সাড়া জাগানো ছবি দিয়ে আত্মপ্রকাশ বলিউডে। নজর কেড়েছিলেন অভিনয়েও। তার পরেও প্রত্যাশিত জায়গা থেকে দূরেই রয়ে গেলেন মুগ্ধা গডসে।
পুণের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে মুগ্ধার জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৬ জুলাই। মরাঠি মাধ্যমের স্কুল নূতন মরাঠি বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পরে তিনি বাণিজ্যে স্নাতক হন মরাঠাওয়াড়া মিত্র কলেজ অব কমার্স থেকে।
কলেজে পড়ার সময় আর পাঁচজন পড়ুয়ার মতো মুগ্ধাও ছোটখাটো কাজ করতে শুরু করেছিলেন। পেট্রোল পাম্পের কর্মী হিসেবে এক সময় তাঁর দৈনিক উপার্জন ছিল ১০০ টাকা।
এর পর তিনি একটি জিমন্যাসিয়ামে কাজ নেন। সেখানে যাঁরা শরীরচর্চা করতে আসতেন, তাঁরা মুগ্ধার উচ্চতা দেখে তাঁকে মডেলিং করতে বলতেন। তাঁদের কথা শুনে মডেলিং শুরু করলেন মুগ্ধা। পাশাপাশি অংশ নিতেন স্থানীয় ফ্যাশন শো-এও।
সাফল্য আসছিল নিয়মিত পথেই। ক্রমশ ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন মুগ্ধা। পুণে থেকে এ বার তাঁর নিত্য গন্তব্য হল মুম্বই। অংশ নিতে লাগলেন বড় ফ্যাশন শো-এ। তাঁকে দেখা যেতে লাগল নামী ফ্যাশন পত্রিকাতেও।
টেলিভিশনের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেও সে সময় মুগ্ধা ছিলেন পরিচিত মুখ। শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনও জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রথম সারির মডেল হিসেবে পরিচিত হন মুগ্ধা।
মডেলিং করতে করতেই তাঁর পরিচয় হয় পরিচালক মধুর ভণ্ডারকরের সঙ্গে। সে সময় মধুর তাঁর ‘ফ্যাশন’ ছবির জন্য অভিনেতা নির্বাচন করছিলেন। দীর্ঘাঙ্গী মুগ্ধাকে তাঁর পছন্দ হয়। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় মুগ্ধার প্রথম ছবি, ‘ফ্যাশন’।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, কঙ্গনা রানাউতের পাশাপাশি নবাগত মুগ্ধার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছিল এই সিনেমায়। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছিল।
মডেলিং কেরিয়ারের প্রথম দিকে মুগ্ধার আলাপ হয়েছিল মিঠুন পুরন্দরের সঙ্গে। সে সময় মিঠুনও ছিলেন একজন উঠতি মডেল।
কিন্তু পরে টিনসেল টাউনের গভীরে পরিচিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিঠুনের থেকে মুগ্ধার দূরত্ব বাড়তে থাকে। মানসিকতার পার্থক্যই সম্পর্কের দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় তাঁদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙেই যায়।
মুগ্ধার অভিনয় মধুর ভণ্ডারকরের এতই পছন্দ ছিল, তিনি ‘জেল’ ছবিতেও মুগ্ধাকে সুযোগ দেন। কিন্তু ছবিটি সমালোচক মহলে প্রশংসিত হলেও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম থেকেই মুগ্ধার পরিচয় ছিল মধুরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে। কেবল ‘মেন্টর’-ই নন। মধুর নাকি মুগ্ধার বিশেষ অন্তরঙ্গ ছিলেন, শোনা যেত এমন গুঞ্জনও।
‘জেল’-এর পরে মুগ্ধা অভিনীত ‘হেল্প’ এবং ‘গলি গলি চোর হ্যায়ঁ’ ছবি দু’টি ব্যর্থ হয়। তিনি আবার সুযোগ পান মধুরের ইউনিটে। ২০১২ সালে মুক্তি পায় মধুর ভণ্ডারকর পরিচালিত ‘হিরোইন’।
সে সময় ‘হিরোইন’ ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে। প্রথমে ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের। কিন্তু অভিযোগ, নিজের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার কথা মধুরের কাছে গোপন করেছিলেন অ্যাশ।
কিছু দিন শ্যুটিঙের পরে ঐশ্বর্যা সরে দাঁড়ান ‘হিরোইন’ থেকে। পরিবর্তে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন করিনা কপূর। কিন্তু ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এর পর থেকেই তিক্ত হয়ে পড়ে মধুর এবং মুগ্ধার সম্পর্ক।
মধুর ছাড়াও প্রযোজক মধু মান্টেনার সঙ্গে মুগ্ধার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই এই গুঞ্জন অস্বীকার করেন।
এর পর মুগ্ধা নাকি একইসঙ্গে রণবীর শোরে এবং রাহুল দেবের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন বলে গুঞ্জন। যদিও মুগ্ধা পরে জানান, রণবীর তাঁর নিছক বন্ধু। তবে রাহুলের জন্য তাঁর ‘বিশেষ’ অনুভূতি আছে। মডেল তথা অভিনেতা রাহুলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় জয়পুরে এক নামী ওয়েবসাইট মালিকের বিয়ের আসরে।
১১ বছরের দাম্পত্য কাটিয়ে রাহুলের প্রথম স্ত্রী রীনা ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ২০০৯ সালে। তাঁদের একমাত্র সন্তান সিদ্ধান্ত বিদেশে থাকেন। বিপত্নীক রাহুল এখনও মুগ্ধার সঙ্গে সম্পর্কে আছেন। তবে বিয়ের ব্যাপারে তাঁরা এখনও কিছু জানাননি।
মুগ্ধার বাকি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার রিটার্নস’, ‘সত্যাগ্রহ—ডেমোক্র্যাসি আন্ডার ফায়ার’ এবং ‘কাগজ কে ফুলস’। তবে বলিউডে প্রত্যাশিত জায়গা তাঁর কাছে অধরাই থেকে গিয়েছিল। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেও অভিনয় করেছেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা পাননি।
২০১৫ সালের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়েই গিয়েছেন মুগ্ধা। ছবির পাশাপাশি ফিল্মি ইভেন্টেও তাঁকে বেশি দেখা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি সক্রিয় নন। জানিয়েছেন, বলিউডে পছন্দসই চরিত্র পাননি বলে ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করতে তিনি রাজি হননি।
ছবিতে অভিনয় না করলেও মডেলিং করেন মুগ্ধা। অর্থাৎ যে খান থেকে তিনি শুরু করেছিলেন, ফিরে গিয়েছেন সেখানেই। তবে পেশাদার জীবনের ওঠাপড়া ছায়া ফেলেনি ব্যক্তিগত জীবনে। মুগ্ধা জানিয়েছেন, তিনি রাহুলের সঙ্গে সুখে আছেন। আনুষ্ঠানিক বিয়ে না হলেও মনে মনে তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। (ছবি: নেট মাধ্যম)