মোট বত্রিশটা গল্পে দর্শক দেখতে পাবেন এই উইকএণ্ড সিরিজ। সংগৃহীত ছবি।
‘অলৌকিক না লৌকিক’। প্রযোজক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এনআইডিয়াজ-এর এই নতুন উইকএণ্ড সিরিজ দেখা যাচ্ছে স্টার জলসায়। ঠিক কী থাকছে এই সিরিজে?
ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করলেন, “সাধারণ মানুষের কুসংস্কারের প্রতি যে অন্ধবিশ্বাস... মানুষ যখন কোনও অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে সে সময় নানারকম জিনিস বিশ্বাস করতে শুরু করে... সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু মানুষ তাদের ঠকায়। সেটা কখনও মানসিক, সেটা কখনও টাকা পয়সা সংক্রান্ত। মানুষ এমন কিছু জিনিস বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সাধারণ বুদ্ধি আর কাজ করে না। ভাবে, এ ভাবেই হয়তো সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে যাবে। তো সেই কুসংস্কারকে খানিকটা ধাক্কা দেওয়ার জন্যই এবং এগুলো নিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে তাদের কাজকর্মের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর জায়গা থেকেই এই সিরিজটা করা। এই সিরিজে আমরা প্রতি সপ্তাহে একটা গল্পের দুটো করে এপিসোড দেখবো। শনি ও রবিবার রাত আটটা থেকে নটা। ষোলটা গল্পের একটা সিজন। মোট বত্রিশটা গল্পে দর্শক দেখতে পাবেন এই উইকএণ্ড সিরিজ।”
সিরিজটি কি প্রবীর ঘোষের ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ (পাঁচ খণ্ড) বইগুলি থেকে নেওয়া? তিনি জানালেন, “হ্যাঁ। এই বই থেকেই উপাদান নিয়ে আমাদের টিম গল্প তৈরি করেছে। সেই গল্পগুলোই দেখছেন দর্শক। বেশিরভাগ গল্পই সত্য ঘটনা অবলম্বনে যেগুলো বিভিন্ন সময় প্রবীরবাবু বিজ্ঞান মঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে চ্যালেঞ্চ করেছেন বা দেখেছেন। কিন্তু প্রত্যেকটি গল্পের কনক্লুশন নেই। যারা প্রবীরবাবুর চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করেননি সেখানে তো তিনি যেতে পারেননি। ফলত সেইসব গল্পের শেষ দেখাও সম্ভব হয়নি। তো সেই গল্পগুলোও আমরা চেষ্টা করছি কমপ্লিট করার।”
আরও পড়ুন: ‘প্রায় স্বাধীনতার সামিল’, কী দেখে বললেন ঋষি
এক ভণ্ড তপস্বীর চরিত্রে দেবেশ রায়চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি।
একটা প্রবল অবৈজ্ঞানিক, কুসংস্কারাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় দাঁড়িয়ে আপনারা কী আশা করছেন? তিনি যোগ করলেন, “আশা করছি বললে ভুল করা হবে। আমরা যদি এক্সপেক্ট করতে থাকি যে একটা প্রোগ্রাম করলেই সেটা থেকে মানুষ কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ভুলে বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়ল, পুরো সমাজ ক্লিন হয়ে গেল, যেরকম আমরা চাইছি, সেটা তো সম্ভব নয়। এই ধরনের বিষয়গুলো মানুষের ভেতর শেকড় ছড়িছে দিয়েছে। যদি একটা লোকও এটা থেকে শিক্ষা নেয়, যুক্তি দিয়ে সবকিছু ভাবে এবং অন্ধবিশ্বাস থেকে সরে আসে— সেটাও অনেকটা পাওনা হবে। সেটাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।”
এ প্রসঙ্গে অন্যতম অভিনেতা দেবেশ রায়চৌধুরী জানালেন, “লোকের চোখ খুলে দেওয়ার দরকার আছে। তার জন্যই তো এই প্রোগ্রামটি করা। লোকের কাছে গিয়ে যদি এমনি বোঝানো যায় তাতে যতটা না কাজ হবে, গল্পের মাধ্যমে মানুষ যদি দেখতে পায় তাহলে ব্যাপারটা আরও বেশি এফেক্টিভ হবে। এই প্রোগ্রামটা সেরকম চিন্তা ভাবনা করেই করা হচ্ছে।”
কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন দেবেশবাবু? তিনি বললেন, “আমার চরিত্রটা ভণ্ড তপস্বীর... হাত দেখে, ধুনো জ্বালিয়ে বসে থাকে... গ্রামের মানুষদের কুসংস্কারকে ইউজ করে টাকা রোজগার করে। গ্রামের প্রভাবশালী লোকদের কথা মতোও কাজ করে তাদের সুবিধা করে দেয়।”
আরও পড়ুন : বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু সময় থাকতে সরে এসেছি: ঊষসী
গল্পের প্রোটাগনিস্ট বিক্রম। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋদ্ধিশ চৌধুরি। তাঁর চরিত্রটি ঠিক কেমন? তিনি বললেন, “বিক্রম নিজের মনের কথাই বেশি শোনে। তার বয়সের ছেলেদের উপর যে প্রেসার থাকে... যে চাকরি করতে হবে, সংসার চালাতে হবে... সেটা তারও আছে। প্রথম গল্পেই দেখা যায় বিক্রমের খুব কাছের এক বন্ধু মণীশ মারা যায়। বন্ধুর মৃত্যু হত না যদি ভণ্ড বাবাজি তাকে না ঠকাত। তো এই মৃত্যু বিক্রমকে খুব হিট করে। তো বিক্রম তার কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভণ্ড বাবাজিদের চ্যালেঞ্জ জানায়। এটাই এই প্রোগ্রামের মেন কনটেন্ট।”
শোনা যাচ্ছে আপনার চরিত্রটি প্রবীর ঘোষের আদলে তৈরি। তো কী ভাবে প্রস্তুতি নিলেন? তিনি যোগ করলেন, “আমার মাথার উপর যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতায় আমি প্রোগ্রামড হয়েছি, তাঁরা যেরকম চেয়েছেন সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করেছি, সে রকম ভাবেই চরিত্রটা পোট্রে করার চেষ্টা করছি। জানি না কতটা সফল হচ্ছি। সেটা তো দর্শকরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, লেখক প্রবীর ঘোষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি।”
দর্শকদের কিছু বলবেন? তিনি একটুও সময় না নিয়ে উত্তর দিলেন, “লাভ, বিলিভ, রেসপেক্ট, বি হাম্বল। ‘অলৌকিক না লৌকিক’ একটা খুব ভাল উদ্যোগ। আপনাদের সবার সাপোর্ট চাই ডেফিনেটলি। শো-টা দেখুন। আশা করছি এটা সবার ভাল লাগার মতো একটা বিষয়। তো আপনাদের ভালবাসা, আশীর্বাদ চাইছি। আপনাদের ভালবাসা নিয়েই ভবিষ্যতে যেন আরও ভাল ভাল কাজ আমরা প্রোডিউস করতে পারি।”
আরও পড়ুন : অধরাই থেকে গেল মাইলফলক ছবিতে কাজ, অভিনয় থেকে দূরে কেমন আছেন গত দশকের প্রতিশ্রুতিমান শিশুশিল্পী
টেলিভিশনে এই ধরনের বিষয় চয়ন করা নিঃসন্দেহে স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়তে বাধ্য লেখক পরশুরামের ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্পটির কথা। কতদিন আগের লেখা গল্প। কিন্তু এখনও হুঁশ ফেরেনি মানুষের। অন্য দিকে প্রবীরবাবুর লেখা বইগুলি নিয়েও নব্বই-এর দশকে প্রবল আলোড়ন উঠেছিল যুব সমাজে। সেই আলোড়ন কি এখনও আছে? এখন অপেক্ষা কী ভাবে দর্শক অলৌকিক থেকে লৌকিকের দিকে এগোন, সঙ্গে নিয়ে চলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং পিছু হটতে বাধ্য হন ভণ্ড বাবা-মায়েরা।