প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবারটি, ফ্রান্সের গ্যারাবিট ভায়াডাক্ট রেলব্রিজের মতো বিখ্যাত স্থাপত্য তাঁর হাতেই তৈরি। তিনি বিশ্ব বিখ্যাত এক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ইতিহাসের পাতায় রয়েছে তাঁর জ্বলজ্বলে উপস্থিতি।
অথচ অনেকেই জানেন না এই স্থাপত্যগুলো যিনি বানিয়েছিলেন, তাঁর একটা বলিউড কানেকশনও রয়েছে! এক বলিউড নায়িকার প্রপিতামহ তিনি। অর্থাৎ ওই বলিউড তারকার বাবার ঠাকুরদা তিনি।
ফরাসি ওই স্থপতির নাম মরিস কেঁকলা। জিন কেঁকলা এবং অ্যানি মারির সন্তান মরিসের জন্ম ১৮৫৬ সালে। ফ্রান্সের বিখ্যাত শিল্পপতি ছিলেন জিন-অ্যানি। তাঁরই বংশধর হলেন কল্কি কেঁকলা। বলিউডে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত।
তাঁর পরিবার ব্যবসায় প্রচুর নাম করলেও মরিসের কিন্তু ব্যবসায় ঝোঁক ছিল না। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৮৭৭ সাল থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি ফরাসি রেলওয়ে কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। তখন তিনি যে সংস্থার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, তার মালিক ছিলেন গুস্তাভ আইফেল।
গুস্তাভ আইফেলের কোম্পানির সঙ্গেই কাজ করার সুবাদে বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার বানান মরিস। মালিক গুস্তাভ আইফেলের নামানুসারেই ওই টাওয়ারের নাম হয় আইফেল। গুস্তাভের মৃত্যুর পর তাঁর সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরও হন মরিস।
স্ট্যাটু অব লিবারটিও তাঁর বানানো। ২৮ অক্টোবর ১৮৮৬ সালে আমেরিকাকে এই মূর্তি উপহার দিয়েছিল ফ্রান্স। মূর্তির নকশা বানিয়েছিলেন ফ্রেডরিক অগাস্তে বারথোলদি। আর ধাতব কাঠামো বানিয়ে তার রূপ দিয়েছিলেন কল্কির প্রপিতামহ মরিস। ১৯৪৬ সালে ৮৯ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯৮৪ সালে পুদুচেরীতে জন্ম কল্কির। তাঁর বাবা-মা দু’জনেই ফরাসি। ছোট থেকেই কল্কি চারটে ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। ইংরাজি, হিন্দি, ফরাসি এবং তামিল। প্রথমে উটির হেব্রন স্কুলে তিনি পড়াশোনা করতেন। মরিস কেঁকলার নাতনি হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁকে টানত না। বরং ছোট থেকে অভিনয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল তাঁর।
পড়াশোনা শেষ করে ১৮ বছর বয়সে থিয়েটার এবং ড্রামা নিয়ে পড়তে লন্ডনে চলে যান। সেখানে দু’বছর একটি থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। তারপর ফিরে আসেন ভারতে। মুম্বইয়ের ‘দ্য কোম্পানি থিয়েটার’-এর সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন।
২০০৯ সালে অনুরাগ কশ্যপের ফিল্ম ‘দেব ডি’ দিয়েই কল্কির বলিউডে হাতেখড়ি। সেই ফিল্ম করার সময় অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে তাঁর পরিচয় এবং তার পর বিয়ে। তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক অবশ্য বেশি দিন টেকেনি।
কল্কি যদি অভিনয়ে না আসতেন, তা হলে আরও একটি প্রফেশন নিজের জন্য বেছে নিতে পারতেন। না অবশ্যই সেটা ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, সেটা ক্রিমিনাল সাইকোলজি। ছোট থেকে ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়েও পড়াশোনার খুব ইচ্ছা ছিল কল্কির।