সড়ক ২ ছবির একটি দৃশ্য।
সড়ক ২
অভিনয়: সঞ্জয় দত্ত, আলিয়া ভট্ট, পূজা ভট্ট, আদিত্য রয় কপূর, যিশু সেনগুপ্ত
পরিচালনা: মহেশ ভট্ট
এত ধিক্কার-বয়কটের কী যে দরকার ছিল! ফাঁক গলে খানিক বিজ্ঞাপন হল। যাঁরা জানতেন না যে মহেশ ভট্ট নতুন ছবি করছেন, তাঁরাও জানলেন। সেই জন্যই হয়তো আরও কয়েক জন সময় নষ্ট করতে বাধ্য হলেন। ভাবলেন অন্তত প্রচণ্ড নিন্দা করবেন, কিন্তু সে গুরুত্বটুকু দেওয়ার জন্যও তো রসদ লাগে। ‘সড়ক ২’-এর নিন্দার জন্য আরও ডেটা খরচ করতেও ইচ্ছে হবে তো?
এক মৃত্যু, তাকে ঘিরে বিতর্ক। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। নেপোটিজম নিয়ে হাহাকার। ফোনের মেসেজ ফাঁস। একে বাঁচাতে গিয়ে ওকে ডোবানো। সবের কেন্দ্রে মহেশ ভট্ট। দুই কন্যাকে নিয়ে তারই মাঝে নয়ের দশকের ছবি ‘সড়ক’-এর দ্বিতীয়। আবারও ন্যায়-অন্যায়ের টানাপড়েন। ভালর আগে মন্দ, নাকি মন্দেরই জয়? সে যা-ই হোক, হইচই তো হবেই। আর তা হয়েছে বলেই কয়েক জন হটস্টার খুলে বসেও পড়েছেন সড়ক ২ দেখতে। অথচ আলিয়া ভট্ট এবং আদিত্য রায় কপূর ছাড়া এ ছবিতে নতুন কিছুই নেই। ঠিক যেমন মহেশ ভট্টকে নিয়ে বিতর্কে দুই তরুণ (সুশান্ত সিং রাজপুত এবং রিয়া চক্রবর্তী) ছাড়া আর কোনও নতুনত্ব নেই। সেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। একই ভাবে তথ্য গোপনের তোপ। এ ছবিও খানিক তেমন। এক ছবিতেই বছর তিরিশ পিছিয়ে গেল যেন বলিউড। গল্পের গরু গাছে ওঠার চেষ্টা করল। হাঁচড়-পাঁচড় করে মুখ থুবড়ে পড়েও গেল। কে যে কেন ভিলেন হল, আর অন্যে কেন বদলা নিল, বোঝা দায়। এ সবের মধ্যে নেপোয় আর দই মারতে পারবে কী করে?
ভিলেন যোগেশ দেশাই (যিশু সেনগুপ্ত) যদি বেঁচে যেতেন, তবেও একটু উপাদেয় হত এ খিচুড়ি
কিছু ক্লিশে বারবার জানান দিয়ে গিয়েছে। ভগবান আছেন, না ভূত আছে, সে প্রশ্ন পুরনো হবে না। তবে সেই যে হিন্দি ছবির সে কালে ভগবানের হাতের ত্রিশূল টেনে দুষ্টের দমন হত, সে আবারও দেখতে বাধ্য করা হল। বরং ভিলেন যোগেশ দেশাই (যিশু সেনগুপ্ত) যদি বেঁচে যেতেন, তবেও একটু উপাদেয় হত এ খিচুড়ি। এ এমনই খিচুড়ি যে ছবি শেষ হওয়ার পরেও অনেকে হয়তো বুঝতে পারবেন না, এ ছবিতে ভূত আছে না নেই। গোটা ছবিতে এমনই প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতিতে পূজা ভট্টের উপস্থিতি জোর করে বজায় রাখলেন যে বাবা মহেশ। যখন-তখন ভূতের মতো মৃতা স্ত্রী পূজা পথ দেখিয়ে গেলেন সঞ্জয় দত্তের চরিত্র রবি কিশোরকে। সে সব ভৌতিক হ্যালুসিনেশন না কি সত্যিই ভূত, সে প্রসঙ্গ আলাদা। তবে ভূতের সঙ্গে কথোপকথনের ধরনটা তো অন্তত একটু আধুনিক হতে পারত। সে সব সংলাপেও যেন সেই তিরিশ বছর আগের বাণিজ্যিক ছবির ছাপ।
প্রায় তিরিশ বছর আগে যাঁরা ‘সড়ক’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁরাও বোধহয় আবার এ সব দেখতে চাইতেন না
কিছুই বদল আসেনি, এমন অবশ্য নয়। তবে সেটা না এলেই পারত। এক কালে মহেশ ভট্টের ছবি পরিচিত ছিল গানের জন্য। ‘অর্থ’, ‘আশিকি’, ‘দিল হ্যায় কি মানতা নহি’, ‘ফির তেরি কহানি ইয়াদ আয়ি’-র মতো ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন জনপ্রিয় সুরের মানে কী। বছর চল্লিশের আগের সে সব সুর এখনও মাঝেমধ্যে কানে ভেসে আসে পুজো বা বড়দিনের হুল্লোড়ে। এ ছবিতে সুযোগও ছিল। মুন্না ওরফে ভিশাল (অর্জুনের চরিত্র) পেশায় গায়ক। দু’-এক বার গিটার নিয়ে তিনি গান শোনালেও, তা মনে দাগ কাটে না। ল্যাপটপ বন্ধ করার আগেই সে গান দর্শক ভুলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যা হোক, চল্লিশ বছর বলতে মনে হল, অনেক যুগ তো হয়েছে। এই ছবির কি আর কোনও দরকার ছিল?
প্রায় তিরিশ বছর আগে যাঁরা ‘সড়ক’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁরাও বোধহয় আবার এ সব দেখতে চাইতেন না। তাঁদের অভ্যাসও যে বদলেছে। আর যাঁরা দেখেননি বা ‘সড়ক’-এর নামও শোনেননি, আলিয়ার প্রজন্মের সেই তাঁদের কথা তো ছেড়েই দেওয়া গেল। জগাখিচুড়ি পাকিয়ে তাঁদের যেচে হাসালেন প্রবীণ পরিচালক।