সঞ্চালক-অভিনেতা মীর।
পুজোর আমেজ সবার সঙ্গে ভাগ করতে চাওয়াটাই যে সঞ্চালক ও অভিনেতা মীরের কাছে কার্যত দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠবে, তা কি তিনি জানতেন? ‘‘একটি চ্যানেলের হয়ে পুজোর বিজ্ঞাপন শুট করছিলাম। তারই সাজ পাজামা-পাঞ্জাবি, জহর কোট। পুজোর গন্ধ আগাম বয়ে এনেছিল এই শুটিং। সেটাই ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম সবার সঙ্গে।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছবি পোস্টের পাশাপাশি ক্যাপশনে মজা করে লিখেছিলেন নিজের কথাই, ‘‘ধীরে ধীরে পুজো মুডে ঢুকছে দেখো কে...!’’
কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রোলড তিনি! সোশ্যাল মিডিয়ায় ধেয়ে আসতে শুরু করে বাছা বাছা গালাগালি, অশালীন মন্তব্য। একজন মুসলিম কেন হিন্দুদের পরব মানবেন? এটাই ছিল আক্রমণের মূল সুর। একই সঙ্গে বলা হয়, ‘ইদের সময় আপনার তো এত আদিখ্যেতা দেখি না!’ তাঁর উদ্দেশে অশানীল মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে রেহাই দেওয়া হয়নি মীরের মা-বাবাকেও।
আরও পড়ুন: প্রয়াত এস পি বালসুব্রহ্মণ্যম, সঙ্গীতজগতে শোকের ছায়া
কেন এই ট্রোলিং? এটাই একুশ শতকের ট্রেন্ড? নাকি তিনি সেলেব বলে? উত্তরে আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মীরের যুক্তি, ‘‘আবহ এর জন্য দায়ী। দায়ী এখনকার মানসিকতা। দায়ী অসহিষ্ণুতা। যা ছারিয়ে গিয়েছে ছোট থেকে বড়,সবার মধ্যে। যার জেরে সব কিছুতেই খুঁতখুঁতামি। সবেতেই বিরক্তি। এবং মনপসন্দ কোনও কিছু না হলেই ‘বুলিং’, ‘ট্রোলিং’। আমিও শিষ্টতা মেনে এর জবাব দিয়েছি। যদিও সবাই বলেন, এ সব উপেক্ষা করাই ভাল।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছবি পোস্ট করে ট্রোলড হলেন মীর।
পাল্টা জবাব কী ছিল তাঁর? ‘‘মাথায় ফেজ টুপি পড়ে, হাতে অমৃতির থালা নিয়ে মিষ্টি মুখে প্রতিবাদ জানিয়েছি, যে কয় মোরে ...র পোলা/ তারে বুকেই জড়িয়ে ধরি/ ... যে মায়ের জাত / তারে সমান সজদা করি / ধর্ম বিভেদ ভরাবে কি পেট / শুধায় আপনজনে/ যাহা মসজিদ, তাহাই মন্দির/ ভক্তি রবে মনে/ আজানের ডাকে নামাবলী পরি/ আবেগ মানবরূপী/ যে শিরে বরিষে গঙ্গার জল/ সেই মাথাই ঢাকে টুপি।’’
আরও পড়ুন: তুলনা হত কিশোর-রাজেশের সঙ্গে, কেন ভেঙে গেল সলমন-বালাসুব্রহ্মণ্যমের জুটি
মীরের কথায়, এই ধরনের ট্রোলিংয়ের শিকার তিনি বহুবার হয়েছেন। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা মানসিকতাকে এর জন্য কাঠগড়ায় তুলতে রাজি নন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, মানুষের মনের গভীরে আজও বিভেদ লুকিয়ে হিন্দু-মুসলিমের। এ যেন মোছার নয়। তাই, যতই সবাই বলুন সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ ভারত, আসল রূপ সামনে আসে একজন হিন্দু ইদ আর মুসলিম শারদীয়ায় মাতলে।