মডেল, ভিডিয়ো জকি, সঞ্চালক থেকে অভিনেত্রী। গত সিকি দশক ধরে তাঁকে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ভূমিকায়। ভারতীয় টেলিভিশনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির অভিনেত্রী। বড় পর্দায় সে রকম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পৌঁছতে না পারলেও নিকি আনেজা রয়ে গিয়েছেন দর্শকদের স্মৃতিতে।
নিকির জন্ম মুম্বইয়ে, ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। সান্তা ক্রুজের সেন্ট টেরেসাজ কনভেন্ট স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। আটের দশকের শেষ থেকেই তাঁকে দেখা যেত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে।
১৯৯১ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় রানার আপ হন নিকি। ৩ বছর পরে মিস ইন্ডিয়া-র যে মঞ্চে সুস্মিতা এবং ঐশ্বর্যা জয়ী ও রানার আপ হন, সেই প্রতিযোগিতায় বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন নিকি।
টেলিভিশন ধারাবাহিকে তাঁর প্রথম অভিনয় ১৯৯৫ সালে। তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘বাত বন জায়ে’ ধারাবাহিকে। এর পর বিভিন্ন চ্যানেলে ‘আখির কৌন’, ‘দস্তান’, ‘অন্দাজ’, ‘সি হকস’, ‘সমানদার’, ‘ঘরওয়ালি উপরওয়ালি’-সহ বিভিন্ন ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেন। দূরদর্শনে ‘সমানদার’-এ তিনি অভিনয় করেছিলেন কবীর বেদীর বিপরীতে।
তবে বিনোদন দুনিয়ায় নিকির পরিচয় আমূল পাল্টে যায় ২০০২ সালে। সে বছরই তিনি অভিনয় শুরু করেন ‘অস্তিত্ব…এক প্রেম কহানি’ ধারাবাহিকে।
এই ধারাবাহিকে নিকি অভিনয় করেছিলেন চিকিৎসক সিমরন মাথুরের ভূমিকায়। তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয়ের সুবাদে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল সিমরন চরিত্রটি।
ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য অনুযায়ী সিমরন একইসঙ্গে কর্তব্যপরায়ণ চিকিৎসক এবং স্নেহময়ী মা। নিকির অভিনয়গুণে পর্দায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল চরিত্রটি।
চরিত্রটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন নিকি নিজেও। এক সাক্ষাৎকারে জানান, বয়সের তুলনায় বেশি বয়সি চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই নিয়ে তাঁর মনে কোনও সংশয় নেই। কারণ তিনি মনে করেন, একজন অভিনেত্রীর সব ধরনের চরিত্রে স্বচ্ছন্দ হওয়া উচিত।
এর পর ‘ঘর এক সপনা’ এবং ‘দিল সামহাল জা জরা’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন নিকি। কিন্তু ‘সিমরন’ চরিত্রের মতো জনপ্রিয়তা অধরাই থেকে গিয়েছে তাঁর কাছে।
টেলিভিশনের পাশাপাশি একই সময়ে বড় পর্দাতেও কেরিয়ার শুরু করেছিলেন নিকি। ১৯৯৪ সালে অনিল কপূরের বিপরীতে তাঁর প্রথম ছবি ‘মিস্টার আজাদ’ মুক্তি পায়। ছবিতে নিকি অভিনয় করেছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে। তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল ইনস্পেক্টর শালু।
এর পর দীর্ঘ দিন কোনও ছবিতে দেখা যায়নি তাঁকে। নিকি ফের ছবিতে অভিনয় করেন ২১ বছর পরে। ২০১৫ সালে তাঁকে দেখা যায় ‘শানদার’ এবং ‘চকোলেট’ ছবিতে। এর পর ‘লুপ্ত’ এবং ‘গিল্টি’ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
তবে বড় পর্দায় কোনও দিনই নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেননি নিকি। তিনি খুশি ছিলেন ছোটপর্দায় অভিনয় করেই। ‘অস্তিত্ব…এক প্রেম কহানি’ ধারাবাহিকটি চলেছিল টানা ৪ বছর।
তবে নিকির অভিযোগ, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আরও একটু গুরুত্ব দিলে ধারাবাহিকটির জনপ্রিয়তা আরও অনেক দূর পৌঁছত। একইসঙ্গে নিকির দাবি, বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ বা ‘জসসি জ্যায়সি কোই নহিঁ’-র মতো প্রবল জনপ্রিয় ধারাবাহিকের থেকে থেকে তাঁর ধারাবাহিক অনেক এগিয়ে ছিল।
অভিনেত্রীর কটাক্ষ, আজকের দিনে প্রতি ঘরে চওড়া সিঁদুর এবং মঙ্গলসূত্র পরা গৃহবধূ বা জসসির মতো মেয়ে থাকে না। কিন্তু সিমরনের মতো লড়াকু নারী থাকেন যাঁরা ঘরে বাইরে সমান তালে হাল ধরতে পারেন। নাম না করে স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
পর্দার বাইরেও নিকির ব্যক্তিত্ব সিমরনের মতোই। ২০০২ সালে তিনি বিয়ে করেন ব্যবসায়ী সোনি ওয়ালিয়াকে। ওই একই বছর তিনি ধরা দেন ‘সিমরন’ হয়েও। বিয়ের পরেও কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অনায়াস দক্ষতায়।
এখন অবশ্য তিনি বহু দিন লন্ডনবাসী। স্বামী এবং দুই সন্তান শন-সাব্রিনাকে নিয়ে টেমসের তীরের শহরেই তাঁর ভরপুর সংসার। পরবর্তীতে কাজ করেছেন জি টিভি ইউ কে-তেও।
সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও এখনও অভিনয় পুরোপুরি ছাড়েননি তিনি। কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজেও। অতীতে জনপ্রিয়তার নিরিখে স্মৃতি ইরানির প্রতিযোগী এই অভিনেত্রী আজও ছোট পর্দার দর্শকদের নস্টালজিয়া।