নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ডিভোর্স এখন বিনোদন মহলে আলোচনার শীর্ষে। ভাঙতে চলেছে অভিনেতার ১০ বছরের দাম্পত্য। ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আলিয়া সিদ্দিকি। তবে আলিয়া-ই প্রথম নন। এর আগেও নওয়াজের জীবনে প্রেম এসেছে।
স্পষ্টবক্তা নওয়াজ নিজেই বিভিন্ন সময়ে নিজের সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন। মুম্বইয়ে একটি নাটকে অভিনয়ের সময়ে তিনি সুনীতা রাজওয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। সুনীতাও ছিলেন তাঁর মতো দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ছাত্রী।
নওয়াজউদ্দিন তখন ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত পাওয়ার চেষ্টা করছেন। থাকতেন মুম্বইয়ের মীরা রোডে। রোজ তাঁর বাড়িতে আসতেন সুনীতা। দেওয়ালে খুদে খুদে অক্ষরে তাঁর আর নওয়াজের নাম লিখতেন। দু’জনে অনন্ত সময় কাটাতেন মুম্বইয়ের বিভিন্ন স্টেশনে, লোকাল ট্রেনে গল্প করে।
কিন্তু সে সম্পর্ক ভেঙে যায় সুনীতার তরফেই। অভিনেতা জানিয়েছেন, মুম্বই থেকে সুনীতা গিয়েছিলেন অন্য শহরে, তাঁর নিজের বাড়িতে। সেখান থেকে ফিরে আচমকাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সুনীতা। নিজেই ফোনে জানান, তিনি আর নওয়াজের সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী নন। তবে সুনীতা পরে জানান, দু’জনের চিন্তাধারার মধ্যে মিল না থাকায় তিনি সম্পর্ক থেকে সরে এসেছিলেন।
এর পর নওয়াজউদ্দিন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। নিজেই জানিয়েছেন, সম্পর্ক হারানোর শূন্যতায় আত্মঘাতী হওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি সেই ভাবনা থেকে সরে আসেন। এই আঘাত থেকে বার হয়ে আসতে তাঁর সময় লেগেছিল।
সুনীতাকে ভুলতে নওয়াজ তাঁর ঘরের দেওয়ালে চুনকাম করে ফেলেন। যাতে সুনীতার লেখা তাঁদের দু’জনের নাম আর দেখতে না হয়। তাঁর ধারণা, সুনীতা তাঁর মতো স্ট্রাগলিং অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাননি।
২০০৯ সালে বান্ধবী অঞ্জনা কিশোর পাণ্ডেকে বিয়ে করেন নওয়াজউদ্দিন। তার আগে দু’জনে দীর্ঘদিন লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন। বিয়ের পরে অঞ্জনার নাম হয় আলিয়া সিদ্দিকি।
আরও একটি বিয়ের কথা নওয়াজউদ্দিন জানিয়েছেন। তাঁর মায়ের পছন্দ করা মেয়ে শীবাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। শীবা ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মেয়ে। কিন্তু সেই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নওয়াজের দাবি, শীবার দাদা তাঁদের সম্পর্কের মাঝে চলে আসতেন। ফলে সেই দাম্পত্য মাত্র দু’মাসে ভেঙে যায়।
নওয়াজউদ্দিন ও আলিয়ার মধ্যে তীব্র ঝগড়া লেগেই থাকত। দাম্পত্য বিবাদ সহ্য করতে না পেরে নওয়াজকে ছেড়ে আলিয়া চলে গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের ডিভোর্স হয়নি। সেই সময়েই মায়ের পছন্দ করা পাত্রী শীবাকে বিয়ে করেছিলেন নওয়াজ।
শীবার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে আবার ফিরে আসেন প্রথম স্ত্রী আলিয়া। কিন্তু স্ত্রী আলিয়া, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরপুর সংসারের মাঝেও নওয়াজউদ্দিনের জীবনে পরকীয়া সম্পর্ক এসেছে।
‘মিস লাভলি’ ছবির শুটিংয়ের সময়ে সহঅভিনেত্রী তথা প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া নীহারিকা সিংহের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল নওয়াজের। তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের কথাও স্বীকার করেছেন নওয়াজউদ্দিন।
নীহারিকার অভিযোগ, নওয়াজ তাঁকে বিয়ে করার বিষয়ে কোনওদিন আগ্রহ দেখাননি। শুধু শারীরিক সম্পর্কের জন্যই তিনি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন বলে নীহারিকার দাবি। বছর দেড়েকের মাথায় তাঁদের প্রেম ভেঙে যায়।
সুজান নামে এক তরুণীর সঙ্গে নওয়াজউদ্দিনের আলাপ হয়েছিল নিউ ইয়র্কে। কিন্তু তাঁর জন্য মুম্বইয়ে এসে থাকতেন সুজান। দীর্ঘদিন লিভ ইন করেন তাঁরা। তবে সুজান স্থায়ী ভাবে মুম্বইয়ে খাকতেন না।
পাশাপাশি, এক বার বিদেশে এক রেস্তরাঁর ওয়েট্রেসের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ‘দ্য লাঞ্চবক্স’-এর অভিনেতা।
সম্প্রতি ইদ পালনের জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বুধনায় নিজের পরিবারের কাছে গিয়েছেন নওয়াজউদ্দিন। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে তাঁর এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের কোভিড ১৯ পরীক্ষা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
তবে নিয়মমতো তাঁদের সবাইকেই ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই স্ত্রী আলিয়ার কাছ থেকে ডিভোর্সের নোটিস। আলিয়া জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষে এই দাম্পত্য সহ্য করা আর সম্ভব হচ্ছিল না।
সম্প্রতি আলিয়া সিদ্দিকি নিজের পুরনো পরিচয় অঞ্জলি কিশোর পাণ্ডে-তে ফিরে গিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি এখন পীযূষ পাণ্ডের প্রণয়ী। কিন্তু বিনোদন জগতের পরিচিত নাম পীযূষ এই গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নিজের অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক আছে।
আলিয়াও টুইটার হ্যান্ডল খুলে দাবি করেছেন, এই মুহূর্তে কারও সঙ্গেই তিনি বিশেষ কোনও সম্পর্কে লিপ্ত নন। তবে ডিভোর্স প্রসঙ্গ বা সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ এঁটেই আছেন ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর অভিনেতা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি।