অর্জুন-পাওলি
সানাইয়ের সুমধুর সুর, রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাস, শাঁখ-উলুর সঙ্গত, মালাবদল-শুভদৃষ্টি-সিঁদুরদান... মানে আর পাঁচটা বাঙালি বিয়ের মতোই। সোমবার টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাওলি দাম বিয়ে করলেন গুয়াহাটি নিবাসী পাত্র অর্জুন দেবকে। তবে সেলেব বিয়ে বলতে যা বোঝায়, তার চেয়ে একটু আলাদা ছিল পাওলি-অর্জুনের বিবাহ আসর। জৌলুস ছিল, কিন্তু চাকচিক্যের বাহুল্য ছিল না। শুরু থেকে শেষ, বাঙালিয়ানাই এই বিয়ের ইউএসপি।
মেহেন্দি...
শনিবার থেকেই শুরু হয়েছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিক তোড়জোড়। পাওলির লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ওই দিন দুপুরে বসেছিল মেহেন্দির আসর। বলিউ়়ড ও টলিউডের গানের তালে পা মিলিয়েছিলেন কনে। পাওলি সেজেছিলেন অভিষেক রায়ের লেহঙ্গাতে। বরের বাড়িতেও ছিল একই তোড়জোড়। মেহেন্দির সঙ্গে ওই দিনই অর্জুনের গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠানও সেরে ফেলা হয়। আর রাতে সিসিএফসিতে ছিল পার্টি।
লেক গার্ডেন্সের বাড়িতেই বসেছিল পাওলির বিয়ের ভোরের অনুষ্ঠান। সকাল-সকালই চলে আসে গায়ে হলুদের তত্ত্ব। সেখানে আশীর্বাদ হিসেবে পাওলিকে দেওয়া হয়েছিল সোনার নেকলেস।
বর-কনের সাজকাহন
দিল্লির ডিজাইনার স্টোর থেকে কেনা লাল মিনাকারি কাজের বেনারসিতে সেজেছিলেন নায়িকা। টিকলি ও নথ ছাড়া পাওলি কিন্তু বিয়ের জন্য তেমন কোনও গয়নাই কেনেননি। সবই তাঁর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। গলায় ছিলাকাটা সীতাহার, কানে কান-সহ ছোট ঝুমকো, হাতে মানতাসা, চূড়, কয়েক গাছি চুড়ি, প্যাঁচালো আংটি ও কোমরবিছে। লুকে নতুনত্ব এনেছিল কপালজোড়া টায়রা টিকলি। আর পায়ে ছিল মোটা রুপোর মল। পাওলির মেকআপ করেছেন অনিরুদ্ধ চাকলাদার।
অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি ও ঘিয়েরঙা ধুতির কম্বিনেশনে অর্জুনের সাজও কনের চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না। শোলার কাজের পাঞ্জাবির ডিজাইনার সাহিল কোচার। সঙ্গে অসমিয়া মুগার সুতোয় বোনা ধুতি। জোড়টিতেও ছিল অসমিয়া কাজের ছোঁয়া।
বিবাহ-বাসর
নহবত বসেছিল শহরের পাঁচতারা একটি হোটেলে। বিশাল হলঘরে বিকেল পাঁচটা থেকেই সাজো-সাজো রব। অতিথি তালিকায় ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুবান্ধব এবং মন্ত্রীরাও। পানপাতায় মুখ ঢেকে কনে এলেন পালকি চেপে। মালাবদল, সিঁদুরদান, খই পোড়ানো, বাঙালি বিয়ের যাবতীয় রীতিনীতি মেনেই পাওলি-অর্জুনের বিয়ে সম্পন্ন হল। সন্ধেয় ছেলেকে আশীর্বাদ করা হয়েছিল সোনার বোতাম ও রিস্টলেট দিয়ে।
বিয়ের আসরে নায়িকা পাওলি ধরা দিলেন আর পাঁচটা সাধারণ কনের মতোই। তা সে ছবি তোলার জন্য অর্জুনকে হাত টেনে আনা হোক বা অতিথিদের জুতো পরে মঞ্চের কাছে না আসতে বলা হোক... বিয়ের মাঝে একবার পাওলির মা-ও চলে এসেছিলেন। ট্র্যাডিশনাল কনে তাঁকেও তড়িঘড়ি সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন।
বিয়ের মেনু
বিয়ের আয়োজনে যখন এতই বাঙালিয়ানা, মেনু কি তবে ব্যতিক্রম হতে পারে? যদিও ভোজনরসিকদের জন্য বাঙালি মেনুর পাশাপাশি ছিল চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল ডিশও। মেন কোর্সে কড়াইশুঁটির কচুরি, মিনি নান, লাচ্চা পরোটা, বাসন্তী পোলাও, স্টিমড রাইস, ছোলার ডাল, মুগের ডাল, আলুর দম, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা, মোচার পাতুরি, পাঁচমেশালি ভাজা-সহ বড়ি ভাজা (অ্যাসর্টেড ভাজা), পোস্ত বাটা ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে কুচো চিংড়ি, ট্র্যাডিশনাল ফিশ পাতুরি, সোনার গাঁও স্টাইল কাঁচা লঙ্কা ও ধনে পাতাবাটা মুরগি, আলু দিয়ে কচি পাঁঠার ঝোল... ডেজার্টও কম লোভনীয় নয়। নলেন গুড়ের বেকড রসগোল্লা, মালাই চমচম, ফ্লেভারড কুলফি। এ ছাড়াও আট-ন’রকমের স্যালাড, আলুকাবলি, পাপড়ি চাট, তিন-চার রকমের চাটনি, পাঁপড়ও ছিল ব্যঞ্জনে।
রিসেপশন
মঙ্গলবারই বর-কনে পাড়ি দেন গুয়াহাটির উদ্দেশে। ১০ ডিসেম্বর গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেলে রিসেপশন। ওই দিনের জন্য পাওলি বেছে রেখেছেন লাল ও সোনালি রঙের পৈঠানি। আর অর্জুন পরবেন রোহিত বালের ডিজাইন করা শেরওয়ানি। পাওলির জন্য হানিমুন ডেস্টিনেশন নাকি অর্জুনের তরফে বিগ সারপ্রাইজ। নতুন গিন্নিকে খুশি রাখার পাসওয়ার্ড যে অর্জুন ভাল রকমই জানেন, এটা থেকেই সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে!