কেরিয়ারের মাঝে তিনি ভিন্ন স্বাদের চরিত্রাভিনয়ে সরে এসেছিলেন। কিন্তু দর্শক তাঁকে মনে রেখেছে পর্দার খলনায়ক হিসেবেই। বলিউডের খলনায়কদের মধ্যে নিজের অভিনয় প্রতিভায় উজ্জ্বল জায়গা করে নিয়েছেন মুকেশ ঋষি।
মুকেশের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৯ এপ্রিল, জম্মুর কাঠুয়ায়। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে মুকেশের কোনওদিন অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। চণ্ডীগড়ের কলেজ থেকে পাশ করার পরে তিনি মুম্বইয়ে দু’বছর পারিবারিক ব্যবসার কাজ সামলান।
কলেজজীবনে মুকেশের বান্ধবী ছিলেন ইন্দো-ফিজিয়ান তরুণী কেশনী। পড়াশোনা শেষ করে কেশনী ফিজিতে ফিরে যান। তাঁর টানে মুকেশও চাকরি নিয়ে পাড়ি দেন ফিজি। কেশনী ফিজিতে তাঁদের পারিবারিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।
বিয়ের পরে স্ত্রী কেশনীকে নিয়ে মুকেশ পাড়ি দেন নিউজিল্যান্ড। সেখানে তিনি মডেলিংয়ের কোর্স করেন। এর পর কাজের পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেন । কিন্তু কাজের চাপে মডেলিংয়ের জন্য সময় দিতে পারছিলেন না তিনি।
সাত বছর নিউজিল্যান্ডে থাকার পরে সস্ত্রীক মুকেশ ফিরে আসেন ভারতে। রোশন তানেজার প্রতিষ্ঠানে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তখন মনস্থির করে ফেলেছেন অভিনয়কেই পেশা করবেন। নতুন জীবনে শূন্য থেকে শুরু করেন তিনি।
১৯৮৮ সালে তাঁর কেরিয়ার শুরু দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে। তামিল ও তেলুগু ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান মুকেশ। তার পর তিনি পা রাখেন বলিউডে।
পরে এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ জানান, তিনি বিভিন্ন প্রযোজকের দরজায় ঘুরে ঘুরে কাজ চেয়েছেন। তাঁর চেহারার বৈশিষ্ট যে কাজ পেতে সাহায্য করেছে, সে কথা স্বীকার করেন তিনি।
১৯৯০ সালে ‘ঘায়েল’ ছবিতে অভিনয় করে প্রথম বলিউডে পা রাখেন মুকেশ। ‘বাজি’ ছবিতে অভিনয়ে সময় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় আমির খানের। সেখানেই আমির তাঁকে ‘সরফরোশ’ সিনেমার পরিকল্পনা জানান। পরে ‘সরফরোশ’-এ মুকেশকে সুযোগও দেন আমির।
মুকেশের ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবি হল ‘লোফার’, ‘রাম শাস্ত্র’, ‘ঘাতক’, ‘মৃত্যুদাতা’, ‘গুপ্ত’, ‘লাল বাদশা’, ‘অর্জুন পণ্ডিত’, ‘পুকার’, ‘কুরুক্ষেত্র’ এবং ‘কোই মিল গ্যয়া’।
বলিউডে প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করার পরেও মুকেশের কেরিয়ারে এসেছিল ভাটার টান। সুযোগ কমতে থাকে তাঁর কাছে। বাধ্য হয়ে ভোজপুরি ও পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
তবে তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে সবেথেকে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘গুন্ডা’। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে মুকেশ অভিনয় করেছিলেন ‘বুল্লা’ চরিত্রে। ছবিতে তাঁর মুখের সংলাপও দর্শকরা পছন্দ করেছিলেন। প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর সংলাপ বলার কায়দাও।
মুকেশ কোনও দিন একই ধরনের চরিত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে যেতে চাননি। স্টিরিয়োটাইপ হওয়ার প্রবণতা আটকাতে তিনি পজিটিভ শেডের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু দর্শকদের কাছে তাঁর পর্দার খলনায়ক ভাবমূর্তির কদর অনেক বেশি।
মুকেশের ছেলে রাঘব ঋষিও এক জন অভিনেতা। তাঁর মেয়ে এখনও পড়াশোনা করছেন। অভিনেতা হিসেবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুকেশ আশাবাদী।
তাঁর পরিবারে কোনও দিন ছবির জগতের সঙ্গে পরিচিত কেউ ছিলেন না। মুকেশের কথায়, তাই তাঁকে সঠিক পথ দেখানোর জন্যেও কেউ ছিলেন না সামনে। নিজের চেষ্টায় বলিউডে জায়গা করে নিতে সমস্যা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মুকেশের দাবি, জীবনের এই স্ট্রাগলের পর্ব তিনি উপভোগ করেছেন।
তবে একইসঙ্গে মুকেশের স্বীকারোক্তি, তিনি যাঁর যাঁর কাছে সাহায্য চেয়েছেন, কেউ তাঁকে ফেরাননি। সেই খড়কুটো অবলম্বন করেই তিল তিল করে কেরিয়ার সাজিয়েছেন তিনি।
নিজের সাফল্যের অন্যতম নেপথ্য কারিগর বলে মনে করেন নিজের শারীরিক গঠনকে। এখনও নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তিনি। যদিও তাঁর আক্ষেপ বলিউডের ছবিতে তথাকথিত খলনায়কের ভূমিকা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
সেইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, খলনায়ক না থাকলে নায়কের কৃতিত্ব বর্ণময় হবে কী করে? খলনায়ক না থাকলে চিত্রনাট্যে ম্লান হয়ে যাবে নায়কের ভূমিকাও। মনে করেন মুকেশ ঋষি।