শ্রীলেখা-সুদীপ্তাা
যে ঝড় বলিউডে গত ক’দিন ধরে উঠেছে, তার প্রকোপ টলিউডেও। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকাল মৃত্যুর ঘটনার পরে নেপোটিজ়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। সুর মিলিয়েছেন বাংলার কিছু তারকাও। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র নেপোটিজ়মের অভিযোগ করে কিছু ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তাতে বিতর্ক আরও দানা বেঁধেছে।
প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে শ্রীলেখা গুরুতর অভিযোগ তুললেও অভিনেতা এখনই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। যে ছবিকে কেন্দ্র করে শ্রীলেখার এই ক্ষোভ, তাঁর প্রযোজক অশোক ধানুকার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ঠিক কী ঘটেছিল সেই সময়ে? প্রযোজকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে ‘অন্নদাতা’র জন্য প্রথম পছন্দ ছিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ওকে না পাওয়ায় মৌলি গঙ্গোপাধ্যায় বা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাউকে না পাওয়া যাওয়ায় শ্রীলেখাকে নিয়েছিলাম। ও কোনও দিনই প্রথম পছন্দ ছিল না। আমি কোনও ছোট প্রযোজনা সংস্থা চালাই না যে, আমাকে কেউ নির্দেশ দেবে কাকে নেওয়া উচিত আর কাকে বাদ দেওয়া উচিত। আমরা ব্যবসা বুঝে কাজ করি।’’
অশোক ধানুকার সুরেই কথা বললেন ‘অন্নদাতা’ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ করা পরিচালক রবি কিনাগি।
শ্রীলেখার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকে সহমত পোষণ করলেও উল্টো দিকে কিছু মত উঠে আসছে। যে নেপোটিজ়মের কথা বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে উঠেছে, তা কি আর কোথাও নেই? সেই প্রশ্নও তুলেছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ-সহ অনেকেই। সুদীপ্তা চক্রবর্তী যেমন মনে করেন, ‘‘আক্ষেপ সকলেরই থাকে। আমি নিজে বহুবার কোণঠাসা হয়েছি। এটা শো বিজ়নেস। প্রযোজক যদি মনে করেন অন্য কাউকে নিলে বেশি ব্যবসা হবে তিনি তাকেই নেবেন। খারাপ লাগলেও সেটা মেনে নিতে হয়। আমি কাজটা পাইনি মানে যে পেয়েছে, সে অযোগ্য এমন নয়। আবার বহুবার অযোগ্য লোককে কাজ পেতে দেখেছি সেটাও ঘটেছে। কষ্ট পেয়েছি কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। এগুলো সামলে নিয়েই চলতে হয়।’’
আরও পড়ুন: ‘এ ভাবে রিয়াকে অপদস্থ করা ঠিক নয়’, সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন ইরফানের স্ত্রী সুতপা
শ্রীলেখার মন্তব্যের পরে স্বস্তিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁর মতে, কোনও অভিনেত্রী একজন পরিচালকের সঙ্গে পরপর ছবি করছেন মানেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে? একজন পুরুষ অভিনেতার ক্ষেত্রে তো সে কথা বলা হয় না! রুদ্রনীলের বক্তব্য, ‘‘উকিলের ছেলে উকিল হলে তো চোখে লাগে না। অভিনেতার ছেলে অভিনয় করলেই দোষ? নেপোটিজ়ম কিছু সুযোগ করে দিতে পারে, শেষ পর্যন্ত যোগ্যতাই কথা বলবে।’’ পুরস্কার পাবেন বলে গিয়েছিলেন সুদীপ্তা, সেখানে অন্য কারও হাতে পুরস্কার উঠতে দেখেছেন। রুদ্রনীলকে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টলিউডের এক নামী পরিচালক সেখানে মুম্বইয়ের অভিনেতাকে কাস্ট করেন। বঞ্চনার তালিকা লম্বা... কিন্তু এঁরা প্রত্যেকে নিজের মতো করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর নাম করে অভিযোগ করেছিলেন শ্রীলেখা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসেনজিতের সঙ্গে ‘অন্নদাতা’ হিট হওয়ার পরে আমাদের দু’জনকে জুটি করে আরও ছবির কথা চলছিল। সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও আমি বাদ পড়ি। সেখানে ঋতুপর্ণাকে নেওয়া হয়। নায়কের সঙ্গে প্রেম করার ফলে ছবি পাওয়া যায়। এমন ঘটনা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক আছে...’’
আরও পড়ুন: ছকে বাঁধা গল্প বলার চ্যালেঞ্জ না নিলেই পারত ‘লালবাজার’
শ্রীলেখার এই বক্তব্যের পরেই টলিউডে নেপোটিজ়মের উদাহরণ যেমন উঠে এসেছে, তেমনই এই প্রশ্নও উঠেছে যে, স্বজনপোষণ শুধু বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে নয়, সর্বত্রই একই ভাবে চলছে। তা হলে রুপোলি দুনিয়ার লোকদেরই কেন বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে?