OTT Release

এই তরজা কি মাৎস্যন্যায় ঘোচাবে?

ছবির ওটিটি রিলিজ় চিড় ধরাচ্ছে বড় প্রযোজক ও মাল্টিপ্লেক্সের আঁতাতে? অনেক ইন্ডি পরিচালক ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। গত বছর ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিটির স্ক্রিন পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৪:২৭
Share:

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছবি রিলিজ়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে প্রযোজক-এগজ়িবিটরদের চলতে থাকা তরজায় আরও কিছু বিষয় উঠে এসেছে। যে দু’পক্ষ আজ লড়াই করছে তারা একে অপরের পরিপূরক ছিল একটা সময়ে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এসে সেই গাঁটছড়া খানিকটা হলেও ঢিলে করে দিয়েছে। গত এক বছরে ভারতে ওটিটির ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ বলে দিচ্ছে, দর্শক ও নির্মাতারা আর সিনেমা হল মুখাপেক্ষী নন। টলিউডের ছবিও মোটামুটি এক। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকারদের আর হলে জায়গা পাওয়ার জন্য বসে থাকতে হচ্ছে না। বড় প্রযোজকদের দাদাগিরি সহ্য করারও প্রয়োজন পড়ছে না। যে সব নতুন প্রযোজক ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকাররা বড় প্রযোজকদের দাপটে হলে জায়গা পেতেন না তাঁরা মুখ খুলছেন এখন। কারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তাঁদের ভরসার জায়গা। ওটিটি না কিনলেও, তাঁরা ‘পে অ্যান্ড ওয়াচ’ ফরম্যাটে ইন্টারনেটে ছবি আপলোড করে দিতে পারেন।

Advertisement

অনেক ইন্ডি পরিচালক ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। গত বছর ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিটির স্ক্রিন পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যকে। ‘‘হ্যাঁ, অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এখন। আসলে ছবি দেখানোর জন্য বড় পর্দা আর বাধ্যতামূলক নয়। যদিও বড় স্ক্রিনের ম্যাজিক সব সময়েই মিস করি।’’ প্রদীপ্ত জানালেন, আগামী দিনে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র ওটিটিতে আসার জোরালো সম্ভাবনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালকের কথায়, ‘‘মাৎস্যন্যায় সব জায়গাতে আছে। এখন ছোট প্রযোজক-পরিচালকদের একটা নিজস্ব জায়গা তৈরি হয়েছে। কারণ অনলাইনে কনটেন্টই সব। কে বড় নায়ক, কে বড় পরিচালক তা বিচার্য নয়। যে যার মেরিটে জায়গা করে নেবে।’’

কোন হলে কোন ছবি চলবে, কে ক’টা স্ক্রিন পাবে, এই নিয়ে রাজনীতি টলিউডে পুরনো। বড় প্রযোজনা সংস্থার হাতে ডিস্ট্রিবিউশন, এগজ়িবিশনের ক্ষমতা থাকলে, তারা নিজেদের স্বার্থেই সবটা চালাবে এটা প্রত্যাশিত। কিন্তু অনেক সময়েই নতুন কাউকে কোণঠাসা করার জন্য, সুযোগ থাকলেও খারাপ শো টাইম, কম স্ক্রিন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। মাল্টিপ্লেক্সগুলোর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। সে ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হত, যে সংস্থা সারা বছর পরপর ফিল্ম সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে, তারা বাড়তি সুবিধে পাবেই। এই পরিস্থিতি জটিল হত পুজোর সময়ে। ছ’টা-সাতটা বাংলা ছবি। কে কাকে ঠেলে জায়গা নেবে?

Advertisement

তবে এই স্ক্রিন দখলের খেলা সারা বছরের। নিন্দুকেরা বলে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে অনেকে জায়গা বাগিয়ে নেয়। সেটা হয়তো সম্পূর্ণ সত্যি নয়। সকলেই এখানে ব্যবসা করতে এসেছে। প্রযোজক-পরিচালকের ট্র্যাক রেকর্ড দেখেও অনেক কিছু নির্ধারিত নয়। একটা সময়ে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের মতো প্রযোজক-পরিচালকেরা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। পরপর হিট দিয়ে তাঁদের নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে। এখন হল মালিক থেকে মাল্টিপ্লেক্স অপেক্ষা করে থাকে, কবে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি আসবে। দেবের মতো সুপারস্টার যখন বড় ছাতার তলা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব প্রযোজনা খুললেন, তাঁকেও কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছে। দেব প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘চ্যাম্প’-এর ডিস্ট্রিবিউশন ছিল এসভিএফ-এর। পরবর্তী কালে দেব নিজে অভিযোগ করেছিলেন, ডিস্ট্রিবিউশনের খামতির জন্য তাঁর ছবি দর্শকের কাছে ঠিক মতো পৌঁছতে পারেনি। এখন তিনি নিজের দায়িত্বেই ডিস্ট্রিবিউশন করেন। কিন্তু লড়াই থামেনি। আসলে অভিনেতা-প্রযোজক পরপর ছবি করে গেলেও, সাফল্যের প্রমাণ দিতে আরও সময় লাগবে।

এখন প্রশ্ন, অনলাইনের এই দাপটে টলিউডে চলতে থাকা মাৎস্যন্যায় কি বন্ধ হবে? পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রি করোনা আর পোস্ট করোনা দুটো আলাদা পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। পরবর্তী কালে ছোট প্রযোজক, নতুন ছবি নির্মাতাদের হয়তো অনলাইন মাধ্যমেই ভরসা করতে হবে। বিগ বাজেট ছবি ছাড়া হলে রিলিজ়ের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না। বড় প্রযোজকদের সঙ্গে মাল্টিপ্লেক্সগুলোর একটা আঁতাত থাকত। এ বার লাভের জন্য সেই প্রযোজক ওটিটির দ্বারস্থ হলে, একটা ভারসাম্য তো বিঘ্নিত হবেই।’’ অনিকেতের ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ (দেব প্রযোজিত) ওটিটি রিলিজ় হবে এমনটা শোনা যাচ্ছে। ‘‘ছবিটা ১ মে রিলিজ় করার কথা ছিল। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ডিসেম্বরের আগে রিলিজ় করার সম্ভব নয়। এ দিকে দেবের টাকা আটকে আছে। সে কারণেই ভাবনাচিন্তা চলছে,’’ মন্তব্য অনিকেতের।

ঋত্বিক ঘটক একবার বলেছিলেন, ‘‘...যে দিন আরও শক্তিশালী মাধ্যম বেরোবে সিনেমাকে লাথি মেরে সেখানে চলে যাব।’’ পরিচালকের এই উক্তিই কি আগামীর বাস্তব?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement