পরিণীতি চোপড়া স্বীকার করেন না তাঁদের মধ্যে কোনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা আছে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার দ্বারস্থও তিনি হননি সাহায্যের আশায়। নিজের চেষ্টায় অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছেন মীরা চোপড়া। বলিউডে বিশেষ জনপ্রিয়তা না পেলেও দক্ষিণী ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার এই তুতো বোন।
মীরার অভিনেত্রী জীবনের বয়স পেরিয়েছে দেড় দশক। তাঁর প্রথম ছবি তামিল ভাষায় ‘আনবে আরুইয়িরে’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০৫-এ। এরপর তামিল ও তেলুগু ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন মীরা।
এক সাক্ষাৎকারে পরে তিনি জানান, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে একই রকমের বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করতে করতে তাঁর একঘেয়ে লাগছিল। অর্থোপার্জন হয়তো করছিলেন। কিন্তু নিজের কাজে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না।
অভিনয়জীবন শুরুর আগে নিউইয়র্কে চাকরি করতেন মীরা। তার আগে মিশিগান থেকে সম্পূর্ণ করেছিলেন মাস্টার্স। দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করার একঘেয়েমি কাটাতে কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নেবেন বলে ঠিক করেন মীরা।
তিনি ভেবেছিলেন কাজ ছেড়ে ফিরে যাবেন আমেরিকায়, চাকরিজীবনে। কিন্তু এই দোটানায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় অভিনয় করার ইচ্ছে-ই। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর মোহ উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি।
তবে এ বার ঠিক করলেন হিন্দি ছবিতে অভিনয় করবেন। কিন্তু একইরকম বাণিজ্যিক ছবির বদলে মীরার ইচ্ছে ছিল অন্যরকমের ছবিতে কাজ করার।
দক্ষিণী ছবিতে মীরা ছিলেন সফল অভিনেত্রী। তাঁর প্রথম ছবি ‘আনবে আরুইয়িরে’ ছিল ব্লকবাস্টার। তাঁর অন্যান্য বেশ কিছু ছবিও প্রশংসিত হয়। কিন্তু তার পরেও মীরা নিজেকে যে জায়গায় দেখতে চাইছিলেন, সেখানে পৌঁছতে পারেননি বলে তাঁর মনে হয়েছিল।
জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির মধ্যগগনে থাকতে থাকতেই দক্ষিণী ছবি থেকে সরে এসেছিলেন মীরা। কিন্তু তাঁর প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি।
তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘গ্যাং অব গোস্টস’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৪ সালে। সতীশ কৌশিকের পরিচালনায় এই ছবি ছিল ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর রিমেক।
দু’ বছর পরে আবার হিন্দি ছবিতে মীরা। এ বার তিনি অভিনয় করেন ‘১৯২০ লন্ডন’ ছবিতে। টিনু সুরেশ দেশাইয়ের পরিচালনায় ছবিতে মীরার নায়ক ছিলেন শরমন যোশি। বক্স অফিসে এই ছবি ছিল মাঝারি হিট।
মীরার তৃতীয় ছবি ‘সেকশন ৩৭৫’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৯ সালে। ছবিতে অক্ষয় খন্না, রিচা চড্ডার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন তিনি। এটিও সাফল্যের নিরিখে মাঝারি মানের।
অর্জুন রামপালের বিপরীতে ‘নাস্তিক’ ছবিতে অভিনয় করছেন মীরা। বেশ কিছুটা অংশের শুটিংয়ের পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছবির কাজ। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ছবিটির। কিন্তু এখনও এর মুক্তি আটকে আছে বিশ বাঁও জলে।
প্রিয়ঙ্কা এবং পরিণীতি, দু’জনের তুলনাতেই বলিউডে জনপ্রিয়তায় এখনও পিছনের সারিতে মীরা। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই তাঁর। জানিয়েছেন, অভিনয় করতে ভালবাসেন ঠিকই। কিন্তু তাই বলে, অভিনয় তাঁর সবকিছু নয়।
প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি। নিজেই জানিয়েছেন মীরা। তাঁর কথায়, পরিবারের সমর্থন তাঁকে সব সময় সাহস আর উৎসাহ দিয়েছে। হাতে কাজ না থাকায় অপছন্দের চিত্রনাট্যকেও ‘না’ বলতে পারেননি। কিন্তু একইসঙ্গে ভুলে যাননি নিজের অন্য শখও।
প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আত্মীয়তা কি কাজ পেতে সাহায্য করেছে? উত্তরে মীরা জানিয়েছেন, তাঁকে সাহায্য করতে প্রিয়ঙ্কা সবসময়েই আগ্রহী। কিন্তু তিনি কোনওদিন তারকা-দিদির কাছে সাহায্য চাননি। কারণ তাঁর মনে হয়েছে নিজের যুদ্ধটা নিজেকেই লড়তে হবে।
স্বজনপোষণ প্রসঙ্গে মীরার বক্তব্য, নিজের লোকের সাহায্যে কিছুদূর অবধি যাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু সম্পূর্ণ সাফল্য অধরা-ই থেকে যায়।
প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তুলনাতেও আপত্তি মীরার। তিনি মনে করেন, প্রিয়ঙ্কার উত্তরণ স্বপ্নের মতো। কঠোর পরিশ্রমী বলেই প্রিয়ঙ্কা এই উচ্চতায় পৌঁছতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি পারবেন না।
তবে মীরার দাবি, বলিউডে সবার জন্যই কাজ আছে। কারও কারও সময় হয়তো খারাপ যায়। তখন কাজের স্রোতে ভাটা আসে। তবে খারাপ সময় কেটেও যায়। সে বিষয়েও মীরা আত্মবিশ্বাসী।
মীরার প্রসঙ্গ পরিণীতি এড়িয়ে যান ঠিকই। বলেন, তাঁরা নিকট আত্মীয় নন। তবে মীরা কিন্তু পরিণীতির গুণগ্রাহী। অভিনেত্রী হিসেবে পরিণীতি অনেক দূর যাবেন। বিশ্বাস করেন মীরা। তবে একইসঙ্গে তিনিও জানিয়েছেন, পরিণীতির সঙ্গে কোনওদিনই তাঁর সেরকম ঘনিষ্ঠতা নেই।
ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে সব সময় সক্রিয় থাকতে হবে বলে মনে করেন মীরা। হাতে ছবি না থাকলেও যোগাযোগ রাখতে হবে পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে। অডিশন দিয়ে যেতে হবে। এই সক্রিয়তা থেমে গেলেই বন্ধ হয়ে যাবে ছবিতে সুযোগ পাওয়া। বক্তব্য প্রিয়ঙ্কার বোন মীরার।