প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু তার পরেও বলিউডে দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পরেই পৌঁছতে পেরেছিলেন প্রত্যাশিত জায়গায়। বাংলার গৌরাঙ্গ থেকে সারা দেশের ‘ডিস্কো ডান্সার’ হয়ে ওঠার প্রতি পদে হোঁচট খেতে হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে।
এক সময়ে বলিউডের বড় অংশের মনে হয়েছিল, ‘মৃগয়া’-র নায়ক কোনও হিন্দি ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকতেই পারেন না। কিন্তু সেই প্রতিকূলতা পেরিয়ে আরবসাগরের তীরে তিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন।
সমসাময়িক নায়ক জিতেন্দ্রর মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দিয়েছিলেন মিঠুন। অভিনয় এবং নাচে দক্ষ, এই রসায়ন কাজে লাগিয়ে সুপারস্টার হয়েছিলেন জিতেন্দ্র। সেই পরিচয়েরও দ্রুত ভাগীদার হয়েছিলেন মিঠুন। ফলে দুই নায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বহুচর্চিত।
১৯৮৬ সালে তিনটি ছবিতে একই ফ্রেমে ধরা দেন মিঠুন-জিতেন্দ্র। ‘অ্যায়সা প্যায়ার কঁহা’, ‘জাল’, ‘স্বর্গ সে সুন্দর’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন তাঁরা। তখন মিঠুন বলিউডে সুপারস্টার। জিতেন্দ্রর সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয় করলেও একটি মন্তব্য ভুলতে পারেননি তিনি।
বলিউডে শুরুর দিনগুলিতে মিঠুন প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতেন। সে সময়েই এক বার প্রযোজকের কার্যালয়ে কাজ চেয়ে দ্বারস্থ হন তিনি। জমা দেওয়ার জন্য সঙ্গে ছিল পোর্টফোলিয়ো। ঘটনাচক্রে শ্যুটিং উপলক্ষে সেই অফিসে হাজির ছিলেন জিতেন্দ্রও।
শোনা যায়, সে সময় জিতেন্দ্র বলেছিলেন, মিঠুন যদি কোনওদিন নায়ক হতে পারেন, তবে তিনি অভিনয় ছেড়ে দেবেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত মিঠুন সেই তির্যক মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু পরে সুপারস্টার হয়ে অপমানের যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন।
নাচের সুবাদে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিলেন জিতেন্দ্র। কিন্তু পরে তাঁর সেই জায়গা নিয়ে নেন মিঠুন। ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ডান্সার’ মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি দর্শকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। দৌড়ে তাঁর কাছে জিতেন্দ্র কিছুটা পিছিয়ে পড়েলও ফিরে আসেন একগুচ্ছ সুপারহিট ছবি দিয়ে।
‘জাস্টিস চৌধুরি’, ‘তোফা’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘মাওয়ালি’-সহ একাধিক সুপারহিট ছবির দৌলতে বক্স অফিসে নিজের হারানো জায়গা ফিরে পান জিতেন্দ্র। সে সময় দু’জনের কেতাদুরস্ত সাজও ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
এক দিকে মিঠুনের হেয়ারস্টাইল এবং ছুঁচালো মুখের জুতো। অন্য দিকে, জিতেন্দ্র্রর সরু গোঁফ, মাফলার এবং সাদা জুতো হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের প্রথম পছন্দ। ছবির সংখ্যাতেও মিঠুন টেক্কা দিয়েছিলেন জিতেন্দ্রকে। এক সময়ে ফি বছর জিতেন্দ্রর ১০টি ছবি মুক্তি পেত। অন্য দিকে মিঠুন ১ বছরে অভিনয় করতেন ১৫টি ছবিতে।
জিতেন্দ্রর ৫ দশকের কেরিয়ারে মুক্তি পেয়েছিল ২২৪টি ছবি। সেখানেও তাঁর থেকে এগিয়ে মিঠুন। তিনি ৪ দশকেরও কম সময়ে নায়কজীবনে কমপক্ষে ৩১৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
বলিউডে সহ-নায়িকার নাম জড়িয়েছে জিতেন্দ্রর সঙ্গে। মুমতাজ, রেখা, হেমা মালিনী, শ্রীদেবী, জয়াপ্রদার মতো নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে গুঞ্জন। পরে শ্রীদেবীর সঙ্গে মিঠুনের সম্পর্কের গুঞ্জন পৌঁছেছিল বিয়ের রটনা অবধিও। পাশাপাশি, রঞ্জিতাও তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন বলে শোনা যায়।
পুরস্কারের ক্ষেত্রেও মিঠুন টেক্কা দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী জিতেন্দ্রকে। জিতেন্দ্র একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তীর তিন বার জাতীয় পুরস্কার জয়ী হয়ে বাজিমাত করেছেন। প্রথম ছবি ‘মৃগয়া’-র পরে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান ‘তাহাদের কথা’ এবং ‘স্বামী বিবেকানন্দ’-র জন্য।