কটূক্তির ঝড়, রিয়ার সঙ্গেই টার্গেট বাঙালি মেয়েরা, মুখ খুললেন স্বস্তিকা-নুসরত

দু-একটি বিরূপ মন্তব্য এলেও স্বস্তিকা এবং নুসরতের কমেন্ট বক্সে একসঙ্গে গলা মিলিয়েছেন বাঙালি-অবাঙালিরা। এক জন লিখেছেন, “রিয়া আদপে দোষী কিনা, তা এখনও প্রমাণ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ১৭:৪২
Share:

বাঁ দিক থেকে নুসরত, রিয়া এবং স্বস্তিকা।

সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু-কাণ্ডে বাঙালি মেয়ে রিয়া চক্রবর্তীর ভূমিকা নিয়ে যখন তোলপাড় গোটা দেশ, ঠিক সেই সময়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু এক অন্য বিতর্ক। রাতারাতি ‘ভিলেন’ বাঙালি মেয়েরা। উড়ে আসছে ট্রোল, ঘুরে বেড়াচ্ছে মিম। বাঙালি মেয়ে মানেই ‘কালাজাদুতে সিদ্ধহস্ত’, ‘পয়সার কাঙাল’ ইত্যাদি মন্তব্যে ভরে উঠেছে ফেসবুকের দেওয়াল। যদিও এই সব মন্তব্যের বিরোধিতাও করেছেন নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ। এ বার গোটা ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন দুই বাঙালি অভিনেত্রী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং নুসরত জাহান।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে। সুশান্তের দিদি মিতু সিংহ অভিযোগ আনেন, তাঁর ভাইয়ের উপর কালাজাদু করতেন রিয়া। মিতুর বন্ধু স্মিতা পারিখও এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “রিয়া আমায় জানিয়েছিল ওর প্রিয় বন্ধু বেশ কয়েক বছর আগে মারা যায়। কিন্তু সেই বন্ধুর আত্মা নাকি সবসময় রিয়ার সঙ্গেই থাকত। বিভিন্ন বিপদে রিয়াকে রক্ষা করত। এমনকি রিয়ার কেউ অনিষ্ট চাইলে তাকে শেষ করে দিত রিয়ার বন্ধুর সেই অতৃপ্ত আত্মা।”

এ সব মন্তব্যেই ছেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া

Advertisement

এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্টে নেটাগরিকদের এক অংশ লিখতে শুরু করেন, “হ্যাঁ, আমি শুনেছিলাম। কী ভাবে কালাজাদু চর্চা করতে হয় তা অনেক দিন ধরেই বাঙালি নিয়মিত প্র্যাকটিস করে আসছে।” আর একজনের বক্তব্য, “রিয়া বাঙালি, তাই ব্ল্যাক ম্যাজিক ওর রক্তে।” শুধু কালাজাদুই নয়, এক টুইটারেত্তি লেখেন, “বাঙালি মেয়েরা সবসময় ছেলেদের দমিয়ে রাখে। পয়সাওয়ালা ছেলেদের ফাঁসায়। যদি তুমি তোমার স্ত্রীর চাকর এবং একই সঙ্গে পয়সা জোগানোর মেশিন হতে চাও তবে বাঙালি মেয়ে বিয়ে করতে পার। মনে রেখো, নিজের পরিবার ছেড়ে আসতে হবে তোমাকে।”

এর পরেই বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ এর বিরোধিতা করলে চুপ করে থাকতে পারেননি অভিনেত্রী এবং বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহানও। তিনি লেখেন, “আমরা বাঙালি মেয়েরা রান্না করার সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্ব জয় করতে পারি। শুধুমাত্র স্বার্থের জন্য একটা গোটা সম্প্রদায়কে অপমান করবেন না। আমি নিশ্চিত মাছ-মশলা-মিষ্টি সম্পর্কে খুব একটা কিছু জানেন না আপনি।”

নুসরতের টুইট

রিয়ার ব্যাপারে নুসরতের বক্তব্য, “যা কিছু আইনবিরুদ্ধ, মানবতা বিরুদ্ধ তাতে আমার সমর্থন নেই। আমি নিশ্চিত পুলিশ তাদের কাজ করছে। আশা করছি সত্য খুব শীঘ্রই সামনে আসবে। কিন্তু তাই বলে কেউ আমাদের সংস্কৃতিকে অসম্মান করবে তা আমি একেবারেই বরদাস্ত করব না।” অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও এই বিভাজনের বিরোধিতা করেছেন । টুইটে এক ব্যক্তি বলেছিলেন , “বাঙালিরা বড় মাছ ধরে, পয়সাওয়ালা ছেলেদেরই তাদের পছন্দ।” স্বস্তিকার কটাক্ষে ভরা জবাব, “আমি তো রুই বা ভেটকি ভালবাসি। এর পর সর্ষের তেল দিয়ে তা ভাল করে রান্না করে, গরম ভাতে কাঁচালঙ্কা দিয়ে খেতে ভালবাসি। বাঙালি মেয়েরা কেউ আছ? জয়েন করবে আমার সঙ্গে?”

স্বস্তিকার টুইট

দু-একটি বিরূপ মন্তব্য এলেও স্বস্তিকা এবং নুসরতের কমেন্ট বক্সে একসঙ্গে গলা মিলিয়েছেন বাঙালি-অবাঙালিরা। এক জন লিখেছেন, “রিয়া আদপে দোষী কিনা, তা এখনও প্রমাণ হয়নি। তর্কের খাতিরে যদি ও ভুল করেও থাকে, দোষী হয়েও থাকে, আইন রয়েছে, বিচার ব্যবস্থা রয়েছে... তাই বলে একটা গোটা সম্প্রদায়কে এ ভাবে অপমান করা আদপে ঠিক? আমার স্ত্রী বাঙালি। ও আমার জীবনে না থাকলে আমার কী হত আমি জানি না।” আর এক জনের বক্তব্য, “আপনারাই বিভাজন সৃষ্টি করেন। আপনাদের জন্যই ঐক্যে আঘাত পড়ে। সংহতি নষ্ট হয়। ভুলে যাবেন না, জাতীয় সঙ্গীত কিন্তু বাংলা ভাষাতেই লেখা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement