ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
এ বছরের পুজোটা নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদের জন্য একদম অন্য রকম। তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এই প্রথম তাঁদের ছবি মুক্তি পাচ্ছে পুজোর সময়। এই প্রথম তাঁরা থ্রিলার ছবি বানিয়েছেন। বসার ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁদের ছবির পরিসর অনেকটাই বেড়েছে। এই প্রথম দেশের রাষ্ট্রপতির গল্প বড় পর্দায় দেখবেন দর্শক। এই প্রথম কোনও বাংলা ছবির শুটিং রাইসিনা হিল্সে হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩-এর পুজোটা দু’জনের জন্য সত্যিই ‘স্পেশাল’।
‘রক্তবীজ’ ছবির শুটিংয়ে (বাঁ দিক থেকে) আবীর চট্টোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
২০১৪ সালে খাগড়াগড়-কাণ্ড ঘিরে ‘রক্তবীজ’-এর গল্প বুনেছেন পরিচালকদ্বয়। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আধারে তৈরি চরিত্রে দেখা যাবে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে কোনও বৈগ্রহিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে পর্দায় গল্প বলতে হলে স্বাভাবিক ভাবেই বাস্তবের চেয়ে খানিক আলাদা করে চরিত্র গড়ে তুলতে হয়। শিবপ্রসাদ-নন্দিতাও তাই করেছেন। গল্পে ভিক্টরের চরিত্রের নাম অনিমেষ। অনিমেষের দিদিকে দেখা যাবে হুইলচেয়ারে বসে। বাস্তবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিদির সঙ্গে সে দিকে থেকে কোনও মিল নেই। তবে বাস্তবে ভাই-বোনের গল্প সিনেমাতেও অব্যাহত।
সময়ের সঙ্গে কাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। কী করে রাজি হলেন তিনি? নন্দিতার উত্তর, ‘‘শিবুই করিয়েছে। তবে আমি বলেছিলাম, বলেই দেখো। কী আর হবে? বড় জোর ‘না’ বলবেন। দোলের আগের দিন একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল।’’ শিবপ্রসাদ জানালেন, মেসেজ পাঠিয়ে বার বার ফোনটা দেখছিলাম। কোনও উত্তর নেই। পর দিন সকাল ১১টায় উত্তর পেলাম। সাহস করে ফোন করে নিজের পরিচয় দিলাম। দিয়ে বললাম, জানি না আমাদের কথা আপনি শুনেছেন কি না বা আমাদের কোনও ছবি দেখেছেন কি না। শুনে বললেন, ‘‘যদি না শুনতাম বা না জানতাম, তা হলে বোধহয় মেসেজের উত্তর পেতেন না।’’ আমি তার পর ছবির কথা বললাম। তাতে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সুখ্যাতি যেমন শুনেছি, আপনারা নিশ্চয়ই আমার কুখ্যাতি শুনেছেন। আমি খুব একটা সহজ মানুষ নই।’ তার পর তো সামনাসামনি দেখা করে চিত্রনাট্য দিলাম। সে দিনই যাবতীয় কথা হয়ে গেল। এবং পর দিনই চুক্তিপত্রে সই করলেন। অত্যন্ত পেশাদার মানুষ উনি।’’
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে গল্প ফাঁদার ভাবনা দু’জনের বহু দিনের। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে মনে হয়েছিল, এ বার ছবিটা বানিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, কোভিডের আগে পর্যন্ত দর্শক এক ভাবে সিনেমা দেখেছেন। লকডাউনের পর নতুন কিছু করার তাগিদ তৈরি হয়। তাঁদের মনে হয়, এ বার নতুন কিছু করতে হবে। তাই ‘গ্র্যান্ড স্কেলে’ একটা ছবি তৈরির ইচ্ছে জাগে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের মনে। তাঁদের ছবি মূলত পারিবারিক-ড্রামা। গল্পের প্রেক্ষাপট বেশির ভাগ সময় চার দেওয়ালের মধ্যেই থাকে। কিন্তু এ বার তাঁরা বসার ঘরের বাইরে বেরোনোর কথা ভেবেছেন। আউটডোর শুটিং হয়েছে বহু দিন। প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে তাঁদের ছবিতে। সন্ত্রাসবাদ, থ্রিলার, রহস্য— সবই রয়েছে এই গল্পে। কিন্তু শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সিনেমার মূল ইউএসপি-ই তো পারিবারিক গল্প। দর্শক এত বছর ধরে সুন্দর গল্পের টানেই হলে গিয়েছেন বার বার। সে সব না থাকলে তাঁরা প্রতারিত মনে করবেন না তো? শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘তা কিন্তু একদম নয়। এটা সম্পূর্ণ একটা বাঙালি গল্প। দুর্গাপুজো আছে, বাঙালি রাষ্ট্রনায়কের গল্প আছে, তাঁর ঘরে ফেরার গল্প আছে, ভাই-বোনের গল্প আছে। কিন্তু ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে, এটা আমাদেরই ছবি। আমাদের সিগনেচার রয়েছে। রাষ্ট্রনায়কের ব্যক্তিগত জীবনের গল্পই আমাদের ইন্টারেস্টিং লেগেছিল।’’
দুর্গাপুজোর আবহে ‘রক্তবীজ’-এর গল্প। তাই প্রথম বার পুজোর ছবির দৌড়ে নেমেছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদও। তাঁদের টিমের সকলে খুবই খুশি। এই প্রথম পুজোয় তাঁদের ছবিরও প্রিমিয়ার হবে। পরিবারের সকলের সঙ্গে পুজোয় নিজেদের ছবি দেখতে যেতে পারবেন। প্রায় হইহই কাণ্ড! কিন্তু পুজোয় তো মোট চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বক্স অফিসে প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনও রকম ভয় করছে না? নন্দিতার সহজ উত্তর, ‘‘সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী আর দশমী। দর্শক চার দিনে চারটে ছবি দেখে নেবেন। এতে আর ভয় কী!’’ শিবপ্রসাদ যোগ করলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার মতো। নিজের মাঠে তো রোজই খেলি। এটা যেন লর্ডসে খেলতে নামছি!’’ হল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে? নন্দিতার আত্মবিশ্বাসী উত্তর, ‘‘আমরা তো নতুন পরিচালক নই। এত বছর ধরে ভাল ভাল ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছি। ডিস্ট্রিবিউটাররা আমাদের প্রাপ্য নিশ্চয়ই দেবেন। এ নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করে কোনও লাভ নেই।’’
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির গল্প দেখানো হচ্ছে ছবিতে। তার উপর, গল্পের বড় অংশ জু়ড়ে রয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত। সেন্সর বোর্ড নিয়ে চিন্তা ছিল না? নন্দিতা বললেন, ‘‘লেখার সময় শিল্পী হিসাবে যা ভেবেছিলাম, মন খুলে লিখেছি। পরে যা হবে, দেখা যাবে ভেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু শিবুর প্ল্যান বি তৈরি ছিল। অনেক জায়গায় আপত্তি হতে পারে ভেবে ও শুটও করে রেখেছিল। সেন্সর বোর্ড কিন্তু খুব সহযোগিতা করেছে। এই ছবি যে একদম আনকাট ইউ/এ শংসাপত্র পাবে, আমরা ভাবতেই পারিনি!’’