‘মোহর’-এর জৌলুসে ‘শ্রীময়ী’-ও পঞ্চম!
কলেজে পড়ার সময় ইংরেজির স্যার শ্রীমন্ত চট্টোপাধ্যায়কে দারুণ লাগত। কিন্তু কোনও দিন জানাতে পারেনি রম্যাণি।
রম্যাণির এই বলতে না পারা তার একার নয়, বহুজনের যন্ত্রণা! শিক্ষক দেখতে দারণ হ্যান্ডসাম। কিংবা বোঝানোর কায়দা প্রচণ্ড আকর্ষণীয়। অথবা সামনে এসে দাঁড়ালেই ‘তুমিই শুধু তুমি’ অনুভূতিতে মন ছেয়ে যায়। ভাল লাগে বা ভালবাসি-টাই বলা হয়ে ওঠেনি অনেকের।
গলায় এসে আটকে গেছে না বলা কথা। শিক্ষককে প্রেম নিবেদন! তার থেকে ‘গোপন কথাটি থেকে যাক গোপনে’। এই অধরা মাধুরী-ই নাকি এ সপ্তাহে ‘মোহর’-এর ঝলকানি বাড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্য রসায়ন। যার জোরে রেটিং চার্টে মেগার নাম সবার ওপরে! দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে ‘কে আপন কে পর’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘শ্রীময়ী’।
পর পর গত দু’সপ্তাহ রেটিংয়ের মধ্যমণি ছিল ‘কৃষ্ণকলি’। শ্যামা থেকে গৌরাঙ্গী আম্রপালি হয়ে ফের শ্যামার প্রত্যাবর্তনের মতো মারকাটারি টুইস্টে দর্শক অন্ধ ভাবে জি বাংলার এই মেগার হাতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল।
এ সপ্তাহে ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’র হাজার পর্ব। রানিমার জীবনের প্রতিটি ধাপের সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ ভীষণ আন্তরিক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দিতিপ্রিয়া রায়। ফলে, রেটিংয়ে তিনিই প্রথম হবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলল।
এমনকি ‘মোহর’-এর জৌলুসে ‘শ্রীময়ী’-ও পঞ্চম!
আরও পড়ুন- মুভি রিভিউ ‘দিল বেচারা’: সুশান্তের হঠাৎ ফুরনো প্রেম আর জীবনের এপিটাফ
সোনামণির এই যুক্তিই কি ‘মোহর’-এর প্রথম হওয়ার একমাত্র কারণ! আর কিচ্ছু স্পেশালিটি নেই, যার জোরে সুপারহিট মেগা? কী সেই রহস্য? জানতে পরিচালক স্নেহাশিস জানার কাছে আরও একবার দরবার।
এবার যেন কিছুটা হলেও বোঝা গেল আসল কিস্সা। মোহর-শঙ্খের প্রেম, মান-অভিমান, জড়িয়ে থেকেও দূরে থাকা ইত্যাদিই টেনে রেখেছে দর্শকদের। পরিচালকের আরও বিশদে বর্ণনা, লকডাউনের আগের গল্প লকডাউনের পরে নেই। সেই বদল দর্শক বুঝেছে। একই সঙ্গে মোহর-শঙ্খর না বলতে পারা প্রেম ভাল লাগছে সবার।
এই জায়গায় দাঁড়িয়ে তর্কের খাতিরে বলা যেতেই পারে, এই প্রেমের গল্প নয় নয় করে আরও খান তি্নেক ধারাবাহিকে রোজ দেখানো হচ্ছে। ‘মোহর’ কোথায় আলাদা? এবার স্নেহাশিস খোলসা করলেন, শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেম ক্লিক করে গেছে। যা একদমই জানা প্রেমের সঙ্গে মেলে না। ফলে, দর্শক দেখছেন। ছক ভাঙা যা কিছু তাই-ই তো মানুষকে আকর্ষণ করে!
পরিচালকের এই কথার রেশ চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেও। শ্রীময়ী-রোহিতের প্রেম ম্লান মোহর-শঙ্খের কাছে। ট্রিটমেন্ট কী ছিল? জানতে চাইতেই লীনার যুক্তি, শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেম হয় না, এমন নয়। কিন্তু প্রকাশ পায় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ফলে, পরিণতিও পায় না। দর্শকের 'হিয়া' হয়ত 'নস্টাল' এই ধারাবাহিক দেখে। তাই সবাইকে টপকে ‘মোহর’ টপার।
ইন্ডাস্ট্রি জানে, মানুষের মন হাতের তালুর মতো চেনেন চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। সেই ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে তাঁর ‘মোহর’ রেটিংয়ে প্রথম হয়ে বুঝিয়ে দিল, গোপন কথা গোপন থাকলে সুদে আসলে অধরা মাধুরী বোধ হয় এভাবেই বেড়ে চলে প্রতি মুহূর্তে।