ফিল্মের একটি দৃশ্য।
মেয়েছেলে আবার গোয়েন্দা!
মেয়েছেলে গাড়ি চালায়, পেছনে বসে থাকে তাঁর স্বামী।
মেয়েছেলে বুদ্ধির বলে, সাহসের জোরে লড়াই করে, মারামারি করে গুন্ডাদের সঙ্গে।
মেয়েছেলে বলে, সব স্বামী-স্ত্রীর সন্তান থাকতেই হবে এমনটাও তো নয়। ‘বেটি বাঁচাও’ স্লোগানে যে দেশকে মুড়ে রাখতে হয় সে দেশে এই কথা কি মানুষকে অন্য ভাবে ভাবাবে না?
কিন্তু কে এই ‘মেয়েছেলে’? সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন মাসি? অরিন্দম শীলের ‘মিতিন মাসি’? না কি কোয়েল মল্লিক?
ছবি দেখার পর মনে হয়, এই ‘মেয়েছেলে’ আসলে শিক্ষিত, মায়ায় ভরা শক্তিশালী এক জন ‘মিতিন মাসি’, যার নাম কোয়েল মল্লিক।
এমন ভাবেই নারীশক্তির উদযাপন করতে চেয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। যে শব্দবন্ধ আজকের সমাজেও সচল, যে শব্দবন্ধ মেয়েদের ক্ষেত্রে জোর করে প্রয়োগ করা হয়, সেই প্রথা, শব্দ আর জীবনকে ভাঙতে ভাঙতে গিয়েছেন মিতিন মাসি।
আরও পড়ুন: ফিল্ম রিভিউ ‘গুমনামী’: বাস্তবতা মিশে গিয়েছে চলচ্চিত্রের সত্যে
ছবির দৃশ্যায়নে মধ্যবিত্ত জীবন আছে। আছে বাঙালির ব্রেন চপ আর রয়্যালের বিরিয়ানির আমেজ। মিতিন মাসি এই খাবারের স্বাদ পেতে পেতেই যেন খুলতে থাকেন রহস্যের জাল। রহস্য জমাট বাঁধতে আর একে একে তার জট ছাড়াতে সময় নেননি পরিচালক। ঝরঝরে ঝটপট। সম্পাদনার কাজ খুব মন দিয়ে করেছেন সংলাপ ভৌমিক। তবে, দর্শককে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পুরনো দৃশ্যের একাধিক পুনরাবৃত্তি কি খুব প্রয়োজন ছিল?
আরও পড়ুন: ‘ভাবতাম, যদি কোনও দিন হিরো হই, তা হলে হৃতিকের মতো নাচতে হবে’
অনেক প্রথাই ভেঙেছেন অরিন্দম। গোয়েন্দা ছবিতে এমন সুমধুর গায়ন? রাশিদ খানের কণ্ঠের মেজাজ দৃশ্যকে গভীরতায় নিয়ে যায়।
নাহ্, আসলে এটা শুধুই গোয়েন্দা ছবি নয়। এ ছবি আশ্বিনের এক সকালে নারীর ক্ষমতায়নকে তুলে ধরছে।
কে এই নারী?
নতুন এক কোয়েল মল্লিক। এত পরিণত অভিনয়! জোরালো মন। দৃপ্ত ভঙ্গি। মেক আপহীন স্বচ্ছ চাহনি। তাঁর মনের মতো শরীর অনেক বেশি চর্চিত। তাঁর মুখ থেকে ঠিকরে পড়ে আত্মবিশ্বাসের তৃপ্তি! কোথাও তিনি গভীর, কোথাও চঞ্চল। যে হাতে সব্জি কাটেন সে হাতেই শত্রু নিধন করেন। এই পরিণত কোয়েল আরও বেশি করে আসুক বাংলা ছবিতে।
গোয়েন্দা ছবির চমক, ঝলক, রহস্য তাঁর মনে আর ফ্রেমে। অরিন্দম শীলের এই নারী গোয়েন্দাকে বার বার দেখতে চাইবে দর্শক। অন্তত সিনেমা হলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া তাই বলে। অরিন্দম শীলের অভিনেতার টিম-ও এ ছবিতে যথাযথ। জুন মাল্যকে সত্যি মনে হয় পার্সি পরিবারের বউ। আর এক জন বিশেষ ভাবে নজর কাড়েন, তিনি বিনয় পাঠক। বলিউডের জাত অভিনেতার এই প্রথম বাংলা ছবি। মন ভরে না। মনে হয় আরও বেশি করে তাঁকে এ ছবিতে যদি পাওয়া যেত! শুভ্রজিৎ দত্তকে পার্থ মেসোর চরিত্রে নতুন করে পাওয়া গেল। মিতিন মাসির সব কাজে ছায়া হয়ে থাকা এই পার্থ বা শুভ্রজিতের সহজ অভিনয় দর্শকদের ভাল লাগবে। ছবির শেষেও ছবির সুর ধরে রাখল রাশিদ খানের গান। এই ভাবনার জন্য সাধুবাদ বিক্রম ঘোষকে।
তৃতীয়ার রাত ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে। শহর উৎসবের আলোয় মাখা। শারদরাত্রির ছাতিম অন্ধকারে চোখে ভাসতে থাকে মিতিনমাসি বা কোয়েলের নানা অভিব্যক্তি। ছবিতে সে বিপদে পড়লে দর্শকরা বিষণ্ণ, আবার যখন শত্রুদের মারের প্রতিরোধে গর্জে ওঠে তখন দর্শকের উচ্ছ্বাস হাততালিতে, আনন্দে।
এই আনন্দ উদযাপনের। অশুভকে পেরিয়ে মঙ্গল শক্তির জয়।
দর্শকের এই আনন্দ জানিয়ে যায়, এ ছবি শুধু আর অরিন্দম শীল, টিম ‘মিতিন মাসি’ বা কোয়েল মল্লিকের নয়, এ ছবি দর্শকের।