ইন্ডাস্ট্রিতে মিঠুন চক্রবর্তীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন কিন্তু পাননি, এ রকম মানুষ পাওয়া দুষ্কর। মিঠুন মানেই দরাজ মন, সুব্যবহার। আর্থিক দিক দিয়ে পাশে দাঁড়ানোই হোক অথবা নতুন প্রতিভাকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া… সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর সঙ্গে পাঙ্গা নিলে যে কী হতে পারে তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলেন সলমন খান ও তাঁর বাবা সেলিম খান এবং জ্যাকি শ্রফ।
সালটা ১৯৮৮। সে সময় জ্যাকি শ্রফ ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত। ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের তলায় জমি খুঁজছেন তিনি। অল্প ফ্যান ফলোয়িংও তৈরি করেছেন। কিন্তু জায়গা পাকা করতে তাঁর দরকার ছিল একটি মজবুত চিত্রনাট্যের ছবি। ঠিক সেই সময়েই তাঁর কাছে ‘ফলক’ বলে একটি ছবির অফার আসে।
ছবিটির পরিচালনায় ছিলেন শশীলাল কে নায়ার। জ্যাকি ছাড়াও ছবিতে ছিল একগুচ্ছ স্টারকাস্ট। ছিলেন রাখী গুলজারের মত দক্ষ অভিনেত্রী। এ ছাড়াও ছিলেন অনুপম খের, সাধনা সিংহ, অনুপম খেরের মতো নামজাদা অভিনেতা।
ছবির চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব বর্তেছিল সেলিম খানের কাঁধে। সেলিম খান সম্পর্কে সলমন খানের বাবা। সেই ছবিতে সলমনও কাজ করছিলেন সহকারী পরিচালকের ভূমিকায়।
শুটিং শেষ হল। জ্যাকির কাজেও সবাই খুব খুশি। ঠিক হয় ১ এপ্রিল মুক্তি পাবে ছবি। আর ঠিক সেই সময়েই একটা বড় ধাক্কা জ্যাকিকে সাময়িকভাবে নাড়িয়ে দেয়।
খবর আসে ওই একই দিনে আরও একটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে যার নাম ‘পেয়ার কা মন্দির’। আর ওই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী স্বয়ং।
প্রযোজকদের মুখ ভার, অভিনেতাদের টেনশন। হাজার হোক মিঠুন বলে কথা! সে সময় মিঠুন মধ্যগগনে। একের পর এক তাঁর হিটে বক্সঅফিসে টইটম্বুর।
সেই ছবিতে দক্ষিণী অভিনেত্রী মাধবী ছাড়াও ছিলেন রাজ কিরণ, কাদের খান, অরুণা ইরানির মতো অভিনেতারাও। পরিচালনায় ছিলেন কে বাপ্পাইয়া।
ইন্ডাস্ট্রির অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জ্যাকির ছবির পরিচালক-প্রযোজককে সাবধান করেছিলেন মিঠুনের ছবির সঙ্গে একই দিনে ছবি রিলিজ না করার জন্য। এতে ফল যে ভাল হবে না সে বিষয়েও বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু না, প্রযোজক-পরিচালক, অভিনেতা, সেলিম-সলমন কেউই কথা কানে তোলেননি। উল্টে বলেছিলেন, মিঠুনকে তাঁরা ভয় পান না। নামজাদা অভিনেতার জন্য নবাগত-র ছবি মুক্তি পিছিয়ে যাবে...বলিউডের এই চিরাচরিত রেওয়াজ আর কতদিন চলবে? প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা।
একই দিনে ছবি মুক্তি পেল। কিন্তু এর পর যা হল, তার জন্য বোধহয় তৈরি ছিলেন না জ্যাকি-রাখী সেলিমরা।
বক্স অফিসে ‘পেয়ার কা মন্দির’ চুড়ান্ত সফল হয়। অন্যদিকে ‘ফলক’ সটান মুখ থুবড়ে পড়ে। ‘ফলক’ যে কবে মুক্তি পেল আবার কবেই বা প্রেক্ষাগৃহ থেকে বিদায় নিল, সেই হিসেবই রাখলেন না দর্শকেরা। আর জ্যাকি শ্রফ?
মিঠুনের স্টারডমের কাছে তাঁর অভিনয় কোথায় যে মিলিয়ে গেল তা কেউই জানতে পারল না। জ্যাকির কেরিয়ারেও এর প্রভাব পড়েছিল। ঠিক যেই মুহূর্তে তিনি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা শুরু করেছিলেন এই একটি বক্স অফিস ডিজাস্টার তাঁকে আরও কয়েক ধাপ নামিয়ে নিয়ে এল। আর মিঠুন চক্রবর্তী?
তিনি অবশ্য এ নিয়ে কিছুই বলেননি। তবে নিন্দুকেরা মুচকি হেসেছিল আড়ালে। কেন তিনি ‘মিঠুন চক্রবর্তী’ সে দিন ভালই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন টিম ‘ফলক’।