এ আর রহমানের কাছে তাঁর কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে প্রিয়। সুরেলা কণ্ঠে ঈশ্বরের ছোঁয়া লেগেছে, এমনটা মনে করতেন বাপি লাহিড়ি। সদ্য ৮০ বছরে পা দেওয়া এই গায়ককে অনেকেই চেনেন না।
১৯৪০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কোচির ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান পরিবারে জন্ম যেশুদাসের। সঙ্গীতচর্চা তাঁর জন্ম থেকেই শুরু বলা যেতে পারে। কারণ তাঁর বাবা অগাস্তিন জোসেফ ছিলেন পরিচিত মালয়ালম ধ্রুপদি সুরকার।
বাবার কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি তাঁর। ১৯৬২ সালে মালয়ালম ছবিতে তাঁর প্রথম প্লেব্যাক। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যেশুদাসকে। একটার পর একটা গানের অফার পেয়ে গিয়েছেন এবং নিপুণ ভাবে প্রতিটা গান গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেছেন।
৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কেরিয়ারে কোনও ব্রেক নেননি তিনি। এই ছয় দশকে ৮০ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করে ফেলেছেন। এখন তাঁর বয়স ৮০।
তবে শুধু গান রেকর্ডের সংখ্যা দিয়ে তাঁর প্রতিভার বিচার করা যাবে না। তিনি বিভিন্ন ভাষাতেও সাবলীল ভাবে গেয়েছেন। যেমন মালয়ালাম, তামিল, তেলুগু, হিন্দি, কন্নড়, বাংলা, ওড়িয়া এমনকি বাদ যায়নি আরবি, লাতিন, রাশিয়ান এবং ইংরাজি ভাষাও।
১৯৭৬ সালে বলি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। ফিল্ম ‘ছোটি সি বাত’-এ ‘জানেমন জানেমন’ গানটি সুপার হিট হয়েছিল। তারপর ‘চিতচোর’ ফিল্মের ‘গোরি তেরা গাঁও বড়া প্যায়ারা’ গানটা রাতারাতি তাঁকে সেনসেশন বানিয়ে দেয়।
প্রায় সমস্ত নামকরা সুরকারের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। প্লেব্যাকের পাশাপাশি ভক্তিমূলক গানেও তাঁর জনপ্রিয়তা প্রচুর। তাঁর গান ‘হরিভরাসনম’ আজও প্রতি দিন শবরীমালা মন্দিরের গেট বন্ধ হওয়ার আগে বাজানো হয়।
এমন কোনও পুরস্কার বোধহয় নেই, যা তাঁর প্রাপ্তি হয়নি। আট বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। পাঁচ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, ৪৩ বার রাজ্যস্তরে সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গার হয়েছেন। কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং পশ্চিমবঙ্গ এই সম্মান তাঁকে দিয়েছে।
১৯৭৫ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৭ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয় তাঁকে। ২০০৬ সালে এক বার একদিনে দক্ষিণী ফিল্মের ১৬টা গান রেকর্ড করেছিলেন তিনি। এই রেকর্ডও রয়েছে তাঁর।
১৯৭০ সালে প্রভাকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের তিন সন্তান। দ্বিতীয় পুত্র বিজয়ও বাবার মতো গানকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনে কর্নাটকের কল্লুরের মুকাম্বিকা মন্দিরে যান যেশুদাস। সেখানে গানের মাধ্যমে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন। ২০০০ সালে তাঁর ৬০ তম জন্মদিন থেকে ওই মন্দিরে সঙ্গীত উৎসব শুরু হয়। প্রতি বছর ওই দিন থেকে শুরু করে টানা নয় দিন ধরে চলে এই উৎসব।
এহেন প্রবাদপ্রতিম গায়কেরও পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। একবার তাঁর একটা মন্তব্য ঘিরে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে।
২০১৪ সালে ২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীর একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, “মেয়েদের জিনস পরা উচিত নয়, এতে অন্যদেরও সমস্যা হয়। শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরা উচিত এবং ছেলেদের মতো পোশাক পরা উচিত নয়।” এর পরই বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়।