গুজরাতের জুনাগড়ে এক মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম ১৯৪৯-এর ৪ এপ্রিল। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তবে শৈশব সুমধুর ছিল না। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হয়েছিলেন।
পরভিনের মডেলিং কেরিয়ারের শুরু ১৯৭২ সালে। পরের বছরই বড় পর্দায় ক্রিকেটার সেলিম দুরানির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার। ছবির নাম ‘চরিত্র’। প্রথম ছবিতেই দর্শক-নজর কাড়েন নবাগতা পরভিন।
১৯৭৫-এ ব্লক বাস্টার ‘দিওয়ার’। যশ চোপড়ার এই কাল্ট মুভিতে বলিউডি নায়িকাদের ছক ভেঙে নতুন অবতারে ধরা দিয়েছিলেন পরভিন। সুরা-সিগারেটের সঙ্গে বিগ বি-র সঙ্গে ফ্লার্ট! বলিউডে নিজের জায়গা মজবুত করতে দেরি হয়নি পরভিনের।
তিনি ছিলেন ফ্যাশনিস্তা। কেতাদুরস্ত হওয়াই ছিল তাঁর তুরুপের তাস। নতুন প্রজন্মের কাছে পরভিন ছিলেন ফ্যাশন আইকন এবং সেই সঙ্গে সাহসী।
পরভিনের এই ধারা বজায় ছিল তাঁর কেরিয়ারের সব ছবিতে। ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘সুহাগ’, ‘শান’, ‘কালিয়া’, ‘নমক হালাল’-এর মতো বক্স অফিস সফল ছবির মধ্যমণি ছিলেন সুন্দরী পরভিন।
প্রথম ভারতীয় তারকা হিসেবে পরভিন প্রথম জায়গা পান ‘টাইম’ পত্রিকার প্রচ্ছদে। টাইম পত্রিকার এশীয় সংস্করণে ১৯৭৬ সালে দেখা গিয়েছিল ২৭ বছর বয়সী সপ্রতিভ পরভিনকে।
নিজের ইমেজ পাল্টাতে ভয় পেতেন না পরভিন। তিনি যে সময়ে অভিনয় করতেন, সে সময় পশ্চিমী প্রভাব ছিল হিন্দি ছবিতে বর্জনীয়। কিন্তু পরভিন বেছে নিতেন পশ্চিমী কেতাই।
আটের দশকে ‘নমক হালাল’-এর ‘জওয়ানি জানেমন’-এর সঙ্গে পরভিনের পারফরম্যান্স ছিল আইকনিক। শাড়ি সিঁদুর পরা গৃহবধূর তুলনায় পরভিন পছন্দ করতেন দুঃসাহসী নায়িকা সাজতেই। ‘নমক হালাল’-এর ‘রাত বাকি বাত বাকি’ গানে চূড়ান্ত যৌন আবেদনময়ী ছিলেন পরভিন।
অমিতাভ-পরভিন জুটি ছিল সুপারহিট। বিগ বি-র সঙ্গে ১৫টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন পরভিন। জুটি হিসেবে তাঁদের আত্মপ্রকাশ ১৯৭৪ সালে, ‘মজবুর’ ছবিতে। সেটাও ছিল সুপারহিট।
জিনত আমনের সঙ্গে পরভিনও ছিলেন বলিউডের সেক্স সিম্বল। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ অবধি রীনা রায় এবং জয়াপ্রদার সঙ্গে পরভিন ছিলেন হাইয়েস্ট পেড নায়িকা। কিন্তু কেরিয়ারের শীর্ষে থাকার সময়েই পরভিন অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন।
অভিনয় থেকে অবসর নেওয়া প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত নায়িকা একাই থাকতেন তাঁর ফ্ল্যাটে। জীবনের শেষ দিকটি কেটেছিল নিঃসঙ্গ অবস্থায়। ২০০৫-এর ২২ জানুয়ারি তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পরভিনের পায়ে গ্যাংগ্রিন ধরে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছিল, মৃত নায়িকার পাকস্থলি ছিল কার্যত শূন্য। অ্যালকোহল ছাড়া খাবারের কোনও চিহ্ন ছিল না সেখানে। পুলিশের ধারণা, মৃত্যুর আগে দিন তিনেক কিছু খাননি তিনি। পরভিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে কোনও ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিল পুলিশ। মধুমেহর কারণে অর্গান ফেলিওর-ই কারণ বলে জানানো হয়েছিল।
যে দিন তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার তিন দিন আগে তিনি মারা গিয়েছিলেন বলে অনুমান পুলিশের। দরজার বাইরে খবরের কাগজ আর দুধের প্যাকেট জমে থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা খবর দিয়েছিলেন পুলিশে। তারপর দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় এক সময়ের লাস্যময়ী নায়িকার গ্যাংগ্রিন ধরে যাওয়া নিথর দেহ।