বাঁ দিকে বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়। ডান দিকে স্বস্তিক পালের তোলা ছবিরই একটি অংশ। —নিজস্ব চিত্র।
২২ বছরের ইতিহাসে প্রথম, বুসান আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট বেছে নিয়েছিল দুই বাঙালি পরিচালকের ছবির চিত্রনাট্য। যার মধ্যে একটি ছিল ‘মরিচঝাঁপি’। অন্য ছবিটি সুমন ঘোষের ‘দ্য ওয়েস্ট কালেক্টর’। এ বার ‘মরিচঝাঁপি’-র মুকুটে আরও এক নতুন পালক। ‘‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সিনে ফন্ডেশনের লাতলিয়ের বিশ্বের পনেরোটি ছবির মধ্যে ‘মরিচঝাঁপি’-কে বেছে নিয়েছে!’’ মুম্বই থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়।
‘মরিচঝাঁপি’-ই প্রথম ভারতীয় ছবি যা একসঙ্গে বুসান আর কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ফিল্ম মার্কেটে এই সম্মান পেল। ছবি তৈরির আগেই আন্তর্জাতিক ফিল্ম বাজারে বাংলা ভাষার ছবির এই সম্মান নিঃসন্দেহে বাংলা ছবিকে বিশ্বের বাজারে এক অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বৌদ্ধায়ন। “এর পর নিশ্চয়ই অন্য বাঙালি পরিচালকেরা কান বা বুসানে ছবি করার জন্য নিজেদের প্রজেক্ট জমা দেবেন।” এর আগে ২০১৬-তে পরিচালক আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের ‘মেমরিজ অব মাই মাদার’ ছবিটি কান ফেস্টিভ্যাল থেকেই সহযোগী প্রযোজক পেয়েছিল। এ বার ‘মরিচঝাঁপি’।
একই ভাষায় কথা বললেও ও পার থেকে আসা ছিন্নমূল বেশ কিছু মানুষ এ পারে ঠাঁই পাননি। শুধু জমি থেকে উপড়ে ফেলাই নয়। তাঁরা আর যাতে সেই জমিতে ফিরতে না পারেন তার জন্য পুলিশের বুলেট অপেক্ষা করছিল তাঁদের জন্য! সেই ঘটনারই পরিচয় ‘মরিচঝাপি’। যার ঝাঁপি খুললেই হত্যালীলা, অসহায় মানুষের হাহাকার। বেশ কিছু কাল পরে আবার ফিরছে সেই উদ্বাস্তুদের উপড়ে ফেলার সেলুলয়েড-কাহিনি, বৌদ্ধায়নের হাত ধরে। ১৯৭৯-এর ঘটনা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে চারপাশের অস্থিরতায়। আজ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে টানাপড়েনের লড়াইয়ে দেশ আবার পুড়ছে। মাটি থেকে উপড়ে ফেলার ভয় মানুষের চেহারায়। “মরিচঝাঁপি’-র গণহত্যা নিয়ে আজ মানুষ কতটা সচেতন?” প্রশ্ন তুলছেন বৌদ্ধায়ন। মানুষ তাকে ভুললেও ইতিহাস তো তাকে ভোলেনি। আজও ভারতের মাটিতে সেই যন্ত্রণার হাহাকার।
বেশ কিছু দিন ধরেই ‘মরিচঝাঁপি’ নিয়ে কাজ করছেন বৌদ্ধায়ন। চলছে গবেষণা। প্রাথমিক ভাবে ‘মরিচঝাঁপি’-র প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে তাঁর নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘লিটিল ল্যাম্ব ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং বিদেশি একটি প্রযোজনা সংস্থা। ‘‘মরিচঝাপি’ এত বড় মাপের ছবি যে একা আমার সংস্থার মাধ্যমে তার নির্মাণ সম্ভব ছিল না। সেই কারণেই আমরা ইয়োরোপিয়ান কো-প্রোডিউসার খুঁজছিলাম। কান ফেস্টিভ্যালের এই সম্মানে কাজটা করা সহজ হল,” বললেন বৌদ্ধায়ন।