‘বিগ বস’-এর মতো বর্ণময় এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ভারতীয় বিনোদন জগতে বিরল। অসংখ্য দর্শক অধীর আগ্রহে প্রথম দিন থেকে এই শো-এর অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু বিগ বস-এর মুগ্ধ ভক্তরাও জানেন না, এই শো ঘিরে লুকিয়ে আছে কত রহস্য।
এই শো কি পুরোটাই আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকে? বাড়িতে যে অতিথি আসবেন, তাঁর সম্পর্কে কি আগে থেকেই বাড়ির লোকজন জানতে পারেন? যাঁরা জয়ী হন, তাঁদের নাম কি আগে থেকেই স্থির করা থাকে? আসুন, জেনে নিই সে রকমই কিছু রহস্য।
প্রতি মরসুমে বিগ বস-এর বাড়িতে আসা নতুন অতিথিকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ থাকে না। তাই শো শুরুর আগে প্রত্যেক প্রতিযোগীর পরিচয় গোপন রাখা হয়।
প্রতিযোগীদের আসল নাম-পরিচয় গোপন রেখে একটা করে সাঙ্কেতিক নাম বা কোড নেম দেওয়া হয়। যাতে ইউনিটের ক্রু রাও কিছু টের না পান।
বিগ বস-এর ত্রয়োদশতম মরসুম বা সিজন থার্টিন-এর কথা-ই ধরুন। সেখানে সিদ্ধার্থ শুক্লর সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘হাল্ক’। রশ্মির নাম ‘দেশি কুড়ি’। দেবলীনার নাম ‘বহুরানি’। মাহিরার নাম ‘ডিভা’। শেহনাজের নাম ‘গীত’। আসমের নাম ‘হাঙ্ক’। পরশ ছাবড়ার নাম ছিল ‘প্রিন্স’। আরতির নাম ‘সিঙ্ঘম’।
‘বিগ বস’ শো-এর ইউএসপি হল প্রতিযোগীদের সব কাজ নিজেদের হাতেই করতে হয়। ঘর পরিষ্কার, রান্না করা, বাসন মাজার মতো ঘরগৃহস্থালির কাজ নিজেদের হাতেই করতে হয়। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে খাবার এলে তাতে আনন্দের সীমা থাকার কথা নয়। বাঁধভাঙা আনন্দই হয় প্রতিযোগীদের যখন খাবার আসে স্বয়ং সলমনের বাড়ি থেকে।জানলে আশ্চর্য হবেন, প্রত্যেক উইকএন্ডে বিগ বস-এর বাড়িতে সবার জন্য থাকে সল্লু মিয়াঁর বাড়ির রান্না।
বিগ বস-এর নিয়মিত দর্শকরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে এই বাড়ির অন্দরসজ্জার অন্যতম উপকরণ আয়না। চারদিকে সাজানো আছে বিভিন্ন মাপের আয়না। তবে এ গুলো কিন্তু সবই একমুখী আরশি বা ওয়ান ওয়ে মিরর।
এর মাধ্যমে ইউনিটের ক্রু-রা সবাই প্রতিযোগীদের দেখতে পান। কিন্তু প্রতিযোগীরা তাঁদের কাউকে দেখতে পান না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা আয়নার পিছন থেকে ক্রু-দের হাসি বা হাল্কা কথাবার্তার শব্দ শুনতে পান।
যে উপলক্ষই আসুক না কেন, বিগ বস-এর বাড়িতে সুরার প্রবেশ নৈব নৈব চ। ধূমপানের অনুমতি আছে। কিন্তু সুরাপান নিষিদ্ধ।
বিগ বস-এর প্রতিযোগীদের জন্য থাকে মোটা অঙ্কের জরিমানার আশঙ্কা। কোনও কারণ ছাড়া শো ছাড়লে অথবা কাউকে বিগ বস নিজেই বহিষ্কার করলে সেই প্রতিযোগীকে দিতে হবে দু’ কোটি টাকা।
বিগ বস-এর সেটে ঘড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেটে কোনও ঘড়ি নেই। প্রতিযোগীদের সঙ্গেও ঘড়ি থাকে না। সূর্যের অবস্থান দেখে প্রতিযোগীদের সময় আন্দাজ করে নিতে হয়।
ঘড়ি ছাড়া আরও অনেক জিনিস রেখে আসতে হয় বিগ বস-এর বাড়ির বাইরেই। টুপি, বই, রোদচশমা, দামী ব্র্যান্ডেড জুতো, ব্লো ড্রায়ার বা কোনও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায় না। নিয়ম পালন হচ্ছে কিনা দেখার জন্য কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয় প্রতিযোগীদের জিনিসপত্র।
বিগ বস-এর প্রতিযোগীরা ঠিকমতো ঘর সাফাই না করলে ময়দানে নামেন স্বয়ং বিগ বস। তিনি পেশাদার হাউজ কিপিং-এর লোক পাঠিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করান।
দীর্ঘ তিন মাস প্রতিযোগীদের থাকতে হয় বিগ বস-এর বাড়িতে। এক বারে এত জিনিস নিয়ে প্রবেশ সম্ভব নয়। তাই প্রতিযেোগীদের একটি যোগাযোগের নম্বর দিয়ে রাখতে বয়। যখন যা কিছু দরকার, ওই নম্বরে ফোন করে চেয়ে নেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এই রিয়েলিটি শো কোনওভাবেই স্ক্রিপ্টেড নয়। পাশাপাশি, প্রতিযোগীদের ভোট গণনার জন্য পেশাদার অডিটরদের নিয়োগ করা হয়। তাঁরা স্বাধীন ভাবে কাজ করেন। প্রোডাকশন টিমের সঙ্গেও তাঁদের কোনও সম্পর্ক থাকে না।
জরুরি অবস্থার মোকাবিলার জন্য বিগ বস-এর সেটে সর্বক্ষণ থাকেন একজন চিকিৎসক, একজন মনোবিদ। হাজির থাকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স-ও। যাতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।
বিগ বস-এর বাড়িতে কোনও মেক আপ শিল্পী থাকেন না। প্রতিদিন প্রতিযোগীরা নিজেরাই নিজেদের সাজান। শুধুমাত্র ফাইনালের দিন তাঁদের জন্য মেক আপ শিল্পী এবং পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়।
বিগ বস-এ শনিবার হল ছুটির দিন। সে দিন শুটিং বন্ধ। যদি বড়সড় কোনও ঝামেলা হয় প্রতিযোগীদের মধ্যে, তবে আলাদা কথা। সেটা শুটিং করে দেখানো হয় সোমবারের দৃশ্যের সঙ্গে। সাধারণত শনিবার রাখা হয় যাতে প্রতিয়োগীরা সেদিন ব্যক্তিগত কাজ সারতে পারেন।
চ্যানেলের অনুমতি ছাড়া প্রতিযোগীরা মিডিয়ার সামনে বিগ বস সংক্রান্ত কোনও কথা বলতে পারেন না।
অনেকেরই প্রশ্ন, বিগ বস-এর ব্যাকড্রপে কার গলা শোনা যায়? সে কণ্ঠ দেশের বিখ্যাত ভয়েস ওভার শিল্পী অতুল কপূরের। তিনি ‘বিগ বস’ ছাড়াও ‘মার্ভেল’ এবং ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ সিরিজে ভয়েস ওভার করেছেন।