নিকিতা
কলকাতার মেয়ে নিকিতা গাঁধী। এ আর রহমানের হাত ধরে প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখা। তামিল-তেলুগুর পাশাপাশি হিন্দি ও বাংলাতেও চুটিয়ে প্লেব্যাক করেছেন গত কয়েক বছরে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছেন, তবে কাজের সুবাদে। মিউজ়িক রিয়্যালিটি শো ‘ইন্ডিয়ান প্রো মিউজ়িক লিগ’-এর ‘বেঙ্গল টাইগারস’ টিমের তরফে শহরে এসেছিলেন তিনি। টেলিভিশনে তাঁর প্রথম কাজ। ‘‘লকডাউনের মধ্যেও বেশ কয়েকবার এসেছি। মা-বাবাকে দেখতে, ইমনের (চক্রবর্তী) বিয়েতে যোগ দিতে... দু’তিনটি লাইভ শো-ও করেছি এর মাঝেই। কাজ নিয়ে যখন কলকাতায় আসি, আলাদা গর্ব অনুভব করি। আমি তো ডাক্তার, ভ্যাকসিন নিতেও এসেছি,’’ হাসি তাঁর কণ্ঠে।
একই সঙ্গে তেলুগু, হিন্দি, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে প্লেব্যাক করায় পার্থক্য কিছু চোখে পড়ে? ‘‘আঞ্চলিক ভাষার মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রিতে কম্পোজ়ারকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়, সম্মান করা হয়। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে বাণিজ্যিকীকরণ বেশি। তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি আমার খুব কাছের। তবে এটাও ঠিক, হিন্দির জনপ্রিয়তার সঙ্গে বাকিদের মেলানো যাবে না। প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি ওখানে,’’ বললেন গায়িকা। আর বাংলা ইন্ডাস্ট্রি? ‘‘এখনও অবধি হিন্দির চেয়ে বাংলায় বেশি এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেছি। ‘উড়নচণ্ডী’র টাইটেল ট্র্যাক বা ‘মেঘনাদবধ রহস্য’র গান অন্য ধরনের ছিল। আঞ্চলিক ভাষার এই স্বকীয়তা ধরে রাখা উচিত,’’ মত তাঁর।
হিন্দিতে ‘রাবতা’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক থেকে শুরু করে অক্ষয়কুমার অভিনীত ‘লক্ষ্মী’র ‘বুর্জ খলিফা’ গানটিও নিকিতার গাওয়া। কিন্তু এখনকার হিন্দি প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে পুরুষদের আধিপত্য নিয়ে আগেও গায়িকারা সরব হয়েছিলেন। নিকিতার অভিজ্ঞতা কেমন? ‘‘কারও অভিজ্ঞতাকে ছোট করব না। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আমার গর্ব হয়, এই প্রজন্মে অনেক মহিলা কম্পোজ়ার-গীতিকারও কিন্তু সামনে এসেছেন। নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘মিসম্যাচড’-এ আমি নিজে কম্পোজ় করেছি, গানও গেয়েছি। ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর কম্পোজ়ার স্নেহা খানওয়ালকারের কথা তো আজও হয়। আর এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশ কয়েকজন মহিলা কম্পোজ়ার কিন্তু ভালমতো কাজ করেছেন। স্টুডিয়োয় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মহিলারা কাজ করছেন,’’ বক্তব্য নিকিতার।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মতো হিন্দি প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতেও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। নবাগতা হিসেবে জার্নির শুরুতে এই দিকটা কতটা দেখেছেন? ‘‘একটা পর্যায় অবধি নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সেখানেই পৃথিবী শেষ নয়। এখন এত ধরনের প্ল্যাটফর্মের জন্য শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনোর অনেক পথ রয়েছে। আর স্বজনপোষণ ধারার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত আমি। প্রথম ব্রেক পেয়েছিলাম প্রীতমদার (চক্রবর্তী) কম্পোজ়িশনে ‘রাবতা’ ছবিতে।’’ এ আর রহমানের পাশাপাশি প্রীতমকেও কেরিয়ারে সাফল্যের কৃতিত্ব দেন নিকিতা। ‘‘নতুন ছিলাম, কিন্তু আমার উপরে ভরসা রেখে বিগ ব্যানার ছবিতে গান দিয়েছিলেন, সেটা বড় পাওনা।’’ ইন্ডিয়ান লেজেন্ডদের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন জ্যাজ়েরও প্রভাব রয়েছে তাঁর গায়কিতে।
ইউটিউবের সুবাদে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনো যেমন সহজ, তেমন অনেক সিনিয়র শিল্পীর অভিযোগ, ইউটিউবের সুবাদে গায়ক হওয়া ইদানীং কঠিন নয়। ‘‘এটা একটা রূপান্তরের সময়। তবে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে আপডেটেড থাকতেই হবে। এ ক্ষেত্রে রহমান স্যরের কথাই বলব। উনি তো আজকের কম্পোজ়ার নন। কিন্তু নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে খুবই ওয়াকিবহাল। আর যে কোনও পেশাতেই সেটা বোধহয় আদর্শ হওয়া উচিত,’’ মত তাঁর।