোর রুচিতে বাঁধে না?”
আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে সোমবার এ বিষয়ে প্রথম কথা বলতে গিয়ে পরমা বললেন, “আমি কিন্তু সেদিন রাতেই কিছুক্ষণের মধ্যে আর একটা পোস্ট করে বলি, ‘আমি থলথলে চর্বি আর নাচের ভিডিয়ো নিয়ে যে পোস্ট করেছি সেটার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি যে মন্তব্য করেছি তার প্রেক্ষিত না বলেই করেছি। এটা আমার অন্যায়।’’
পরমা জানান, ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও মানুষ তাঁকে ক্ষমা করেনি। বরং তাঁর বক্তব্যকে ঘিরে তাঁর প্রতি নানা পোস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষ উগরে দিয়েছে মানুষ।পরমা বলেন, তাঁর ওই নাচের ভিডিয়োর মন্তব্যে প্রথম যিনি পোস্ট করেন তিনি পরমা মাইতি। সঙ্গীতশিল্পী পরমা শুধু ফেসবুকেই নয়, ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকেরকাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
পরমা বলেন, চারিদিকে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা দেখতে দেখতে তিনি অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, মানুষ কী করে নাচ-গানের ভিডিয়ো করছে এখন? “আমি আমরি-র পাশেই থাকি। বারান্দায় দাঁড়ালেই রোজ দেখি সারি সারি মানুষ দাঁড়িয়ে খাবারের জন্য। আমার পাশের বাড়ির বাসন্তীদির কাজ চলে গিয়েছে। ওকে বলেছি, তুমি আমার সঙ্গে কাজ কর। রোজ মৃত্যুর খবর। তার মধ্যে যদি রোজ আমার মেসেঞ্জারে ৩০টা করে ভিডিয়ো আসে, আমাকে বলা হয় ফেসবুকে দেখে কমেন্ট করুন, আমি বিরক্ত হব না? থলথলে চর্বি আমার বিরক্তির এক্সপ্রেশন।আরে, আমি নিজেই তো মোটাসোটা! আমি নাচলেও তো চর্বি দেখা যাবে! আমি কেন বডি শেমিং করব?” উত্তেজিত পরমা।
ওই নাচের ভিডিয়োর মন্তব্যে প্রথম যিনি পোস্ট করেন তিনি পরমা মাইতি, তাঁকে মেসেঞ্জারে কল করে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছিলেন গায়িকা পরমা
তবে তিনি অবাক হয়েছেন, ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও মানুষ তাঁকে যা নয় তা-ই বলে গিয়েছে। তিনি বলেন, শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত ফেসবুকে লিখছেন, “ধরে নিন, একজন মানুষ (প্রকৃত অর্থে কিনা জানি না) রেপ করল বা অ্যাসিড ছুড়ে মারল। তাতেই ক্ষান্ত দিল না। লোকে যখন তার প্রতিবাদ করল তখন সকলের কাছে জাস্টিফাই করল কেন সে এমন করেছে…! কেন সে এমন করেছে, কেন তার রাগ হয়েছিল। আর সেই রাগের বশবর্তী হয়ে সে এমনটা করে ফেলেছে! লোকে সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাধুবাদ জানাল!...আমার কথাটি ফুরল।”
একদা বন্ধু শুচিস্মিতা ওই পোস্টের পর সরব হয়েছিলেন পরমার বিরুদ্ধে
এরকম অজস্র কমেন্টে জেরবার পরমা। কয়েকদিনের এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে তিনি বুঝেছেন, তাঁর ক্ষমা চাওয়ার চেয়ে তাঁকে হেনস্থা হতে দেখে মানুষ সবচেয়ে খুশি হয়েছে।মানুষ আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ আনলে পরিচালক সুব্রত সেন অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, “বিষয় আদালত অবধি যেত না। কারণ কারও নাম করে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা হয়নি। বিচার হয়েছে জনতার দরবারে।”
সঙ্গীতশিল্পী উপল সেনগুপ্তও মানসিকভাবে পরমার পাশে থেকেছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতেই পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক হাত নিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। নাম না উল্লেখ করেও ফেসবুকেই স্বস্তিকা লিখেছেন, “এই সময়ে দাঁড়িয়েও এগুলো হচ্ছে! এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে চারদিকে এত হাহাকার, এত মৃত্যু, অবসাদ, মানুষ একা আটকে পড়ে আছে, বাবা-মায়ের মৃত্যুর সময়েও মানুষ পাশে থাকতে পারছে না, নিজেদের খুশি করা কিংবা তার চেয়েও বড় কথা, উন্মাদ হওয়া থেকে বাঁচার জন্যে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছে…। সেখানে এত বিদ্বেষ কিসের? একে অন্যের প্রতি এত রাগ, অপমান কেন? এরা শিল্পী? এমন ছোট কদর্য মন নিয়ে শিল্পী হওয়া যায়? কী লজ্জার!”
ক্ষমা চেয়েছেন পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বস্তিকার পোস্টের প্রসঙ্গ আনতেই পরমা বললেন, “ওকে কবে থেকে চিনি। ও কদলীবালা, আমি ওর গলায় গান গেয়েছি। ও আমায় সরাসরি ফোন করতে পারত!”
নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। ৫০ হাজার ফলোয়ার সরিয়ে নিজের বন্ধুদের নিয়ে ফেসবুকে আছেন এখন পরমা।
পরমা বুঝেছেন, এই অসময়ে প্রকৃত বন্ধু পাওয়াটাই ভীষণ জরুরি!