মীরও ভুগেছিলেন

সাল ২০১২। সারক্ষণ হাসিঠাট্টা করছেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে মীর তখন অবসাদের শিকার। ঠিক করলেন ডাক্তার রিমা মুখোপাধ্যায়ের চেম্বারে যাবেন। এই প্রথম নিজের ‘ফেজ’টা নিয়ে কথা বললেন মীর। শো করতে গিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিলেও নিজে কিছুই উপভোগ করতে পারতেন না তখন। বলছেন, ‘‘অনেকটা ঠিক মেকানিকাল সেক্সের মতোই ব্যাপার। এমন দিনও তো আসে যখন নিজের পার্টনারের চাহিদা মেটাতে অন্যজন হয়তো খুব মেকানিকাল ভাবে কাজটা করে। অবসাদ নিয়ে শো করতে গেলে আমিও সেটাই করতাম।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

সাল ২০১২। সারক্ষণ হাসিঠাট্টা করছেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে মীর তখন অবসাদের শিকার। ঠিক করলেন ডাক্তার রিমা মুখোপাধ্যায়ের চেম্বারে যাবেন। এই প্রথম নিজের ‘ফেজ’টা নিয়ে কথা বললেন মীর। শো করতে গিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিলেও নিজে কিছুই উপভোগ করতে পারতেন না তখন। বলছেন, ‘‘অনেকটা ঠিক মেকানিকাল সেক্সের মতোই ব্যাপার। এমন দিনও তো আসে যখন নিজের পার্টনারের চাহিদা মেটাতে অন্যজন হয়তো খুব মেকানিকাল ভাবে কাজটা করে। অবসাদ নিয়ে শো করতে গেলে আমিও সেটাই করতাম।’’

Advertisement

সব থেকে অসুবিধা হল যে, এ রকম ভাবে কাজ করার সময় বাইরের লোকেরা পিঠ চাপড়ে বলে যেতেন, ‘তোমার তো এই শোটা করতে কোনও প্রস্তুতি লাগবে না’। ‘‘ভেতরে ভেতরে আমার সমস্যা হচ্ছে কিন্তু বাইরের মানুষ এটা বুঝতেই পারছে না। হেসে যাচ্ছি, লোককে হাসাচ্ছি, কিন্তু ভেতরটা একদম অন্য সুরে বাঁধা,’’ বলছেন মীর।

মাঝে মাঝে দারুণ রাগ হত। ‘‘আমার জোকস শুনে লোকে হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে আর এ দিকে আমার ভেতরটা কামড়ে-কামড়ে খাচ্ছে। চাবুক মেরে মেরে দর্শককে হাসাচ্ছি। তাঁরা শোয়ের পরে আমার কত প্রশংসা করছেন। তখন ওঁদের থেকেও নিজের উপর খুব রাগ হত। মনে হত, আমি যেন সার্কাসের ক্লাউনের মতো একটা ইমেজে আটকা পড়ে গেছি। বেরোনোর কোনও পথ নেই। কিছু দিন আগে আমার কাকু মারা গিয়েছেন। বহুবছর পর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গিয়ে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা। তখন উনি বলে বসলেন, ‘অউর কুছ নয়া শুনাও’! ভাবুন তো আমার অবস্থা,’’ বলেন মীর।

Advertisement

সেই সঙ্গে আরও একটা সমস্যা ছিল। মাথায় সারাক্ষণ ঘুরত কাজ নিয়ে চিন্তা। ‘‘হয়তো সিনেমা দেখতে গিয়েছি। কিন্তু মনটা পড়ে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে উত্তর দিলাম কি না বা মেলের উত্তর দেওয়া হল কি না! ব্যাপারটা শুধুমাত্র কাজ পাগল হওয়াতেই আটকে থাকেনি। একটা সময় এল যখন মনে হত, হলে নয়, ডিভিডিতে গিয়ে ছবি দেখি। তা হলে যদি কোনও ফোন আসে আমি ডিভিডি পজ করে দেখতে পারব। কিন্তু হলে তো সেটা করা যাবে না। অগত্যা হলে যাওয়াতেই অনিহা তৈরি হতে লাগল। ঘুম কমে গিয়েছিল। আরও কিছু সমস্যা... এ রকম বেশ কিছুদিন চলার পর আমি ডাক্তার দেখাতে যাই,’’ বলেন তিনি।

সে বছর আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল। মীর বললেন, ‘‘হোলির দিন ভাঙ খেতে গিয়ে আমি সারাক্ষণ সব্বাইকে বলে গিয়েছিলাম যদি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার গলাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে! অবচেতন মনে কি তা হলে আমার এই নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছিল গলা নিয়ে? পরে ডা. রিমা মুখোপাধ্যায়কেও ঘটনাটা বলি। আমাকে অসুধ খেতে হয়নি তবে একবছর কাউন্সেলিং করাই। এখন আমি সহজে রেগে যাই না। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হল, আমি এই মুহূর্তের জন্য বাঁচি। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ দেখে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। কালকের জন্য নিজের ‘আজ’টা আমি আর নষ্ট করি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement