প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের রাশ ধরে রাখতে চায় এক শ্রেণি, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও তার নিষ্পত্তি হয়নি বলে দাবি করে আইনি পদক্ষেপের পথে পা বাড়ালেন টলিপাড়ার পরিচালকেরা।
কয়েক মাস আগে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবিকে কেন্দ্র করে টলিপাড়ার ফেডারেশন এবং পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সমস্যা গুরুতর হলে পরিচালকেরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিচালকেরা কাজে ফেরেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটি তৈরির কথা ছিল। সেই কমিটিতে থাকার কথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেনের। গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ডিএইআই (ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইর্স্টার্ন ইন্ডিয়া) শহরে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করে, এখনও পর্যন্ত সেই কমিটি তৈরি হয়নি। সমস্যার সমাধানে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে পরিচালকদের তরফে উপস্থিত ছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় প্রমুখ। পরিচালকদের সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’র কাছে মামলার সমস্ত কাগজপত্র আজ দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।’’
ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় পরিচালকদের, সেই দিকগুলোই প্রথমে তুলে ধরা হয়। শুরু থেকেই ফেডারেশনের দাবি ছিল, তারা ইন্ডাস্ট্রিতে ‘গুপি শুটিং’ (ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে শুটিং) বন্ধ করতে উদ্যোগী। পরম বলেন, ‘‘দেশের আইনে বলা নেই যে কোনও পরিচালক তাঁর ইচ্ছে মতো কলাকুশলী নিয়ে শুটিং করতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের এখানে ফেডারেশনের নিয়ম না মানলেই সেটাকে ‘গুপি শুটিং’ বলা হচ্ছে।’’ পরিচালকেরা জানিয়েছেন, ইউনিয়নের সদস্য না হলে তাঁকে কাজ করতে দেয় না ফেডারেশন।
ইন্দ্রনীল জানান, হিন্দি ভাষার কোনও ছবির শুটিং এ রাজ্যে হলে, ফেডারেশন প্রযোজকের থেকে দ্বিগুণ টাকা দাবি করে। বিদেশি ছবির ক্ষেত্রে চাওয়া হয় তিন গুণ টাকা। ইন্দ্রনীলের কথায়, ‘‘সারা দেশের অন্য কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে এই নিয়ম নেই। এই ভাবে তো বাংলায় বাইরের ছবি এবং বিজ্ঞাপনী ছবির শুটিং আরও কমে যাবে।’’ এ ছাড়াও শিল্পীদের কল টাইম, ক্যামেরা এবং বিদেশে বাংলা ছবির শুটিংয়ের ক্ষেত্রে ফেডারেশনের ‘অনৈতিক’ নিয়মকেও তুলে ধরেন তিনি।
পরিচালকদের দাবি, ফেডারেশন নিজের ইচ্ছে মতো ইন্ডাস্ট্রিতে ছুটি ঘোষণা করে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ইউনিট। বুধবার শুরু হচ্ছে ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। সেই উপলক্ষে ইন্ডাস্ট্রিতে ছুটি ঘোষণা করেছে ফেডারেশন। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য নাম উল্লেখ না-করে বলেন, ‘‘আগামী কালের এই ছুটির ঘোষণা আমরা সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় জানতে পেরেছি। ফলে বুধবার আমার ৭০ জন শিল্পীকে নিয়ে শুটিং কী ভাবে হবে জানি না।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে যে কাজের পরিসর ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে, তা জানান কৌশিক। কৌশিক বলেন, ‘‘পরিচালকেরা তো কোনও সুবিধাই পান না, অথচ দেশের অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়।’’ তিনি জানান, গত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে মোট ১৩৪টি বাংলা ছবি তৈরি হয়। চলতি বছরের শেষে সেই সংখ্যাটি ৩৭। কৌশিক বলেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিকে যে কোনও রকম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটা কমিটিও তৈরি করা গেল না। সমস্যার সমাধানের আশায় তিন মাস অপেক্ষা তো করলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’
বাংলার ছবি ব্যবসা এবং শো পাওয়া সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেন শিবপ্রসাদ। তিনি জানান, বক্স অফিসে হিন্দি ছবির তুলনায় বাংলা ছবির প্রযোজকেরা অনেক কম টাকা পান। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘প্রযোজকের রোজগারের জায়গা তৈরি না হলে, আগামী দিনে তো ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনও প্রযোজক আসবেন না।’’