অগণিত দর্শকের হৃদয়ে এখনও দোলা দিয়ে যায় 'নার্গিস' অভিনীত ছবিগুলি
বড় তারকারা যেমন খুশি রাস্তায় বেরতে পারেন না, তাঁদের ঘিরে ভিড় জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নিরাপত্তার সমস্যা হয়। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত সে সবের ধার ধারতেন না। বাইরে বেরোলে কেবল বোরখা পরে নিতেন। তার পর যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতেন তিনি, রাস্তার খাবার খেতেন, কেউ টেরটি পেত না। বোরখাই ছিল নার্গিসের রক্ষাকবচ।
কিন্তু এক বার অসাবধানতায় বিপদ ঘটল দিল্লিতে। সে কথা বলতে বলতে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন অভিনেত্রীর মেয়ে নম্রতা। যাঁর চোখে মা আজও জীবন্ত, যেন সব সময় ছুঁয়ে আছেন পরিবারকে। নার্গিসের মৃত্যুবার্ষিকীতে নম্রতা শোনালেন মজাদার কিছু ঘটনা।
দিল্লিতে এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলেন মা-মেয়ে। বিকেলের দিকে হইহই করে বেরিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। পালিকা বাজার তখন সরগরম, তার মধ্যে কেউ ভাবতেই পারেননি, নার্গিস উপস্থিত হবেন সেখানে। কিন্তু হঠাৎ গরম লাগছে বলে বোরখাটা খুলে ফেললেন নার্গিস। আর ব্যস্, যা হয়! গোটা বাজার এক দিকে ঝুঁকে পড়ল। নার্গিসকে দেখতেই পাওয়া যায় না, ভিড়ের মধ্যে হাঁসফাঁস করছিলেন। ভক্তদের পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম 'মাদার ইন্ডিয়া'-র নায়িকার। ভাগ্যিস শেষমেশ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন নম্রতা এবং নার্গিসের বন্ধুরা। একটা জিপে উঠে পালিয়ে যান কোনও মতে।
বলতে বলতে হেসে ওঠেন নম্রতা দত্ত, ‘‘সত্যিই, সে সব কী দিন ছিল! মনে হয় এই তো মা হেসেখেলে পাশেই রয়েছেন।প্রাণোচ্ছ্বল মানুষটা।এত জীবন্ত!’’
মায়ের কথা বলতে বলতে স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠেন ‘মুন্নাভাই’-এর বোন। নম্রতা বলে চলেন, ‘‘মা সিনেমা দেখতে যেতেও খুব ভালবাসতেন। বোরখা পরে সিনেমা হলে ঢুকে যেতেন। বেরিয়ে টপাটপ ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন দিলখোলা, হুজুগে। আর মায়ের বন্ধুরা কেউ তারকা ছিলেন না, সকলেই দিল্লিতে কর্মরত। তাই প্রায়ই মায়ের সঙ্গে দিল্লি যেতাম আমরা ভাই-বোনেরাও।’’
নার্গিসের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন অভিনেতা সঞ্জয় দত্তও। মায়ের ছবি দিয়ে লিখলেন, ‘কোনও দিন তোমায় ভুলতে পারব না মা। আমার জীবনীশক্তি তুমি, ভরিয়ে দিয়েছ আমার ছোটবেলা। যদি আমার স্ত্রী-সন্তানরাও তোমাকে পেত! ওদের সঙ্গে দেখা হল না তোমার। প্রতিদিন তোমাকে মনে পড়ে।’
নার্গিসের আর এক কন্যা প্রিয়া দত্ত রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবী। মাকে স্মরণ করে তিনি আরও বেশি করে কাজে ব্রতী হওয়ার সংকল্প করলেন। মা নার্গিস এবং বাবা সুনীল দত্তের স্মৃতিতেই প্রিয়া গড়ে তুলেছেন ‘নার্গিস দত্ত ফাউন্ডেশন’। যা দুঃস্থদের সেবায় বাঁচিয়ে রেখেছে অজস্র স্মৃতি।
পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশক, হিন্দি ছবির জগতে তুফান তুলেছিলেন অভিনেত্রী নার্গিস। ১৯৮১ সালে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মারা যান অভিনেত্রী। তবে বলিউডে তিনি আজও অমর। অগণিত দর্শকের হৃদয়ে এখনও দোলা দিয়ে যায় 'নার্গিস' অভিনীত ছবিগুলি।