তারকাদের আত্মজীবনী মানেই বিতর্ক। আবার বহু না-জানা তথ্য থেকে পর্দা তুলে দিতেও জুরি নেই এই ধরনের আত্মকথনের। সম্প্রতি বলিউডের অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন।
নীনার আত্মজীবনীর নাম, ‘সচ কহু তো: মেরি আত্মকথা’।
রেখা, সাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল, ডিম্পল কাপাডিয়ার সমসাময়িক অভিনেত্রী নীনা।
জাতীয় পুরষ্কারজয়ী অভিনেত্রী নীনা বরাবরই অভিনয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কারণে খবরে থেকেছেন বেশি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের পাশাপাশি আরও নানা বিষয়ে চর্চিত হয়েছে নীনার ব্যক্তিগত জীবন।
আত্মকথায় তাঁর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের অনেক অজানা বিষয়কে নিরাবরণ করেছেন নীনা। যা ফের শিরোনামে নিয়ে এসেছে অভিনেত্রীকে।
নীনা জানিয়েছেন, বলিউডে কাস্টিং কাউচের শিকার হতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। কেরিয়ারের শুরুতে তাঁকে হোটেলে রাত কাটানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন এক প্রযোজক।
আত্মজীবনীতে সেই রাতের অভিজ্ঞতা বিশদে জানিয়েছেন নীনা। প্রযোজকের নাম না করলেও বলেছেন, দক্ষিণী ছবির নাম করা প্রযোজক ছিলেন তিনি। এক বন্ধুর থেকে খবর পেয়ে একটি ছবির জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নীনা। নায়িকার বন্ধুর চরিত্র। ছোট ভূমিকা। অভিনয়ের তেমন সুযোগ নেই বুঝে ফিরতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী। বাধা দেন ওই প্রযোজক। বলেন, ‘‘কোথায় যাচ্ছো? তুমি এখানে আমার সঙ্গে রাত কাটাবে না?’’ নীনা লিখেছেন, ‘‘প্রযোজকের প্রস্তাব শুনে আমার মনে হয়েছিল কেউ আমার মাথায় এক বালতি বরফ-ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়েছে।’’
তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সতীশ কৌশিক। ১৯৮০ সালে তখন ভিভের ঔরসে অন্তঃসত্ত্বা নীনা। তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সতীশ বলেছিলেন, ‘‘সন্তানের গায়ের রং যদি কালো হয়, তা হলে ভেবো না। কেউ প্রশ্ন করলে বোলো আমার সন্তান। কেউ সন্দেহ করবে না।’’
বিয়ে না করে সন্তান ধারণ নিয়ে তখনও বেশ ট্যাবু ছিল সমাজে। তা তিনি যতই তারকা হোন না কেন, নীনাকেও এ নিয়ে ভাবতে হয়েছিল। অন্তঃসত্ত্বা নীনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন অনেকেই। তবে নীনা বেশ মজা পেয়েছিলেন যখন তাঁর বন্ধুরা একজন সমকামী ব্যাঙ্কারকে বিয়ে করতে বলে তাঁকে।
দেশের প্রথম সারির ডিজাইনারদের অন্যতম নীনা আর ভিভের কন্যা মাসাবা গুপ্তা। তবে মাসাবার জন্মের আগে একরকম নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন নীনা। আত্মজীবনীতে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘প্রসবের দিন যত এগোচ্ছিল, ততই ভয় বাড়ছিল আমার। কারণ আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় টাকাই ছিল না বলতে গেলে। সাধারণ প্রসব ২ হাজার টাকাতেই হয়ে যেত। সেটুকু ছিল আমার কাছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করানোর খরচ পড়ত ১০ হাজার টাকা। সেই ক্ষমতা আমার ছিল না।’’
দিন কয়েক পড়ে অবশ্য ট্যাক্সের ৯ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ফেরত আসায় সমস্যার সমাধানও হয়।
সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই সমস্যায় পড়েছেন নীনা। অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে একবার বিয়ে ঠিক হয়েও শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায় তাঁর। নীনা জানিয়েছেন, তিনি বিয়ের পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন। পাত্র তাঁকে ফোন করে জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। নীনা লিখেছেন, কেন ওই মানুষটি তাঁকে বিয়ে করতে চাননি, তা আজও স্পষ্ট নয় তাঁর কাছে।
এখন অবশ্য বিবাহিত নীনা। তাঁর স্বামী বিবেক মেহরা পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তবে নীনার প্রথম স্বামীর নাম অম্লানকুসুম ঘোষ। আত্মজীবনীতে তিনি সেই বিয়ের কথা জানিয়েছেন। নীনা লিখেছেন, ‘‘লুকিয়ে বিয়ে করেছিলাম। এক বন্ধু ভুল করে বিয়ের কথা জানিয়েও ফেলে বাড়িতে। তবে সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। কারণ অম্লান চেয়েছিলেন আমি পরিবারে মন দিই। আর আমার জীবনের কাছে আরও অনেক কিছু চাওয়ার ছিল। গৃহবধূ হওয়া আমার ধাতে ছিল না।’’
টানা পাঁচ বছর নীনার সঙ্গে কথা বলেননি ভিভ। কারণ নীনা দেখা করতে যাওয়ায় ভিভের একটি সফর বাতিল করতে হয়েছিল। মাসাবার স্কুলের অ্যাডমিশন চলছিল তখন। নীনা জানিয়েছেন, মেয়ের অ্যাডমিশনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু, ভিভ সে কথা বোঝেননি।
সুভাষ ঘাই অপমান করেছিলেন তাঁকে। ‘চোলি কে পিছে’ গানের শ্যুটিংয়ের সময় কস্টিউম পরা নীনাকে দেখে সবার সামনেই সুভাষ চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। নীনাকে তাঁর স্তনের আকৃতি নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘না না না...কিছু ভরো।’’ অপমানিত নীনা পাঁচ বছর কথা বলেননি সুভাষের সঙ্গে।
নীনার শৈশব কেটেছে বাবা-মায়ের সমস্যায় ভরা সম্পর্ক দেখে। তাঁর মায়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন নীনার বাবা। শোকে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন নীনার মা।
বেশ কয়েক বছর আগে নিজের জন্য কাজ চেয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন নীনা। আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন, ওই পোস্ট করার পর তিনি ভয় পেয়েছিলেন, তাঁর বিখ্যাত ডিজাইনার মেয়ে এ ব্যাপারে কী বলবে! পরে যদিও নীনার এই সাহসের প্রশংসাই করেছিলেন মাসাবা।